দেশজুড়ে শুরু হওয়া যৌথ বাহিনীর অপারেশন ডেভিল হান্ট’র প্রথম দিনে ১৩০৮ জনকে গ্রেফতারের খবর পাওয়া গেছে। শনিবার থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে গতকাল রোববার দুপুর পর্যন্ত অভিযানের ফলাফল জানায় পুলিশ সদর দফতর। সন্ধ্যায় পুলিশ সদরদফতরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর জানান, শনিবার রাত থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ১৩০৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপারেশন ডেভিল হান্ট’সহ পুলিশের বিভিন্ন অভিযানে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশের সব মেট্রোপলিটন পুলিশ গ্রেফতার করেছে ২৭৪ জনকে। অন্যদিকে সারাদেশের রেঞ্জ পুলিশ গ্রেফতার করেছে ১০৩৪ জনকে। এর মধ্যে শুধুমাত্র গাজীপুর জেলায় ৮৭ জন রয়েছেন।

ইংরেজি শব্দ ডেভিল অর্থ শয়তান আর হান্ট অর্থ শিকার। ফলে ডেভিল হান্ট-এর অর্থ দাঁড়ায় শয়তান শিকার করা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষিত ডেভিল হান্ট বলতে দেশবিরোধী চক্র, সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের বোঝানো হয়েছে।

গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর এবং পাল্টা হামলায় কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনার পর শনিবার সারাদেশে অপারেশন ডেভিল হান্ট নামের অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী ছাড়াও পুলিশ, বিজিবি, আনসার, কোস্ট গার্ড সদস্যদের সমন্বয়ে এ অভিযান চালানো হবে বলে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম জানিয়েছেন।

এদিকে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধেই অভিযানে নেমেছেন তারা। আর যতক্ষণ না ডেভিল শেষ হচ্ছে, অপারেশন ডেভিল হান্ট ততক্ষণ চলবে। গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর ফার্মগেটে মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউটের নতুন মৃত্তিকা ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন উপদেষ্টা।

অপরদিকে, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে, অপারেশন ডেভিল হান্ট-এর মাধ্যমে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রসচিব নাসিমুল গনি। তিনি বলেন, এই অভিযানে চাঁদাবাজ, মাদক কারবারি নয়, যারা অস্থিতিশীলতার সঙ্গে জড়িত, তাদের ধরা হবে। পরিস্থিতি যতক্ষণ পর্যন্ত না স্বাভাবিক হবে, তত দিন এই অভিযান পরিচালিত হবে বলে জানান নাসিমুল গনি। সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল বেলা ১১টার দিকে পুলিশ সুপারদের (এসপি) নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রসচিব সাংবাদিকদের এ খবর দেন।

ডেভিল শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপারেশন চলবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধেই অভিযানে নেমেছেন তারা। আর যতক্ষণ না ডেভিল শেষ হচ্ছে, অপারেশন ডেভিল হান্ট ততক্ষণ চলবে। গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর ফার্মগেটে মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউটের নতুন মৃত্তিকা ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন উপদেষ্টা।

এ অভিযান কাদের বিরুদ্ধে, সেই প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ডেভিল মানে কী? শয়তানই তো টার্গেট এটায়। যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে, যারা আইন অমান্য করে, দুষ্কৃতকারী এবং সন্ত্রাসী, তারাই এটার টার্গেট।” অপারেশনে পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “গ্রেপ্তার হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে। পাঁচজন পুলিশ কর্মকর্তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ওইটা আপনাদের মিডিয়ায় চলে আসছে।”

গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে বলেও হুঁশিয়ার করেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, “গাজীপুরে যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, অনেককেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। যাদের আনা হয় নাই, তাদেরও খুব তাড়াতাড়ি নিয়ে আসা হবে এবং তাদের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয়, এই ব্যবস্থা করা হবে।”

শুক্রবার রাত ৯টার দিকে গাজীপুর নগরের ধীরাশ্রম দাক্ষিণখান এলাকায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়ি ভাঙচুরের খবর পেয়ে ঠেকাতে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন। পরে সেখানে বাগবিত-ার এক পর্যায়ে স্থানীয়রা তাদের ওপর হামলা চালায়। ওই হামলার প্রতিবাদে শনিবার দুপুরে জাতীয় নাগরিক কমিটি গাজীপুর জেলা ও মহানগর শাখার আয়োজনে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে নগরের ভাওয়াল রাজবাড়ি সড়ক অবরোধ করেন নেতাকর্মীরা। এ সময় আন্দোলনকারীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে একটি সভা হয়। সংশ্লিষ্ট এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয় সেখানে।

সরকার চায় পুলিশ কোমর সোজা করে দাঁড়াক : স্বরাষ্ট্রসচিব

যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে, অপারেশন ডেভিল হান্ট এর মাধ্যমে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রসচিব নাসিমুল গনি। তিনি বলেন, এই অভিযানে চাঁদাবাজ, মাদক কারবারি নয়, যারা অস্থিতিশীলতার সঙ্গে জড়িত, তাদের ধরা হবে। পরিস্থিতি যতক্ষণ পর্যন্ত না স্বাভাবিক হবে, তত দিন এই অভিযান পরিচালিত হবে বলে জানান নাসিমুল গনি। সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল বেলা ১১টার দিকে পুলিশ সুপারদের (এসপি) নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্রসচিব।

বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রসচিব সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পুলিশ নৈতিকভাবে ভেঙে পড়েছে। তারা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। থানা পুড়ে গেছে। ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারে সারা দেশের সেনাবাহিনী মোতায়েন আছে। আগে তারা দাঁড়িয়ে থাকত। এখন তারা দেশকে অস্থিতিশীলকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবে।’

নাসিমুল গনি বলেন, দেশের স্থিতিশীল অবস্থাকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। এর বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে। আগে যেভাবে অভিযান করা হতো, এবার সেভাবে করা হবে না। এ ক্ষেত্রে মানবাধিকারের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আয়নাঘর যেন আর তৈরি না হয়।

স্বরাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘ডেভিল হান্ট শনিবার শুরু হয়েছে। এ অভিযানের উদ্দেশ্য হচ্ছে, যেসব পকেট থেকে দেশকে আনস্টেবল করা হচ্ছে, সেগুলোকে নিউট্রালাইজ করা। আইনানুগভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সব বাহিনীকে প্রস্তুত করা হয়েছে, ব্রিফ করা হয়েছে এবং কাজ চলমান রয়েছে।’ মানবাধিকার ও পরিবেশ রক্ষায় কীভাবে আইন প্রয়োগ করা যায়, সে জন্য আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। এ কর্মশালায় ১৫০ জন কর্মকর্তা থাকবেন। পুলিশ, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, অ্যাটর্নি জেনারেল, আইজিপি, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, শিল্প উপদেষ্টা ও পরিবেশ উপদেষ্টা উপস্থিত থাকবেন। ওই কর্মশালা থেকে ঠিক করা হবে, কীভাবে মানবাধিকার ও পরিবেশ রক্ষায় আইন বাস্তবায়ন করা হবে। সরকার চায় পুলিশ কোমর সোজা করে দাঁড়াক।

নাসিমুল গনি বলেন, ‘যেসব দেশে বিপ্লব হয়েছে, সেসব দেশ পরাজিত শক্তিকে রাখেনি। আমরা এতটা অমানবিক হতে পারিনি। কেউ কেউ পালিয়ে গেছে, কেউ কেউ দেশে আছে। কিন্তু হঠাৎ করেই অনেকেই অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।’

এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বিদেশে বসে পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ নানা ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন, এ বিষয়ে সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে? জবাবে স্বরাষ্ট্রসচিব বলেন, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ পুলিশকে উসকানি দিচ্ছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ সময় অন্য এক সাংবাদিক জানতে চান, কী দেখছেন? তখন নাসিমুল গনি বলেন, ‘সব কথা বলা যাবে না। তারা দায়িত্ব থাকার সময় পয়সা দিয়ে পুলিশ বাহিনীর কিছু করতে পারেনি। এখন বিদেশে বসে উসকানি দিয়ে কিছু করতে পারবে?’ এ সময় আরেক সাংবাদিক জানতে চান, গতকাল পুলিশের চার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে?

স্বরাষ্ট্রসচিব বলেন, যারা জড়িত থাকবেন, তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। একজন ডিআইজিসহ চারজন এসপি গ্রেপ্তার হয়েছেন। এরকম সামনে আরও গ্রেপ্তার করা হবে।

পুলিশ সুপারদের সঙ্গে কী আলোচনা হলো, তা জানতে চাইলে নাসিমুল গনি বলেন, ‘বৈঠকে পুলিশ সুপাররা নানান ধরনের সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। আমরাও কিছু নির্দেশনা দিয়েছি।’

সম্প্রতি কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছেন, সামনে আর এ ধরনের কোনো গ্রেপ্তার হবে কি না, তা জানতে চাইলে নাসিমুল গনি বলেন, ‘আশা করা যায়।’