বহুধর্মীয় সংলাপ বিষয়ক আন্তর্জাতিক কর্মশালা ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্কশপ অন মাল্টিফেইথ ডায়লগ (আইডব্লিওএমডি ২০২৫) এর সমাপনী সেশন গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। সমাপনী সেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. এ.এফ.এম. খালিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘বাগানে নানা বর্ণে সুভাসিত ফুল যেমন বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, একটি দেশে বিভিন্ন জাতি ধর্ম বর্ণে মানুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। দেশের প্রতিটি মানুষের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। রাজনৈতিক অধিকার, মতপ্রকাশের অধিকার, নিজ নিজ ধর্ম পালনসহ সকল মানবিক অধিকার নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

এমএফএনএন ঢাকা শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে একটি সমৃদ্ধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য বহুধর্মীয় সম্প্রীতিকে গুরুত্ব দেয়ার কথা বলা হয়। বাংলাদেশের খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, হিন্দু ও ইসলাম ধর্মের প্রতিনিধিগণ এবং অংশগ্রহণকারীরা একত্রিত হয়ে স্বীকার করে সব ধর্মের অনুসারীরাই একই মানব জাতি, যারা মহান স্রষ্টার সর্বোত্তম সৃষ্টি। এদের মধ্যকার একতার শক্তি সর্বজনীন। তাই এই গ্রহের সমস্ত মানুষ ও প্রাণীর মঙ্গলের জন্য যতœ নেওয়া আমাদের দায়িত্ব।

ঔপনিবেশিক শাসনামলে অনৈক্য সৃষ্টির বড় ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতির সমৃদ্ধ ইতিহাসের উত্তরাধিকার বাংলাদেশ। বিশ্বের অন্য যে কোনো স্বৈরশাসকের মতো বাংলাদেশেও স্বৈরাচারী শাসককে ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে ধর্মকে ব্যবহার করে শাসন করতে দেখা গেছে। ৫ অগাস্ট ২০২৪-এর অভ্যুত্থান সকল প্রকার বৈষম্য বিরোধী চেতনার উপর ভিত্তি করে ঘটেছে। বিভিন্ন ধর্মের প্রতি সহানুভূতি, শ্রদ্ধা ও পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সহযোগিতার মনোভাব গড়ে তোলার সুযোগ তৈরি করেছে। বিভ্রান্তি, বিচ্ছিন্নতা ও বিভাজনমূলক বয়ানগুলো ভুল ধারণা ও বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে।

সম্মেলন আহ্বান জানায়- সবাই সহযোগিতামূলক নীতি ও কর্মের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ব্যক্তিগত স্তরে আন্তঃধর্মীয় সম্পর্ক গড়ে তোলা, পরস্পরের সুখে দুখে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সামাজিকীকরণ বৃদ্ধি করুন। স্থানীয়ভাবে ও বৃহত্তর পরিসরে সহযোগিতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করুন। ভিন্ন বিশ্বাসের বা ধর্মেরও প্রতিবেশীর পাশে দাঁড়ান। মানবিক প্রয়োজনে ভিন্ন বিশ্বাসের লোকদের পাশে থাকুন। অন্য ধর্মের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে এমন কোনো কর্মকা-ে অংশগ্রহণ করবে না এবং অসামঞ্জস্য সৃষ্টি করে ও সম্পর্কের ক্ষতি করে এমন অপপ্রচার সম্পর্কে সচেতন থাকবেন। বহুবিশ্বাসের সম্প্রীতির জন্য একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করুন। সমাপনী সেশনে বক্তারা বলেন, এদেশে কখনো রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে কোনো বৈষম্য ছিল না, এখনো নেই। সহিংসতার ঘটনা ধর্মীয় কারণে নয়, ধর্মভেদে নাগরিক সুযোগ-সুবিধার বৈষম্যও করা হয় না। আসলে রাজনৈতিক বা অন্য কোনো স্বার্থের কারণে ঘটা সহিংসতাকে ধর্মীয় কারণে সহিংসতা বলে চিত্রিত করা হয়। সহিংসতার ঘটনা সম্পূর্ণ রাজনীতিক, আন্তঃধর্মীয় বিরোধের ভিত্তিতে নয়।