৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে

পতিত স্বৈরাচার সরকার ৫৬০টি মডেল মসজিদ তৈরি করেছে। এক বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এসব মসজিদের ব্যাপারে তাদের সমর্থকরা বলতে চেষ্টা করেন যে এটি সৌদি সরকারের অর্থায়নে বাস্তবায়িত একটি প্রকল্প। সৌদি আরব এখানে একটা টাকাও দেয়নি। এটি জনগণের করের টাকায় এক বিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্প। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান।

প্রেস সচিব বলেন, ‘এই মসজিদের অনেক অনিয়মের কথা উঠে এসেছে। দেখা গেছে, খুবই প্রভাবশালী একজন মন্ত্রী তার এলাকায় শহরে না করে আট কিলোমিটার দূরে যেখানে উনি একটা রিসোর্ট করছেন, সেখানে তিনি মসজিদ করেছেন সরকারি টাকায়। একটা মসজিদের ব্যয় ১৭ কোটি টাকা। এখানে এত দুর্নীতি হয়েছে যে অনেকেই বলছেন, সেটা না হলে অর্ধেক খরচে করা যেতো। সে বিষয়ে গতকাল উপদেষ্টা পরিষদে আলাপ হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় এটি তদন্ত করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে।

শফিকুল আলম বলেন, ‘এই কমিটি মসজিদ নির্মাণে কী পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে, সেগুলো তারা তদন্ত করে দেখবে।

চীন যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রেস সচিব জানান, প্রধান উপদেষ্টা আগামী ২৬ মার্চ চার দিনের জন্য চীন সফরে যাচ্ছেন। সেখানে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আছে, সেখানে অনেক আন্তর্জাতিক নেতারা আসবেন। অধ্যাপক ইউনূস ওই সম্মেলনে কথা বলবেন। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, এই সম্মেলনের বাইরেও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক হবে।

প্রেস সচিব আরও বলেন, ছয়টি সংস্কার কমিশন অনেকগুলো সুপারিশ দিয়েছে, যা প্রায় ২ হাজারের মতো। সেখানে এমন কিছু বিষয় রয়েছে, সেগুলোর জন্য আসলে রাজনৈতিক সংলাপের প্রয়োজন নেই। নীতিগতভাবে নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয় সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে। সেগুলো প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, এগুলোর সঙ্গে অর্থেরও সংশ্লিষ্টতা তেমন নেই। সেই সিদ্ধান্তগুলো যাতে খুব দ্রুত নেওয়া যায়, সেজন্য আজকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন।

তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে কাজ চলছে। এক্ষেত্রে একটি নথি তৈরি করা হচ্ছে, কোন কোন কাজগুলো করা হবে এবং এই সিদ্ধান্তগুলো প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তারা তাদের মতো করে এই কাজগুলো বাস্তবায়ন করবে।

সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের শূন্যপদে দ্রুত জনবল নিয়োগের নির্দেশনা দিয়েছেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে আগামী উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে কোন কোন প্রতিষ্ঠানে দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে সে সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের নির্দেশনা দেন।

এছাড়া আগামী ২০২৬ সালেই বাংলাদেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে যুক্ত হচ্ছে বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত হয়েছে, ২০২৬ সালেই বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণ করা হবে। এজন্য যে চ্যালেঞ্জগুলো আসবে তা মোকাবিলা করার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এতে বাংলাদেশের মর্যাদাও আরও বৃদ্ধি পাবে।

স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের দিন ঠিক করা আছে ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গঠিত অন্তর্র্বর্তী সরকার এর আগে বলেছিল, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পরিসংখ্যান নিয়ে কারসাজি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করবে কি না তা নিয়ে অন্তর্র্বর্তী সরকার ‘ভাবছে’।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ একটি স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে ইউরোপের রপ্তানি বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়ে এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে ২০২৬ সালের পর সেই সুবিধা আর থাকবে না। ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন উপপ্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, অপূর্ব জাহাঙ্গীর ও প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ।