সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের বিধান রেখে ‘সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ গত ২৫ মে জারি হয়। বিদ্যমান অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সরকারের দৃষ্টিতে দোষী কর্মচারীকে দুই দফায় মোট ১৪ দিনের নোটিশে তদন্ত ছাড়াই চাকরি থেকে বরখাস্ত বা নিম্নপদে নামিয়ে দেওয়ার মতো শাস্তির সুযোগ আছে। এর প্রতিবাদে সচিবালয়ের কর্মচারীরা কয়েক দফায় আন্দোলন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার আইনটি সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়। অধ্যাদেশটি প্রণয়নের দেড় মাসের মধ্যে সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদন করল সরকার।
গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সরকারি উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বশীল অন্তত দুটি সূত্র, যারা উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, তারা জানান, সরকার কর্মচারীদের উদ্বেগের বিষয়টি আমলে নিয়েছে, আশা করা যায়, আর কোনো সমস্যা থাকবে না।অপর একটি সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত সংশোধনে নারী কর্মচারীদের বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে। কোনো নারী কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তদন্ত কমিটিতে একজন নারী কর্মকর্তা রাখতে হবে।
বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ জানিয়েছে, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভোটিং-সাপেক্ষে ‘সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এই অধ্যাদেশ সংশোধনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ২৫ মে জারি করা সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের ৩৭ দফা (ক) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো কর্মচারী এমন কোনো কাজে লিপ্ত হওয়া যা অনানুগত্যের শামিল, যা অন্য কোনো কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করে, শৃঙ্খলা বিঘ্ন করে এবং কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে, তাহলে ইহা একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এই ধারার বিষয়ে গত ২৫ জুন অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা কমিটি এবং কর্মচারী নেতাদের বৈঠকে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত ধারাটি বাতিল হবে। ‘তদস্থলে যদি কোনো কর্মচারী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বৈধ আদেশ অমান্য করে, আইনসঙ্গত কারণ ব্যতিরেকে সরকারের কোনো আদেশ, পরিপত্র এবং নির্দেশনা অমান্য করেন, সরকারি আদেশ, পরিপত্র এবং নির্দেশনা বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্ত করেন এবং এসব কাজে সরকারি কর্মচারীকে প্ররোচিত করে’- এই শব্দগুলো প্রতিস্থাপন হবে।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, ২৫ জুন জারি করা অধ্যাদেশে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ছিল না। তদন্তের ব্যবস্থা ছিল না। উপদেষ্টা কমিটি ও কর্মচারী নেতাদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে কোনো কর্মচারী উল্লিখিত অপরাধ করলে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি তিন দিন অর্থাৎ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দেবে। তদন্ত কমিটির কাছে অভিযুক্ত কর্মচারী আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবেন। উল্লিখিত অপরাধ যদি কোনো কর্মজীবী নারী করে বসেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার পর তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি অভিযোগ তদন্ত করবে। কমিটিতে আবশ্যিকভাবে একজন নারী সদস্য থাকবেন। ফলে নারী কর্মজীবীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ৭ দিনের মধ্যে অভিযোগ গঠন, ১৪ দিনের মধ্যে শুনানি সম্পন্ন হবে। অধ্যাদেশে ৭ দিনের মধ্যে শুনানি শেষ করার বিধান রয়েছে। ৩০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিলের সুযোগ আগের মতো বহাল থাকবে। তবে আরোপিত দন্ডের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা যাবে। উচ্চ আদালতে আপিল রাষ্ট্রপতির রায়ের বিরুদ্ধে নয়, বরং যে কর্তৃপক্ষ শাস্তি দিয়েছে ওই কর্তৃপক্ষের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিলের সুযোগ থাকবে। রাষ্ট্রপতির কাছে যা করা হবে- তা হচ্ছে মূলত শাস্তি মওকুফের আবেদন করা।