ইবরাহীম খলিল : আগামি ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। জাতীয় নাগরিক কমিটির শীর্ষ নেতা আখতার হোসেন একথা নিশ্চিত করেছেন। দৈনিক সংগ্রামের সাথে আলাপকালে তিনি জানান হাতে আর সময় নেই। এমাসের ২৩ থেকে ২৬ তারিখের মধ্যে আমরা আত্মপ্রকাশ করবো। নতুন দলের নাম কিংবা কেন্দ্রীয় কমিটির বিষয়টি আত্মপ্রকাশের দিন জানা যাবে বলেও জানিয়ে দেন তিনি। গতকাল রোববার সারাদিন নানা বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির অফিসে মিটিং হয়। তারুণ্যনির্ভর দলটি নিয়ে সব মহলে এখন আলোচনা চলছে। বিশেষ করে স্বৈরাচার হাসিনাকে হটিয়ে দেওয়া এই দলটি রাজনীতির মাঠে এসে কি প্রভাব ফেলে তা একটি লাখ টাকার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোও সতর্ক দৃষ্টি রাখার পাশাপাশি সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে।

রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে বৈষম্যবিারোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মেহরাব সিফাত গতকাল বিকেলে দৈনিক সংগ্রামের সাথে আলাপকালে জানান, আমাদের দল হবে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন এবং শক্তিশালী রাজনৈতিক দল। আমাদের দলের গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করার জন্য আন্তর্জাতিক মানের রিসার্চ কমিটি কাজ করছে। আমাদের তরুণদের দলটা এমন হওয়া চাই; যাতে এই উপমহাদেশকে ডমিনেট করা যায়। কারণ আমরা ভারতকে টেক্কা দিয়ে এদেশে বিপ্লব সাধন করেছি। আমাদের নতুন দলও হবে সেই আলোকে। তরুণেরা যাতে এই রাজনৈতিক দলের ওপর নির্ভর করতে পারে এবং ভরসা পায় সেপথে হাঁটবো আমরা। তিনি জানান, ডান-বাম সব দল আমাদের সাথে যোগাযোগ করছে। তাদেরকে নিয়ে সমন্বয় করে আমাদের দল হবে মধ্যম পন্থার। এই সময়ে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে দল গঠন করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে সিফাত জানান, নির্বাচন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যে কথা বলা হচ্ছে তা সরকারের বিষয়। রাজনৈতিক দল গঠনের পর আমরা আমাদের মতামত জানাবো। আমরাও বলবো. আমাদের কোন সময় নির্বাচন করতে সুবিধা হবে। সবার পাশাপাশি আমাদেরতো সুবিধা অসুবিধা দেখবে সরকার। তাই না ? কেন্দ্রীয় কমিটি, রাজনৈতিক দলের নাম ঠিক করার বিষয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এগুলো আত্মপ্রকাশের দিনই জানতে পারবেন। অবশ্য এর আগে একজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দৈনিক সংগ্রামকে জানিয়েছিলেন যে পবিত্র রমযানের আগেই আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে তরুণদের রাজনৈতিক দল। যে কয়টি নাম নিয়ে আলোচনা চলছে এর মধ্যে ‘শক্তি’ শব্দটা রয়েছে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন গতকাল এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, আমাদের দেশের তরুণেরা রাজনীতি বিমুখ বলে মনে করা হয়। তারাই কিন্তু দেশে অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। বিপ্লব সাধন করেছে। আমাদের রাজনীতিটাও হবে তারুণ্যনির্ভর। এজন্য তরুণদের কিভাবে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করা যায় সে বিষয়টি আমরা মাথায় নিচ্ছি। আমরা দেখছি বিশে^র অন্যান্য দেশে তরুণেরা কিভাবে রাজনীতির সাথে যুক্ত এবং তাদের ভেতরের মেকানিজমগুলো কীরকম তা আমরা খতিয়ে দেখছি। তার পাশাপাশি আমরা অনলাইন এবং অফলাইনে জরিপ চালাচ্ছি। অনলাইনে আমাদের জরিপে লক্ষাধিক মানুষ অংশ নিয়ে মতামত প্রদান করেছে। এই কয়দিন আরও মতামত আসবে। এছাড়া আমরা অফ লাইনেও ফরম বিতরণ করেছি। সেগুলোও আমাদের কাছে আসছে। এগুলো যাচাই বাছাই করে দেখবো। আমরা হুট করেই রাজনীতিতে নামছি না।

নতুন দল কোন মডেলের হবে তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সামান্তা শারমিন বলেন, সুনির্দিষ্ট কাউকে ফলো করে নতুন দল গঠন করা হচ্ছে না। বিশে^র বিভিন্ন দেশের কিছু রাজনৈতিক দলকে গবেষণা করে তাদের ফাংশনগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আমাদের দেশের জন্য উপযুক্ত বিষয়গুলোকে আমরা নিবো।

নতুন দলের ডিপ্লোমেসি কেমন হবে সে বিষয়ে জানতে চাইলে সামান্তা শারমিন জানান, কুটনীতিটা হবে ব্যালেন্সড। ছোট দেশ বলে পাশের দেশ ধমকাবে সেটা যেমন মেনে নেবো না; তেমনি সারা বিশে^র সাথে যোগাযোগটা থাকবে দক্ষতার ভিত্তিতে। এক্ষেত্রে আমাদের মেধাবী কুটনীতিকদের কাজে লাগানো হবে।

এদিকে ২৪ জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নতুন দলের আত্মপ্রকাশের দিকে তাকিয়ে আছে সবাই। দেশ-বিদেশের সবার দৃষ্টি এখন রাজনীতির মাঠে আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় থাকা তারুণ্যনির্ভর নতুন রাজনৈতিক দলের দিকে। বিশেষ করে এই দলটি কিভাবে আত্মপ্রকাশে আসছে। তাদের এজেন্ডাগুলো কিরকম। তাদের কার্যক্রমের পরিধি এবং পলিসিই বা কিরকম হবে। তারা রাজনীতির মাঠে এসে কি রকম প্রভাব ফেলতে পারবে ইত্যাদি, ইত্যাদি। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাও তারুণ্যের দলটির ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে এবং সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে। গত কয়েকদিন ধরে নতুন রাজনৈতিক দল নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে সবখানে। রাস্তাঘাটে, পরিবহনে, চায়ের টেবিলসহ সবখানে নতুন দলের নেতৃত্ব নিয়েই আলোচনা করতে দেখা গেছে।

এমন এক সময় স্বৈরাচার বিতাড়নে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্য বিরোধীরা রাজনীতির মাঠে আসছে যখন চারদিকে সংস্কারের ডামাডোল। অন্তর্বর্তী সরকার চাইছে আগে সবস্থানে সংস্কার আর সুশাসন নিশ্চিত করতে। কোন কোন রাজনৈতিক দল অবশ্য খুব দ্রুত নির্বাচন দাবি করছে। তবে বৈষম্যবিরোধীরা চায় আগে স্বৈরাচার হাসিনার গুম খুন আর লুটপাটের বিচার এবং সবখান থেকে বৈষম্য দূর করা। এরপর নির্বাচন।