জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান নতুন বাংলাদেশের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, এখন আমাদের কাজ সকলে মিলে যেন একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারি। যেন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের শাসন ফেরত না আসে। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্থায়ী রূপ নেয়।

তিনি বলেন, আমাদের কাজ যেন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং সমস্ত রকম নিপীড়ন মোকাবিলা করতে পারি এবং সে ব্যবস্থাগুলো অপসারণ করতে পারি।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সংলাপের প্রারম্ভিক বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের প্রশংসা করে তিনি বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান হয়েছে। দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে আপনাদের অকুতোভয় সংগ্রাম, প্রাণ বাজি রেখে লড়াই। আপনাদের সাথীরা প্রাণ দিয়ে হলেও একটি ফ্যাসিবাদী শাসককে পরাস্ত করতে পেরেছে। ফ্যাসিবাদী শাসককে পলায়ন করতে বাধ্য করেছেন। দীর্ঘদিন ১৫ বছর ধরে যে শাসন আমাদের বুকের ওপর জগদ্দল পাথরের মত বসে ছিল।

ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, তাকে (শেখ হাসিনা) আপনারা দৃঢ়তা, সাহসিকতা দিয়ে, নির্ভীক, অবিচল প্রচেষ্টা দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছন, যারা প্রাণবাজি রেখে লড়াই করেছে, প্রাণ দিয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত ফ্যাসিবাদী শাসকের বিরুদ্ধে বিজয় হয়েছে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কারণে রাষ্ট্র সংস্কারের বর্তমান কার্যক্রম চলা সম্ভব হয়েছে জানিয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আজকে এখানে কথা বলতে পারছি, এক সঙ্গে বসত পারছি, তা সম্ভব করে তুলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আজকের নেতৃত্বের আন্দোলনের কারণে। সে কারণে আপনাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। ইতিহাসের অংশ হিসেবে জাতি আপনদের মনে রাখবে। ইতিহাসর উজ্জ্বল অধ্যায় তৈরি করেছেন।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দাবি প্রসঙ্গে আলী রীয়াজ বলেন, সে বিজয়ের পাশাপাশি আপনারা সুস্পষ্টভাবে বলছেন একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চান এবং আপনাদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন ধরে যে আকাঙ্খা মানুষের মধ্যে ছিল সেটা মূর্ত হয়ে উঠেছে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য। এ অভাবনীয় ও অকুতোভয়া গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্র সংস্কারের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য আপনাদের অবদান স্বীকার করব।

বাংলাদেশে বারবার গণতন্ত্রের আকাঙ্খা পর্যদুস্ত হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা দেখেছি গণতন্ত্রের সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বিজয় বিভিন্নভাবে ভূলুণ্ঠিত করা হয়। রাষ্ট্রকে কিভাবে একব্যক্তির করতলগত করে একটি শাসন ব্যবস্থা করেছিল।

আলোচনা প্রয়োজনে অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা চাই জাতির আকাঙ্খার জায়গায় জাতীয় সনদ তৈরি করতে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে উপস্থিত আছেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান।

অন্যদিকে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে আরও উপস্থিত আছেন দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, জ্যেষ্ঠ সদস্য সচিব নাহিদা সারোয়ার নিভা, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়কারী নাসিরুদ্দিন পাটওয়ারি, যুগ্ম-আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, যুগ্ম-আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন।