বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তপক্ষের (বেবিচক) প্রধান প্রকৌশলী পদে বিতর্কিত হাবিবুর রহমানকে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ দিতে তোড়জোড় শুরু করেছে একটি সিন্ডিকেট। ইতোমধ্যে বেবিচকের বোর্ড সভা হাবিবুর রহমানকে অবসরোত্তর ১ বছরের জন্য চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে বলে জানা গেছে।

তবে তার আগে হাবিবুরের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা বা অভিযোগের হাল নাগাদ তথ্য চেয়ে দুদককে চিঠি দিয়েছে বেবিচক। সভায় প্রধান প্রকৌশলী পদের জন্য পদোন্নতিযোগ্য আরো ৩ কর্মকর্তার বিষয়ে আলোচনা হয়। এই ৩ জনের দূর্নীতির তথ্য উপস্থাপন করা হয়, তবে অজানা কারনে হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দুদকের ৪টি মামলা থাকা সত্ত্বেও বিষয়ে তার পক্ষে বলা হয়। এছাড়া তার বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ গোপন করা হয়। সভা ও বেবিচক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, গত ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত বেবিচকের ৩শতম বোর্ড সভায় প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় বলা হয়, প্রধান প্রকৌশলী পদে কর্মরত হাবিবুর রহমান চলতি মাসের ২২ মার্চ এলপিআরএ যাবেন। ২৩ মার্চ থেকে পদটি শূন্য হবে। অতি গুরুত্বপূর্ন এ পদটি পুরন করা প্রয়োজন।

সভার কার্যবিবরনীতে বলা হয়, প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগের বিষয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়। মোঃ হাবিবুর রহমান ২১ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বর্তমানে বেবিচকের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প (টার্মিনাল-৩) এর কাজ বেগবান হয়। সভায় প্রধান প্রকৌশলী পদের জন্য যোগ্য তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ শহীদুল আফরোজ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. জাকারিয়া হোসেন ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শুভাশীষ বড়ুয়ার বিরুদ্ধে দদুকের মামলার তথ্য তুলে ধরা হয়।

সভায় আরও জানানো হয় যে, বেবিচকের ছয়টি প্রকল্পে দূর্নীতির অভিযোগে করা দুদকের চারটি মামলায় অন্যান্যদের পাশাপাশি বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমানকে আসামী করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে মোঃ হাবিবুর রহমান সেই ৬ প্রকল্প মাত্র ৩৬ দিন দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি দায়িত্ব পালনকালে শুধুমাত্র ব্যাংক এডভাইসের মাধ্যমে কাস্টমস ডিউটি পরিশোধ করা ছাড়া কোন প্রকার ঠিকাদারী বিল পরিশোধ করেননি কিংবা কোন প্রকার প্রশাসনিক অনুমোদন দেননি।

সভায় সভাপতি জানান, সামগ্রিক বিবেচনায় বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী পদে হাবিবুর রহমানকে তার অবসর উত্তর ছুটি বাতিলপূর্বক আগামী ২৩ মার্চে থেকে ১ বছরের জন্য বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রস্তাব প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো যেতে পারে।

বেবিচক সূত্র জানায়, প্রধান প্রকৌশলী পদের জন্য যোগ্য অন্যদের মামলা ও দূর্নীতির বিষয়ে বোর্ড সভায় আলোচনা হলেও হাবিবুরের পক্ষ নেয়া হয়। এজন্য সভায় তার দূর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়নি। উপরন্তু তার পক্ষে বলা হয়েছে। সভায় সদস্যরা হাবিবুর এবং পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মামলার হাল নাগাদ তথ্য নেয়ার আহ্বান জানান।

সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, হাবিবুর রহমানকে ১ বছরের জন্য চুক্তি ভিত্তিক প্রদান প্রকৌশলী পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য মন্ত্রনালয়ে চিঠি পাঠানোর আগে দুদকে চিঠি দেয়া হবে। একই সাথে পদোন্নতি যোগ্য অন্য ৩ কর্মকর্তার বিষয়েও দুদকে চিঠি দেয়া হবে। এরই প্রেক্ষিতে গত ১২ মার্চ দুদকে চিঠি দেয় বেবিচক।

বেবিচক সূত্র জানায়, দুদক হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ৪টি মামলা করেছে। তার বিরুদ্ধে প্রায় ৮২০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, যা বেবিচকের চারটি মেগা প্রকল্পের সাথে সম্পর্কিত। কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্প পিডি থাকাকালে ১৫০ কোটি টাকা অগ্রিম বিল দেয়া। সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পে আয়নবায়ন কর্মকর্তা হিসেবে ২১২ কোটি টাকা অগ্রিম বিল প্রদান করেন(দুদকের মামলার এজাহারে এ তথ্য রয়েছে)। তার বিরুদ্ধে রিট পিটিশন হওয়ায় হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। রয়েছে বিদেশে নিষেধাজ্ঞা। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, যার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা রয়েছে, তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া আইন পরিপন্থী।

এছাড়া প্রধান প্রকৌশলী পদে বহাল থাকলে তিনি মামলার আলামত নষ্ট করতে পারেন এবং সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন, যা মামলার সুষ্ঠু তদন্তকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। হাবিবুর রহমানের দূর্নীতির বিষয়ে জেনেও তাকে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ দিতে ইচ্ছাকৃতভাবে বোর্ড সভায় বিষয়টি উথাপন করা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া জানান, হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলো দুদক তদন্ত করছে। সেখানে যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে অবশ্যই তিনি শাস্তি পাবেন।