প্রতিবছরের মতো এবারও এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ (২৪-৩০ এপ্রিল) সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও যথেষ্ট গুরুত্ব এবং তাৎপর্যের সাথে বিশ্ব টিকা সপ্তাহ-২০২৫ উদযাপন করা হয়েছে। এ বছর ‌'সবার জন্য টিকাদান মানবিকভাবে সম্ভব' এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশে উদযাপন করা হলো ‘বিশ্ব টিকাদান সপ্তাহ উদযাপন-২০২৫’।

এ উপলক্ষ্যে বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকাল এগারোটায় রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ইউনিসেফ বাংলাদেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন এর যৌথ উদ্যোগে এবং সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী (ইপিআই) এর সার্বিক সহযোগিতায় বাংলাদেশে টিকা কার্যক্রমের সাফল্য, প্রেক্ষিত, বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ এবং করনীয় তুলে ধরার লক্ষ্যে ‍‍'বাংলাদেশে টিকাদান ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ সংক্রান্ত জাতীয় পর্যায়ের সভা' শীর্ষক একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. মোঃ সায়েদুর রহমান, মাননীয় বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী), স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় টিকাদান প্রোগ্রামকে আরও জোরদার করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পর টিকার যে ঘাটতি দেখা দিয়েছিল তা সফলভাবে মোকাবেলা করেছি এবং বাজেট বরাদ্দের মাধমে টিকার সাপ্পাই নিশ্চিত করেছি। এ বছরও টিকা ক্রয়ের জন্য যথেষ্ট বরাদ্দ গ্রহন করা হয়েছে। টিকা ক্রয়ের কাজে ইউনিসেফ আমাদের যথেষ্ট সহায়তা করছে। আমার মনে হয় সবাই একসাথে কাজ করে গেলে আমরা টিকাদান প্রোগ্রামকে আরও সফল করতে পারবো।

উক্ত আলোচনা সভায় জনাব মোঃ সাইদুর রহমান, সচিব, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বলেন, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী (ইপিআই) বাংলাদেশ সরকারের সফল উদ্যোগ গুলির মধ্যে অন্যতম। ১৯৭৯ সালের ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে বাংলাদেশে ইপিআই কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে ইপিআই কার্যক্রম সারা দেশে সম্প্রসারণের উদ্দ্যোগ নেওয়া হয়। ঢাকা শহরে ইপিআই কার্যক্রম ১৯৮৯ সালে প্রাথমিকভাবে যাত্রা করে এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিভাগীয় শহরে বিস্তৃত কর হয়। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় গত ৪৫ বছরে বাংলাদেশ টিকাদান কার্যক্রমে আমরা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করছি এবং ভ্যাকসিন-প্রতিরোধযোগ্য রোগ (ভিপিডি) নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণেও যথেষ্ঠ অগ্রগতি অর্জন করতে সামর্থ্য হয়েছি। বর্তমানে আমরা টিকাদান কার্যক্রমকে আরও জোরদার করতে কাজ করে যাচ্ছি।

ডাঃ রিয়াদ মাহমুদ , হেল্‌থ ম্যানেজার, উনিসেফ, বলেন, ইপিআই একটি মূল্যবান বিনিয়োগ, যেখানে প্রতি ১ মার্কিন ডলার বিনিয়োগের জন্য ২৫.৪ মার্কিন ডলার লাভ হয়। (MOHFW, EPI and UNICEF Investment Case study, 2023)। ইপিআই এবং এমআইএস ইউনিসেফের কারিগরি সহায়তায় টিকাদান কার্যক্রমে বৈপ্লবিক উদ্ভাবন নিয়ে এসেছে (যেমন ভ্যাক্সইপিআই, ই-ট্রাকার, জিআইএসভিত্তিক অনলাইন মাইক্রোপ্ল্যান, এবং ই-ভিএলএমআইএস)। ইপিআই কাভারেজ ইভালুয়েশন সার্ভে ২০১৯ এর পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশে ১৯৮৫ সালে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচীর কভারেজ ছিল ২ শতাংশের নিচে, যা বর্তমানে ৮৩.৯ শতাংশে উন্নিত হয়েছে। তবে গ্রাম শহর নির্বিশেষে কাভারেজের ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়।

টিকা কার্যক্রমকে আরও জোরদার করার লক্ষ্যে তিনি কিছু সুপারিশ উপস্থাপন করেন, যেমন, মন্ত্রণালয়ের অধীনে শহর ও গ্রামে টিকাদান প্রকল্পে বরাদ্দকৃত জনবলের মধ্যে যে শূন্যপদ আছে সেখানে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া, জনসংখ্যা ভিত্তিক জনবলনীতি অভিযোজন করা, জনসংখ্যার ঘনত্বের উপর ভিত্তি করে টিকা কেন্দ্রের সুষম বন্টন, প্রতিটি টিকাদান কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, ভ্যাকসিন সরবরাহ ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করা, তাছাড়া অদুর ভবিষ্যতে ভ্যাকসিনের যে সংকট দেখা দিতে পারে সে ক্ষেত্রে যথাযত বাবস্থা গ্রহন করতে হবে। এছাড়া ইপিআই প্রোগ্রাম মনিটরিং এবং মূল্যায়নের সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের অনুপ্রাণিত করে মানসম্পন্ন তত্ত্বাবধান এবং পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে টিকাদান কর্মসূচিকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন।

এই আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এবং গ্যাভী সিএসও স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান, ডাঃ নিজাম উদ্দিন আহমেদ। তিনি বাংলাদেশের টিকাদান কর্মসূচির সাফল্য, বর্তমান প্রতিবন্ধকতা এবং উত্তরণের উপায়সমূহ নিয়ে গুরত্তপূর্ণ আলোচনা করেন। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, অধ্যাপক ডা. মোঃ আবু জাফর, মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর; অধ্যাপক ডা. শেখ ছাইদুল হক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর; ডাঃ মোঃ শিব্বির আহমেদ ওসমানী, যুগ্মসচিব (জনস্বাস্থ্য অধিশাখা), স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ; জনাব মোঃ মহসীন, যুগ্মসচিব (মহাপরিচালক, অটিজম সেল), স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এবং ডাঃ আবুল ফজল মোঃ সাহাবুদ্দিন খান, প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ইপিআই, স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তর সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ, দেশি-বিদেশি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, একাডেমিক, গবেষক ও গণমাধ্যম কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

এই আলোচনা সভায় সঞ্চালনা ও স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন, ইউনিসেফ বাংলাদেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পলিসি অ্যাডভাইজার এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোঃ রফিকুল ইসলাম। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের টিকাদান কর্মসূচির সাফল্য, বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা এবং উত্তরণের উপায়সমূহ নিয়ে আলোচনা মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিতকরনে সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে পারলেই আজকের এই আলোচনা সভার সার্থকতা অর্জিত হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি