DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

জাতীয়

বিবিসি এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থার সাথে সাক্ষাৎকার

জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বরে অন্যথা জুনের মধ্যে ----------------------- ড. ইউনূস

বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি নির্বাচনের আগে কম সংস্কারে সম্মত হয়, তাহলে জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে পারে। অন্যথায় নির্বাচন আগামী বছরের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।

স্টাফ রিপোর্টার
Printed Edition
p1h
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ‘রাইট টু ফ্রিডম’ এর প্রেসিডেন্ট William B Milan এবং এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর Jon Danilowicz-কে জুলাই অভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের আঁকা দেয়াল চিত্রের ওপর প্রকাশিত 'ART OF TRIUMPH' বই উপহার দেন -পিআইডি

বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি নির্বাচনের আগে কম সংস্কারে সম্মত হয়, তাহলে জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে পারে। অন্যথায় নির্বাচন আগামী বছরের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক মানবাধিকার সংস্থা রাইট টু ফ্রিডম-এর সভাপতি রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম এবং নির্বাহী পরিচালক, সাবেক মার্কিন কূটনীতিক জন দানিলোভিচ বৃহস্পতিবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এসময় প্রধান উপদেষ্টা একথা বলেন। সাক্ষাৎকালে সাবেক দুই কূটনীতিক প্রধান উপদেষ্টাকে রাইট টু ফ্রিডম-এর কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করেন এবং বাংলাদেশে সংস্থাটির কার্যক্রম সম্প্রসারণের পরিকল্পনার কথা জানান, যা দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রক্রিয়াকে সহায়তা করার প্রচেষ্টার অংশ।

অধ্যাপক ইউনূস সংস্থাটির কাজের প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশে মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষায় দুই কূটনীতিকের প্রচেষ্টারও প্রশংসা করেন। ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মাইলাম বলেন, অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি উল্লেখ করেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং বাংলাদেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বড় সুযোগ তৈরি করেছে। সাবেক মার্কিন উপ-রাষ্ট্রদূত জন দানিলোভিচ বলেন, বাংলাদেশেকে নিয়ে ভুয়া খবর ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস কূটনীতিকদের জানান, ছয়টি কমিশনের প্রস্তাবিত সংস্কার নিয়ে চলমান সংলাপ শেষ হওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে। ‘জুলাই সনদ আমাদের পথ দেখাবে’ এ কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস আরও জানান, অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার এই সনদের কিছু সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে, আর বাকি অংশ রাজনৈতিক সরকার বাস্তবায়ন করবে। বৈঠকে বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্ক, রোহিঙ্গা সংকট, মিয়ানমার শরণার্থীদের জন্য ক্রমহ্রাসমান সহায়তার প্রভাব, আগের স্বৈরাচারী সরকারের আমলে চুরি হওয়া কয়েক বিলিয়ন মার্কিন ডলার উদ্ধার, প্রধান উপদেষ্টার সার্ক পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা এবং আসন্ন নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ নিয়ে আলোচনা হয়।

এদিকে বৃটিশ বার্তা সংস্থা বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেছেন, ‘যদি সংস্কার কার্যক্রম আমাদের প্রত্যাশিত দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করা যায়, তাহলে ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার প্রক্রিয়া প্রয়োজন হয়, তাহলে আমাদের আরও কয়েক মাস লাগতে পারে’।

বিবিসিকে ড. ইউনূস বলেন,‘আমি কখনো ভাবিনি যে আমি সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেব’। ‘আমি আগে কখনো প্রশাসনিক দায়িত্বে ছিলাম না, তাই সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য আমাকে উপায়গুলো খুঁজে নিতে হয়েছে। যখন বিষয়টি ঠিক হলো, তখন আমরা সংগঠিতভাবে কাজ শুরু করলাম’।

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আমার কাছে দেশের জন্য আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার এবং অর্থনীতি পুনর্গঠন মূল অগ্রাধিকার ছিল। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাসনে থাকা শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে অংশ নেবে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়, যা অধ্যাপক ইউনূস এই বছরের শেষের দিকে আয়োজনের আশা করছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।

ঢাকার সরকারি বাসভবনে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউনূস বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচনে অংশ নিতে চায় কি না, আমি তাদের জন্য এই সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। অধ্যাপক ইউনূস আরো বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ঠিক করবে কারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে।’

তিনি বলেন, ‘শান্তি ও শৃঙ্খলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, পাশাপাশি অর্থনীতি। এটি একটি বিচূর্ণ অর্থনীতি, একটি বিপর্যস্ত অর্থনীতি। এমন মনে হচ্ছে যেন গত ১৬ বছর ধরে কোনো ভয়ঙ্কর টর্নেডো চলছে, আর আমরা এখন সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে টুকরোগুলো তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছি’।

গত গ্রীষ্মে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়া সহিংস বিক্ষোভের কথা উল্লেখ করে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘মানুষকে গুলী করা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে’। প্রায় সাত মাস পরও ঢাকার বাসিন্দারা বলছেন যে আইনশৃঙ্খলা এখনো পুনরুদ্ধার হয়নি এবং পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না এমন এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘উন্নতি আপেক্ষিক বিষয়, ‘যদি আপনি এটি গত বছরের একই সময়ের সাথে তুলনা করেন, তাহলে মোটামুটি সহনীয় মনে হবে’। তিনি বলেন, ‘যা এখন ঘটছে, তা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে আলাদা কিছু নয়’।

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের বর্তমান সমস্যাগুলোর জন্য আগের সরকারকেই দায়ী করেন। তিনি বলেন,আমি বলছি না যে এই ঘটনাগুলো ঘটতেই হবে। আমি বলছি যে, আপনাকে এটা বিবেচনায় নিতে হবে আমরা কোনো আদর্শ দেশ বা আদর্শ শহর হঠাৎ করে তৈরি করিনি। এটি সেই দেশেরই ধারাবাহিকতা, যা আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি, যে দেশ বহু বছর ধরে একইভাবে চলছে।’

শেখ হাসিনার দমনমূলক শাসনে ক্ষতিগ্রস্তরা এখনও ক্ষুব্ধ। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমেছে, ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী দমন-পীড়নের জন্য তাকে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছে। বাংলাদেশের একটি আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে, তবে ভারত এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করছেন, বাংলাদেশ তাদের জন্য নিরাপদ নয়- এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিবিসিকে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এখানে আদালত আছে, আইন আছে, থানা আছে তারা সেখানে গিয়ে অভিযোগ জানাতে পারে’। তিনি বলেন, ‘আপনি কেবল বিবিসির সাংবাদিকের কাছে অভিযোগ করতে যাবেন না, বরং থানায় যান এবং দেখুন আইন কীভাবে চলছে।’

ট্রাম্প প্রশাসনের বৈদেশিক সাহায্য কমানো এবং কার্যত মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএইড) অর্থায়নে পরিচালিত প্রায় সব প্রকল্প বন্ধ করার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ওপর প্রভাব ফেলবে। এ বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘এটি তাদের সিদ্ধান্ত’।