রিপোর্টে যা বলা হয়েছে

* বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার ও ভরণপোষণে সমান অধিকার

* মুসলিম উত্তরাধিকার আইন বাতিলের প্রস্তাব

* সকল ধর্মের জন্য অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন

* যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান

বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার ও ভরণপোষণে সমান অধিকারের জন্য অধ্যাদেশ জারিরসহ নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের বিভিন্ন সুপারিশ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে করণীয় সুপারিশে সংবিধানে পরিবর্তন এনে নারী-পুরুষ সমতার নিশ্চয়তাসহ অভিন্ন পারিবারিক আইন, পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইন, অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইন, ধর্ষণ আইন, নাগরিকত্ব আইন, সাক্ষী সুরক্ষা আইনে পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা পবিত্র কুরআনের বিধানের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক এবং ইসলাম ও মুসলিম পরিচয়ের অস্তিত্বের ওপর একটি সুপরিকল্পিত আঘাত। এই প্রস্তাবনার মাধ্যমে দেশের ধর্মীয় ভারসাম্য, পারিবারিক কাঠামো ও সামাজিক স্থিতিশীলতাকে ধ্বংস করার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। তারা অবিলম্বে অগ্রহণযোগ্য ও বিতর্কিত নারীবিষয়ক সুপারিশমালা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, এই বিতর্কিত প্রশ্নবিদ্ধ কমিশন বাংলাদেশের নারীদের সর্বসাধারণের আদৌ প্রতিনিধিত্ব করে না।

শনিবার অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে নারী অধিকার রক্ষায় বিশদ সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক বলেন, ‘জুলাইয়ে যারা প্রাণ দিয়েছে তাদের স্মরণার্থে এমন কিছু করতে চেয়েছি যা মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে, সমাজের জন্য কল্যাণকর হবে। প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর অনুষ্ঠানে শিরীন হকের নেতৃত্বে কমিশনের সদস্য ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অব গভর্নেন্স এন্ড ডেভেলপমেন্টের সিনিয়র ফেলো মাহীন সুলতান,

এডভোকেট কামরুন নাহার, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার, নারী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হালিদা হানুম আক্তার, বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের সাবেক সিনিয়র সামাজিক উন্নয়ন উপদেষ্টা ফেরদৌসী সুলতানা এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নিশিতা জামান নিহা উপস্থিত ছিলেন।

‘সর্বক্ষেত্রে সর্বস্তরে নারীর প্রতি বৈষম্য বিলুপ্তি এবং নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের লক্ষ্যে পদক্ষেপ চিহ্নিতকরণ’ শিরোনামে প্রতিবেদনে নারী বিষয়ক কমিশন প্রতিষ্ঠা, নারীর প্রতি সহিংসতা ও হয়রানি প্রতিরোধ ও প্রতিকার করা, বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ককে ধর্ষণ হিসেবে ফৌজদারি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা, ধর্ষণের শিকার হওয়া অন্য লিঙ্গের মানুষের বিচার ও আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিতে আইনে ধর্ষণ ধারায় সংস্কার আনা, যেকোনো উপস্থাপনায় অহেতুক নারীর প্রসঙ্গ টেনে নারীবিদ্বেষী বয়ান, বক্তব্য ও ছবি পরিবেশন থেকে বিরত থাকা, নারীর প্রতি সম্মানজনক, মর্যাদাপূর্ণ ও যথাযথ সংবেদনশীল আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির লক্ষ্যে সামাজিক সচেতনতা বিষয়ক কর্মসূচি নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

অভিন্ন পারিবারিক আইনের মাধ্যমে সব ধর্মের নারীদের জন্য বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার ও ভরণপোষণে সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্য অধ্যাদেশ জারি করার সুপারিশ করেছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। অন্তত আইনটি তৈরিতে এখনই উদ্যোগ নিতে সব সম্প্রদায়ের জন্য ঐচ্ছিকভাবে তা প্রয়োগ করতে বলা হয়েছে। সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে সংসদীয় আসন বাড়িয়ে ৬০০ করে সেই আসন থেকে ৩০০ আসন নারীর জন্য সংরক্ষিত রেখে সরাসরি নির্বাচনের সুপারিশ করা হয়েছে।

সাংবিধানিক শীর্ষক প্যারায় বলা হয়েছে, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধানে নারীর উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য দিক ছিল সকল নাগরিকের সমান অধিকার, লিঙ্গ ভিত্তিক বৈষম্যরোধ এবং রাষ্ট্র ও জনজীবনে সকলক্ষেত্রে নারীও পুরুষের সমান অধিকারের স্বীকৃতি, যদিও ব্যক্তি জীবনে নারী ও পুরুষের সমতা নিশ্চিত করা যায়নি।

কমিশনের রিপোর্টোর ৩০ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, নারীর উন্নয়নের পথে রাজনীতি ও ধর্মীয় প্রতিক্রিয়া বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে পারিবারিক আইন ও উত্তরাধিকার প্রসঙ্গে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রায়শই রক্ষণশীল ও ধর্মীয় গোষ্ঠির প্রতিরোধের মুখে পড়ে।

১২৬ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, নারীর সম্পত্তির সমান অধিকার নিশ্চিত করতে মুসলিম ও হিন্দু উত্তরাধিকার আইন সংশোধন করা জরুরি। ১৩২ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, সকল ধর্ম ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠির জন্য একটি অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন ও কার্যকর করা; ধর্ম, সম্প্রদায় ও সামাজিক গোষ্ঠী নির্বিশেষে সকলের জন্য একই নীতি ও শর্ত নির্ধারণ করবে যা নারীদের সম্পত্তির উত্তরাধিকার ও অধিকারে সুরক্ষা প্রদান করবে। নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও সমাজে সম্মান বৃদ্ধি করবে।

১৩৬ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে বাংলাদেশের যৌনকর্মীদের আইনগত স্বীকৃতি নেই। তবে যৌন পেশা সম্পর্কে কোন সুস্পষ্ট আইনও নেই। শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি না থাকায় তারা আইনী সহায়তা ও নিরাপত্তা পান না। এ ক্ষেত্রে যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের সুপারিশ করা হয়। একইসাথে যৌনকর্মীদের শ্রম অধিকার নিরাপদ আবাসস্থল, জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা, শিশুদের অবিভাবকত্ব ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

২২৬ নম্বর পৃষ্ঠায় মুসলিম পারিবারিক আইন সংশোধন অধ্যাদেশ ১৯৬১ সংশোধন করে নারীদের সমান অধিকার নিশ্চিত করা। হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন ২০১২ ও খ্রিষ্টান বিবাহ আইন ১৮৭২ সংশোধন করে নারী পুরুষ সমতা নিশ্চিত করা। মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মীয় উত্তরাধীকার আইন সংশোধন করে নারীদের সম্মত্তিতে ৫০-৫০ ভাগ নিশ্চিত করা।

সুপারিশমালার ৯ম পৃষ্ঠার আরেক জায়গায়, নারী-পুরুষের পারিবারিক ভূমিকাকে অভিন্নভাবে দেখার প্রস্তাব করা হয়েছে। দেশের ইসলামিক স্কলাররা মনে করেন, ইসলাম নারী-পুরুষের মর্যাদা সমান মনে করলেও, তাদের ভূমিকায় প্রাকৃতিক পার্থক্যকে স্বীকার করে। তাই ‘নারী-পুরুষের পারিবারিক ভূমিকাকে অভিন্নভাবে দেখার’ প্রস্তাবটি ইসলামী সমাজব্যবস্থাকে বিকৃত করার অপপ্রয়াস ছাড়া আর কিছুই নয়।

এদিকে নারী সংস্কার কমিশনের ধর্ম বিদ্বেষী প্রস্তাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দেশের শীর্ষ স্থানীয় ওলামায়ে কেরামসহ বিভিন্ন সংগঠন।

উলামা মাশায়েখ পরিষদ : দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরাম নির্দিষ্ট মতাদর্শিক আন্দোলনের নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করে গভীর ক্ষোভ জানিয়ে এক যৌথভাবে বিবৃতি প্রদান করে বলেন, উক্ত প্রতিবেদন নির্দিষ্ট মতাদর্শের রুচির বহিঃপ্রকাশ। এর সাথে আমাদের দেশের স্বকীয়তা, মৌলিক বিশ্বাস ও বাঙালি নারীর কোন সম্পর্ক নাই।

শীর্ষ উলামায়ে কেরাম বলেন, নারী সংস্কার কমিশন প্রধান উপদেষ্টার নিকট যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তার প্রস্তাবনা, ভাষা, যুক্তি গোটা নেশনকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। ইহা বিজাতীয় ধর্মবিমুখ, পরিবার বিচ্ছিন্ন ও ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদের বিকৃত রুচির বিকাশের বহিঃপ্রকাশ। ইহা তথাকথিত ফ্যামিনিস্টদের পক্ষ থেকে এদেশের নারীর হাজার বছরের আকিদা-বিশ্বাস, নৈতিকতা, তাহজিব তামাদ্দুন ও সভ্যতা-সংস্কৃতির সাথে সম্পূর্ণরূপে সাংঘর্ষিক। এই বিতর্কিত প্রশ্নবিদ্ধ কমিশন বাংলাদেশের নারীদের সর্বসাধারণের আদৌ প্রতিনিধিত্ব করে না।

ওলামায়ে কেরাম বলেন, প্রতিবেদনে এক জায়গায় উপ-শিরোনাম করা হয়েছে, “পুরুষের ক্ষমতা ভেঙে গড়ো সমতা”। এই ধরণের ভাষা ও প্রতিপাদ্যই নির্ধারিত ইসলামবিদ্বেষী গোষ্ঠীর চিন্তা ও সমাজ বিচ্ছিন্নতা প্রমাণ করে। বাঙালি নারী কখনোই পুরুষকে প্রতিপক্ষ ভাবেনি বরং সহযোগী ও সহকর্মী ভেবে সামাজিক সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। পুরুষের সাথে নারীর সম্পর্ক ক্ষমতার না বরং মায়া-মমতা ও ভালোবাসার। নারী জাতি আমাদের মা, সহধর্মিণী, বোন কন্যা ইত্যাদি সুন্দর পরিভাষায় সসম্মানিত। মায়া-মমতা ও ভালোবাসার সম্পর্কের কারণেই বাঙালি পুরুষ নারীর মর্যাদা রক্ষায় সাধ্যমত প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকে। সাবেক ফ্যাসিবাদী সরকার এদেশের সাধারণ জনগণের উপরে মাত্রাতিরিক্ত নির্যাতন জুলুম চালিয়েছে বিশেষ করে আলেম-ওলামাদেরকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালিয়েছে, বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকার আলেমদের এবং ইসলামী মূল্যবোধের যথাযথ মর্যাদা দিবে বলে আমরা আশা করি।

তাঁরা আরো বলেন, ছাত্র গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত পূর্বের সরকার বাহাত্তরের সংবিধানে ফেরত যাওয়ার আড়ালে দেশকে ইসলাম মুক্তকরণ, শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ইসলাম মুক্ত করে নাস্তিক্যবাদী নারী নীতি জোর করে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। আবারো যদি এখনো ঘৃণা কর্মকা- করা হয় তাহলে তাদেরকেও ফ্যাসিস্টদের ভাগ্যবরণ করতে হবে।

শীর্ষ উলামায়ে কেরাম প্রধান উপদেষ্টার কাছে জোর দাবি জানিয়ে বলেন, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনকে এখনই বাতিল করতে হবে। তাদের বিতর্কিত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করতে হবে। বাংলাদেশের নারী সমাজের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে দেশের হাজার বছরের আকিদা-বিশ্বাস, নৈতিকতা ও তাহজিব তামাদ্দুম সভ্যতা-সংস্কৃতির অনুকূল সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করতে হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য সংস্কারের নামে সরাসরি কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী প্রস্তাবনা পেশ করার মতো স্পর্ধা যারা দেখিয়েছে এবং তাদের দোসরদেরকে এখনই স্তব্ধ করত হবে।

শীর্ষ ইসলামিক স্কলারগণ আরো বলেন, অনতিবিলম্বে এ প্রশ্নবিদ্ধ প্রস্তাবনা বাতিল করে এ দেশের আপামর জনতাকে শান্ত করুন। অন্যথায় উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতির জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই দায় নিতে হবে।

বিবৃতি দিয়েছেন, অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন,ইসলামী কানুন বাস্তবায়ন পরিষদের আমীর মাওলানা আবু তাহের জিহাদী, মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ আশরাফী, সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদের মহাসচিব ড.মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, হক্কানী পীর মাশায়েখ পরিষদের মহাসচিব মাওঃ শাহ আরিফ বিল্লাহ সিদ্দীকি, খেলাফাতে রব্বানীর আমির মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদী, মাও: আহমদ আলী কাসেমী, পীর মাওলানা শরীফ হোসাইন, মুসলিম জনতা পরিষদের আমির মাওলানা আজিজুর রহমান আজিজ, মুফতি মাওঃ নাসির উদ্দীন কাসেমী, শাহ এমদাদুল্লাহ পীর সাহেব, হক্কানী ত্বরীকত মিশনের আমির শাইখ নুরুল ইসলাম ফয়েজী, হক্কানী ত্বরীকত মিশনের জেনারেল সেক্রেটারি আল্লামা মুস্তাক আহমাদ, ইসলামী ঐক্য মঞ্চ সভপতি মাওলানা ইদ্রিস হোসাইন, সেক্রেটারি আবদুস সাত্তার, খাদেমুল ইসলাম জামাত আমির মাওলানা মুহিবুল্লাহ, জমিয়াতে উলামা দেওবন্দ পরিষদের সভাপতি হযরত মাওলানা মুহাদ্দেস আবদুল্লাহ কাসেমী ও সেক্রেটারি হযরত মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক কাসেমী, মীরের সরাইর পীর সাহেব মাওঃ আঃ মোমেন নাছেরী, টেকের হাটের পীর সাহেব মাওঃ কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী, জাতীয় খতীব পরিষদের আমীর মুফতি মাওলানা মাউদুর রহমান, হুফ্ফাজ পরিষদ সভাপিত হাফেজ লেয়াকত হোসাইন ও সেক্রেটারি মুফতি মাহবুবুর রহমান, ইসলামী অন লাইন এ্যাক্টিভিটস সভাপতি শায়খুল হাদীস মাওলানা আবদুস সামাদ ও মহাসচিব মুফতি আবু আনাস, কওমী হাফেজ পরিষদ সভাপতি মুফতি নূরুল আমিন গোপালগঞ্জী হুজুর, সম্মিলিত ইসলামিক জোটের আমির মাওলানা আবদুল বাকি, সেক্রেটারি জেনারেল মাওঃ মনিরুজ্জামান, জাতীয় ইমাম সোসাইটির মহাসচিব মুফতি জোবায়ের আহমদ কাসেমী, ইসলামী সমাজ সভাপতি মাওলানা রফিকুর রহমান আল কাশেমী ও সেক্রেটারি জেনারেল মুফতি জাকারিয়া, ইসলামী জনতা সভাপতি মুফতি আবদুল কুদ্দুস, মহাসচিব হাফেজ আবুল কাসেম, ইমাম কল্যাণ সমিতি সভাপতি পীর সাহেব মাওলানা কুতুবুল ইসলাম মাজহারী, সেক্রেটারি জেনারেল মুফতি আবু সালেহ, আহকামে শরিয়াহর আহ্বায়ক মুফতি মাহবুবুর রহমান, সদস্য সচিব আব্দুস সবুর মাতুব্বর, অধ্যক্ষ মাওলানা লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, অধ্যক্ষ আমিরুজ্জামান, মুহাদ্দিস আবু বকর সিদ্দিক, ইমাম মুয়াজ্জিন পরিষদ সেক্রেটারী মুফতি মাহমুদুল হাসান, মাদ্রাসা কল্যাণ পরিষদের সভাপতি- মাওঃ মহিউদ্দীন মাসুম, সেক্রেটারী মাওলানা এখলাছ উদ্দীন, তালিমুল কুরআন সোসাইটির আহ্বায়ক মুফতি আবদুল হালিম, মহাসচিব মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, হাফেজ মুফতি মাওঃ আব্দুর রহমান, মাওলানা মুহাম্মদ ইখলাস উদ্দিন, ইসলাহুল উম্মাহ সভাপতি মাওঃ আবু হানিফ নেছারী, অধ্যক্ষ মাওলানা মশিউর রহমান, হাফেজ ফারুক হোসাইন, প্রফেসর মাওঃ মুফতি ইসহাক মাদানী, মাওলানা এহতেশামুল হক, নাস্তিক-মুরতাদ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাওঃ আব্দুল কুদ্দুস আল কাসেমী, মহাসচিব শাইখ আব্দুল কাউয়ূম, জাতীয় ইমাম উলামা পরিষদের সভাপতি শায়খুল হাদীস মাওলানা ফজলুর রহমান ও মহাসচিব মাওলানা এবি.এম শফিকুল্লাহ, মাদরাসা মসজিদ ও খানকা ঐক্যপরিষদ সভাপতি মাওলানা রফিকুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা গোলাম কিবরিয়া, আল কুরআন ফাউন্ডেশন সভাপতি মুফতি জামাল উদ্দীন ও সেক্রেটারি মুফতি ইসহাক প্রমুখ।

ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মহিলা বিভাগ: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মহিলা বিভাগের প্রধান মিসেস নুরুস সাবিহা,সহ প্রধান কোহিনূর বেগম ও সমন্বয়কারী হাফেজা বুশরা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, নারী সংস্কার কমিশন গতকাল মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নিকট যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তার প্রস্তাবনা, ভাষা ও যুক্তি আমাদের হতাশ করেছে। পশ্চিমের ধর্মবিমুখ, পরিবার বিচ্ছিন্ন ও ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবাদের বিকৃত বিকাশের পটভূমিতে বিকশিত নারীবাদী চিন্তার পাটাতনে ও ভাষায় নারী বিষয়ক সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে; যা এদেশের নারীর হাজার বছরের বোধ-বিশ্বাস, চরিত্র, মেজাজ ও সংস্কৃতির সাথে সম্পূর্ণরূপে সাংঘর্ষিক।

মিসেস নুরুস সাবিহা বলেন, এই কমিশনের সদস্য নিয়োগের সময়ই প্রথম ও প্রধান ভুলটি হয়েছে। কমিশনের প্রধান করা হয়েছে নারীপক্ষের এক নেত্রীকে। নারীপক্ষ বাংলাদেশে একটি মতাদর্শিক আন্দোলনের সাথে জড়িত যার সাথে এদেশের নারী সমাজের বৃহৎ অংশ একমত না। এবং কমিশনে আরো যাদেরকে সদস্য করা হয়েছে, তারাও একই মতাদর্শের। ফলে এই কমিশন বাংলাদেশের নারীদের সাধারণ অংশের প্রতিনিধিত্ব করে না। প্রতিবেদনেও সেই একদেশদর্শি চিন্তা ও ভাবনার প্রতিফলন দেখা গেছে।

ইসলামী আন্দোলনের মহিলা নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রতিবেদন তৈরিতে একাডেমিক স্বীকৃত কোন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় নাই। বৈষম্য, উন্নয়ন, নারীর অধিকার ইত্যাদি জরুরি ও প্রধান পরিভাষার কোন সংজ্ঞা দেয়া হয় নাই। অথচ সমাজবিজ্ঞানে এই ধরণের প্রতিবেদনে এর সংজ্ঞা নির্ধারণ করা অপরিহার্য। প্রতিবেদনে কোন তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার না করেই নানা সিদ্ধান্তমূলক মন্তব্য করে তার ভিত্তিতে নানা প্রস্তাব করা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে মনে হয়েছে, এটা কোন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন না বরং নির্দিষ্ট মতাদর্শিক আন্দোলনের প্রচারপত্র তৈরি করা হয়েছে। নতুন বাংলাদেশে যখন আমূল সংস্কার ভাবনায় গোটা জাতি উন্মুখ হয়ে আছে তখন এই ধরনের নি¤œমানের প্রপাগা-া ধররের প্রস্তাব সংস্কার কার্যক্রমকেই বিতর্কিত করবে।

নারী নেত্রী মিসেস নুরুস সাবিহা বলেন, প্রতিবেদনে এক জায়গায় উপ-শিরোনাম করা হয়েছে, “পুরুষের ক্ষমতা ভেঙে গড়ো সমতা”। এই ধরনের ভাষা ও প্রতিপাদ্যই তাদের চিন্তা ও সমাজ বিচ্ছিন্নতা প্রমাণ করে। বাঙালি নারী কখনোই পুরুষকে প্রতিপক্ষ না বরং সহযোগী ও সহকর্মী ভেবেছে। পুরুষের সাথে নারীর সম্পর্ক ক্ষমতার না বরং মায়া-মমতা ও ভালোবাসার। মায়া-মমতা ও ভালোবাসার সম্পর্কের কারণেই বাঙালি পুরুষ নারীর মর্যাদা রক্ষায় নিজের রক্ত উৎসর্গ করেছে আর বাঙালি নারী পুরুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য ঘাম ঝরিয়ে সংসার গড়েছে। কমিশনের সদস্যবৃন্দ নারী-পুরুষের সম্পর্ক নির্ণয়ের মূলভিত্তি নির্ধারণে ভুল করেছে ফলে তাদের প্রতিবেদন পুরোটাই ভুল পথে পরিচালিত হয়েছে।

ইসলামী আন্দোলনের নারী নেতৃবৃন্দ বলেন, আমাদের সমাজ হাজার বছর ধরে ধর্মকে প্রধান করেই জীবন পরিচালনা করেছে। ধর্ম তার বহুমাত্রিক ব্যবস্থাপনা দিয়ে নারী-পুরুষকে পরস্পর নির্ভর করেছে। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন পারিবারকি আইনে ধর্ম বাদ দেয়ার কথা বলেছে। এই প্রস্তাব তাদের অজ্ঞতা ও ধর্মবিদ্বেষী মতোভাবের বহিঃপ্রকাশ।

ইসলামী আন্দোলনের মহিলা বিভাগের প্রধান নেত্রী মিসেস নুরুস সাবিহা দাবি জানিয়ে বলেন, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনকে বাতিল করতে হবে, তাদের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করতে হবে এবং বাংলাদেশের নারী সমাজের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে দেশের হাজার বছরের বোধ-বিশ্বাস, চরিত্র, মেজাজ ও সংস্কৃতির অনুকূল সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করতে হবে।

ইসলামী মূল্যবোধে আঘাত করা' উত্তরাধিকার আইন প্রস্তাবকারী নারী অধিকার সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা প্রত্যাহার করে কমিশন বাতিল না করা হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারী দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। হেফাজতে ইসলামের কার্যনির্বাহী পরিষদের এক সভা শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ দাবি করেন তারা।