উৎসবমুখর আয়োজনের মধ্য দিয়ে রাজধানীর রেডিসন ব্লু হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করলো অনলাইন নিউজ পোর্টাল “প্রজন্ম ২৪” (Projonmo 24)।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) এই অনুষ্ঠানে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে আত্মোৎসর্গকারী শহীদ পরিবারের সদস্যরা ফিতা কেটে ও লোগো উন্মোচনের মাধ্যমে পোর্টালটির উদ্বোধন করেন। যা দেশের গণমাধ্যমের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় রচনা করলো।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শহীদ পরিবারের সদস্য, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

প্রজন্ম ২৪ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা নিরপেক্ষতা ও নির্ভুল তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদ পরিবেশন করবে। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, বিনোদনসহ সব খাতের সর্বশেষ খবর ও বিশ্লেষণ প্রকাশের পাশাপাশি মাল্টিমিডিয়া কনটেন্টের মাধ্যমে বিশেষভাবে তরুণ প্রজন্মের চাহিদার প্রতিফলন ঘটানো হবে।

আহত ও শহীদ পরিবারের স্মৃতিচারণে তৈরি হয় এক আবেগঘন পরিবেশ। তাদের বক্তব্যে ওঠে আসে জুলাইয়ে চিত্র।

আহত মাদ্রাসা শিক্ষার্থী জুনায়েদ আহমেদ বলেন, “চব্বিশের জুলাই বিপ্লব ছিলো জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আমাদের লক্ষ্য ছিলো সত্য বলা, ইসলাম প্রচারে প্রতিবন্ধকতা দূর করা এবং ফ্যাসিবাদী শাসন উৎখাত।”

শহীদ নাঈমের মা বলেন, “আমার সন্তানের লাশ নেওয়ার জন্য একটি এম্বুলেন্স বা ভ্যানও পাইনি। রিকশায় করেই কোনোভাবে লাশ বাড়ি নিয়ে গিয়েছি।”

সন্তানের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

শহীদ নাফিসের বাবা বলেন, “শহীদ পরিবারের সদস্যরা এখনো অবহেলিত। দ্রুত বিচার কার্য সম্পন্ন এবং ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদী বলেন, “জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দল আজও স্পষ্ট অবস্থান নেয়নি। জুলাইকে যদি কেউ বিক্রি করতে চায়, তবে তারা পার পাবে না। আমরা জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়েই ঘরে ফিরব।”

জুলাই ঐক্যের সংগঠক মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ বলেন, “২৯ জুলাই গ্রেফতার হয়ে শাহবাগ থানায় নেওয়া হলেও মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকদের কারণে আবার আন্দোলনের ময়দানে ফিরতে পেরেছিলাম। প্রজন্ম ২৪ যুগ যুগ ধরে মানুষের মাঝে আশার আলো ছড়াবে।”

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, “প্রজন্ম ২৪ মূলত চব্বিশের অভ্যুত্থানের চেতনায় প্রতিষ্ঠিত। হাসিনা সরকারের সময় যৌক্তিক আন্দোলনের খবর প্রচার করতে মিডিয়াকে বাধা দেওয়া হতো। তখন টেলিভিশন ও মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকদের ভূমিকা ছিল অনন্য।”

জামায়াত ঢাকা দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, “প্রজন্ম ২৪ ফ্যাসিবাদের হৃদয়ে আঘাত হানতে থাকবে এবং সবসময় সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে থাকবে।”

জামায়াত ঢাকা উত্তরের আমীর মু. সেলিম উদ্দিন বলেন, “চব্বিশের আন্দোলনের আহতরা এখনো সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না। আহতদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।”

প্রজন্ম ২৪-এর সম্পাদক ড. আহসান হাবীব ইমরোজ বলেন, “৩৬ জুলাইয়ের স্পিরিটে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের এই মাল্টিমিডিয়া গণমাধ্যমের ভিন্নতর অভিযাত্রা শুরু করেছি।

স্বাধীন গণমাধ্যম মানে কেবল সরকারের সমালোচনা নয়; বরং সত্যনিষ্ঠ, দায়িত্বশীল তথ্য পরিবেশন করে রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে তোলা। গুজব ও বিভ্রান্তি থেকে সমাজকে রক্ষা করাও আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।”

প্রকাশক ড. উম্মে হাবিবা শারমিন বলেন,“ ‘৩৬ জুলাই’-এর চেতনা গণতন্ত্র, অধিকার ও পরিবর্তনের নির্ভীক উচ্চারণ। আমরা ইতিহাস থেকে প্রেরণা পাই—১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন আমাদের শিখিয়েছে, জনগণের দাবি কখনো অস্ত্রের মুখে থামানো যায় না।"

অনুষ্ঠানের বক্তারা প্রজন্ম ২৪-এর দীর্ঘস্থায়ী সাফল্য কামনা করেন এবং আশা প্রকাশ করেন, এই পোর্টাল দেশের গণমাধ্যম জগতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।