২০২৪ সালের ১৬ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান ছাত্র আন্দোলনে রক্তাক্ত মোড় নেয়। ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলায় রংপুরে আবু সাঈদসহ সারাদেশে অন্তত ছয়জন নিহত হন। এই ঘটনায় দেশজুড়ে ছাত্র-জনতার ক্ষোভ বিস্ফোরিত হয় এবং আন্দোলন পরিণত হয় গণ-অভ্যুত্থানের রূপে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৬ জুলাইয়ের দেশব্যাপী বিক্ষোভে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের সংগঠক আবু সাঈদ।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্যমতে, পুলিশের টিয়ার শেল ও লাঠিপেটনের সময় দুই পুলিশ সদস্য ১৫ মিটার দূর থেকে শটগানে তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়।
রাজধানীর ঢাকা কলেজ ও সায়েন্সল্যাব এলাকায় ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন দোকান কর্মচারী মো. শাহজাহান (২৪) ও নীলফামারীর সাবুজ আলী (২৫)। চট্টগ্রামেও তিনজন নিহত হন, যাদের মধ্যে দুইজন ছিলেন শিক্ষার্থী— ওয়াসিম আকরাম (২৪) ও ফয়সাল আহমেদ (২৪), এবং আরেকজন ছিলেন ফার্নিচার কর্মচারী মো. ফারুক (৩২)।
দিনভর বিক্ষোভে ঢাকার যাত্রাবাড়ী, শান্তিনগর, প্রগতি সরণি, বাড্ডা, উত্তরা, সায়েন্সল্যাব, মতিঝিল, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। মহাখালীতে রেললাইন অবরোধ করায় রাজধানীর সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন যোগাযোগ ছয় ঘণ্টা বন্ধ থাকে। এছাড়া, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহসহ গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ১৬ জুলাই রাতেই ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়া ও গাজীপুরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) দেশের সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে এবং শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়। বন্ধ হয় ১৮ জুলাইয়ের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও।
সরকার কোটা বহালের হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল দায়ের করে। একইদিন আওয়ামী লীগ তাদের নেতাকর্মীদের দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নিতে বলে এবং আন্দোলনের মোকাবেলায় রাজনৈতিক প্রস্তুতির ঘোষণা দেয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জনগণ ও সব রাজনৈতিক দলকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। ছাত্রদল আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে রাজপথে থাকার ঘোষণা দেয়।
আন্দোলনে সহিংসতায় ৬ জন নিহতের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, টিআইবি, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনের বাংলাদেশ চ্যাপ্টার এবং সুজনসহ পাঁচটি মানবাধিকার সংগঠন। একইসঙ্গে ১১৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক এবং ১৯৯০-এর ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আসিফ মাহমুদ ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে কফিন মিছিল ও গায়েবানা জানাজার কর্মসূচি ঘোষণা করেন।