সরকারি ছুটি নিয়ে সাধারণ মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। চাকরিজীবীদের অনেকেই জানতে চান—এই ছুটি কীভাবে নির্ধারিত হয়, কত প্রকারের ছুটি রয়েছে, কিংবা সবার জন্য কি একই নিয়ম প্রযোজ্য?

প্রতি বছর সরকারের পক্ষ থেকে গেজেট আকারে সাধারণ ছুটি বা পাবলিক হলিডের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এ তালিকার বাইরে নির্বাহী আদেশে কিছু অতিরিক্ত ছুটিও যোগ করা হয়। পরবর্তীতে প্রয়োজন অনুযায়ী কর্মকর্তারা ঐচ্ছিক ছুটি নেয়ার সুযোগও পান।

বাংলাদেশে সরকারি ছুটির বিষয়টি মূলত সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এবং ছুটি বিধিমালা, ১৯৫৯ দ্বারা পরিচালিত। সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী, কর্মকর্তারা প্রযোজ্য নিয়মে ছুটি ভোগ করতে পারেন, আর ১৯৫৯ সালের বিধিমালায় ছুটির ধরন ও শর্তাবলি বিস্তারিতভাবে নির্ধারণ করা আছে।

সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদ ২০২৬ সালের সরকারি ছুটির তালিকা অনুমোদন দিয়েছে। নির্বাহী আদেশ ও সাধারণ ছুটি মিলিয়ে আগামী বছরে মোট ২৮ দিন সরকারি ছুটি থাকবে। এর মধ্যে ১১ দিন পড়েছে সাপ্তাহিক বন্ধে (শুক্র ও শনিবার), ফলে প্রকৃত কার্যদিবসের ছুটি থাকবে ১৭ দিন।

প্রতি বছরই যেমন ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১ মে ও ১৬ ডিসেম্বরের মতো জাতীয় দিবসগুলো সাধারণ ছুটির তালিকায় থাকে—তেমনি এবার নতুন করে ৫ আগস্ট তারিখটি যুক্ত হয়েছে।

সরকারের ছুটি বিধিমালা, ১৯৫৯ অনুযায়ী মোট ১৭ ধরনের সরকারি ছুটি রয়েছে। বছরের শুরুতে ঘোষিত সাধারণ ছুটি সবার জন্য প্রযোজ্য হলেও, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এর বাইরে আরও ১৬ ধরণের আলাদা ছুটি উপভোগ করতে পারেন।

এর মধ্যে রয়েছে—
অর্জিত ছুটি, অসাধারণ ছুটি, অধ্যয়ন ছুটি, সংগনিরোধ ছুটি, প্রসূতি ছুটি, প্রাপ্যতাবিহীন ছুটি, অবসরোত্তর ছুটি, নৈমিত্তিক ছুটি, শ্রান্তি ও বিনোদন ছুটি, বিশেষ অসুস্থতাজনিত ছুটি, অক্ষমতাজনিত ছুটি, বিভাগীয় ছুটি, চিকিৎসালয় ছুটি, অবকাশ বিভাগের ছুটি, বাধ্যতামূলক ছুটি এবং বিনা বেতনের ছুটি।

তবে সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে ছুটির নিয়ম কিছুটা আলাদা হতে পারে। একইভাবে স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মীদের ক্ষেত্রেও পার্থক্য দেখা যায়।

সাধারণ ও নির্বাহী আদেশে ছুটি

প্রতি বছরের শুরুতে সরকার যে গেজেটভিত্তিক ছুটি ঘোষণা করে, সেটিই সাধারণ ছুটি হিসেবে গণ্য হয়। এটি সব সরকারি ও আধা-সরকারি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার জন্য প্রযোজ্য।

তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান যেমন—ব্যাংক, রেলওয়ে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, হাসপাতাল ও কলকারখানা জনস্বার্থে আলাদা নিয়মে কাজ চালায়। এজন্য তাদের ছুটির দিন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নাও মেলতে পারে।

অন্যদিকে নির্বাহী আদেশে ছুটি মূলত সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মীদের জন্য দেওয়া হয়। বেসরকারি খাতে এই ছুটি প্রযোজ্য নয়।

ঐচ্ছিক ছুটি

নির্ধারিত বিধিমালায় ঐচ্ছিক ছুটির ব্যবস্থাও রয়েছে, যা সাধারণত ধর্মীয় বা ব্যক্তিগত কারণে নেওয়া হয়। একজন কর্মকর্তা বছরে সর্বোচ্চ তিন দিনের ঐচ্ছিক ছুটি নিতে পারেন—তবে এর জন্য আগাম অনুমোদন নিতে হয়।

এই ছুটি সাধারণ ও সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে যুক্ত করেও নেওয়া যেতে পারে।

অন্যদিকে বেসরকারি চাকরিজীবীরা শুধুমাত্র তাদের প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী ছুটি ভোগ করেন; সরকারি ছুটি বিধিমালার সব শর্ত তাদের ক্ষেত্রে সরাসরি প্রযোজ্য নয়।