কিশোরগঞ্জ থেকে আহসানুল হক জুয়েল: কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ময়দানে ঈদুল আজহার জামাত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (৭ জুন) সকাল ৯টায় জামাত শুরু হয়। জামাতে ইমামতি করেন কিশোরগঞ্জ বড়বাজার মসজিদের খতিব মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ।

IMG-20250607-WA0253

ঈদগাহ ময়দানে জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিশিষ্টজনরা ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন।

IMG-20250607-WA0251

এ দিকে ঈদুল আযহার নামাজ কে ঘিরে নেওয়া হয় চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। র‍্যাব, পুলিশের পাশাপাশি মুসল্লিদের নিরাপত্তায় ছিল দুই প্লাটুন বিজিবি সদস্যরা।নিরাপত্তা ব্যবস্থায় মুসল্লিরা অনেক সন্তুষ্ট বলে এই প্রতিবেদককে জানান।

এর আগে সকাল থেকে মুসল্লিরা আসতে থাকেন ঈদগাহের দিকে। প্রতি বছর ঈদের জামাতে এখানে লাখো লাখো মানুষের ঢল নামে। বড় জামাতে নামাজ আদায় করলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায় তাই এখানে প্রতি বছর ঈদের জামাতে অংশ নেয় মুসল্লি। কিন্তু এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে মুসল্লী সংখ্যা ছিল মাত্র কয়েক হাজার। কোরবানির ঈদ হওয়ার কারণে জেলা শহরের বেশিরভাগ মুসল্লীরা প্রত্যেকে নিজ নিজ মহল্লার মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন।

এবারের ঈদে শোলাকিয়া ময়দানে স্থানীয় মুসল্লিদের তুলনায় জেলা শহরের বাহিরের মুসল্লির উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি।

হাজার হাজার মুসুল্লীর অংশগ্রহণে সুষ্ঠুভাবে জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে জানিয়ে শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা এরশাদ মিয়া জানান, কোরবানীর আনুষ্ঠানিকতা সংক্রান্ত ব্যস্ততার কারণে ইদুল ফিতরেরন তুলনায় এই ঈদে মুসুল্লীদের অংশগ্রহণ কম থাকে।

ঢাকা রেঞ্জের পুলিশ সুপার (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ফিন্যান্স) মোহা. কাজেম উদ্দিন জানান, ঈদুল আজহায় জামাতকে ঘিরে নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবির পাশাপাশি সাদা পোশাকে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নিরাপত্তার স্বার্থে মাঠে আর্চওয়ে, ওয়াচ টাওয়ার, ড্রোন ক্যামেরা, ভিডিও ক্যামেরা, মাইনোকোলার, সিসি ক্যামেরাসহ সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল।

কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মিজাবে রহমত বলেন, আলহামদুলিল্লাহ ঈদুল আজহার নামাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে সব ব্যবস্থায় নেওয়া হয়।

শোলাকিয়া মাঠের ঐতিহ্য ও রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরুর আগে পরপর তিনবার বন্দুকের ফাঁকা গুলি ছুড়ে শুরু হয় ঈদুল আজহার জামাত। জামাত শুরুর ১০ মিনিট পূর্বে ৩ টি, ৫ মিনিট পূর্বে ২ টি ও ১ মিনিটি পূর্বে ১ টি বন্দুকের গুলি ছুড়ে মুসুল্লীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ঈদের জামাত ও খুতবা শেষে বাংলাদেশসহ মুসলিম উম্মাহর শান্তি সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করে হাজার হাজার মুসল্লিদের অংশগ্রহণে দোয়া ও মোনাজাত করেন।

ঈদ জামাতে দূর-দূরান্তের মসুল্লিদের যাতায়াতের জন্য ‘শোলাকিয়া স্পেশাল’ নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছিল রেল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে একটি ট্রেন ছেড়ে আসে ময়মনসিংহ থেকে এবং অপরটি ছেড়ে আসে ভৈরব থেকে। জামাত শেষে দুপুর ১২টায় ট্রেন দু'টি মুসুল্লি নিয়ে ময়মনসিংহ ও ভৈরব পুনরায় ফিরে যায়।

উল্লেখ্য যে ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য, এক নারী এবং এক জঙ্গিসহ চারজন নিহত হন। এ জঙ্গি হামলায় পুলিশসহ ১৬ মুসল্লি আহত হন। কিন্তু তারপরও ভাটা পড়েনি ঐতিহাসিক এ ঈদগাহ ময়দানের ঈদের জামাতে মুসল্লিদের সমাগমে। কিন্তু করোনার কারণে দুই বছর ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি।

ইতিহাস থেকে জানা যায় শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ ঈদের জামাতের মোনাজাতে ভবিষ্যতে মাঠে মুসল্লিদের প্রাচুর্যতা প্রকাশে ‘সোয়া লাখ’ কথাটি ব্যবহার করেন। অন্য একটি মতে, সেই দিনের সেই জামাতে ১ লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ সোয়া লাখ লোক জমায়েত হন। ফলে ‘সোয়া লাখের অপভ্রংশ হয়ে ‘শোলাকিয়া’ নামটি চালু হয়ে যায়।

পরে ১৯৫০ সালে স্থানীয় দেওয়ান মান্নান দাদ খাঁ (মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর) ঈদগাহের জন্য ৪ দশমিক ৩৫ একর জমি শোলাকিয়া ঈদগাহে ওয়াকফ করেন। এ মাঠে ২৬৫টি কাতার আছে। প্রতিটি কাতারে ৫০০ মুসল্লি নামাজের জন্য দাঁড়াতে পারেন