প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পতিত শক্তি গ-গোল লাগিয়ে নির্বাচনের আয়োজনকে ভ-ুল করার চেষ্টা করছে। এই অপচেষ্টাকে প্রতিহত করতে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। গতকাল শনিবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মতবিনিময়কালে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অভ্যুত্থানের সব শক্তি মিলে একটি সুন্দর নির্বাচন করতে না পারলে এই মস্তবড় সুযোগ আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, 'পরাজিত শক্তি যখনই সুযোগ পাচ্ছে তখনই নানা রকম গ-গোল সৃষ্টি করছে। এসব করে তারা দেশের স্বাভাবিক অগ্রযাত্রাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। তিনি আরও বলেন, 'যখনই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আমরা অগ্রসর হচ্ছি, তখনই নানা ষড়যন্ত্র সামনে আসছে।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, কোনো ষড়যন্ত্র করেই গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। কারণ, ফ্যাসিবাদ প্রশ্নে সবগুলো গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য স্পষ্ট।
সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি। উপস্থিত রাজনৈতিক নেতারাও প্রধান উপদেষ্টাকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। বৈঠকে জাতীয় গণফ্রন্টের আমিনুল হক টিপু বিশ্বাস, ১২ দলীয় জোটের মোস্তফা জামাল হায়দার, নেজামে ইসলাম পার্টির মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ জাসদের ড. মুশতাক হোসেন, ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের ববি হাজ্জাজ, ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজি, ভাসানী জনশক্তি পার্টির রফিকুল ইসলাম বাবলু, বাংলাদেশ লেবার পার্টির ডা: মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (মার্কসবাদী) মাসুদ রানা এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের শুরুতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনার ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে বৈঠকে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক নেতারা বলেছেন, আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন। ১২ দলীয় জোটের সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার একথা জানান।
প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠক শেষে মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, 'আমরা সুদীর্ঘক্ষণ ধরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অতি গুরুত্বপূর্ণ কতগুলো বিষয়ে আলোচনা করেছি। আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করতে চাই, প্রধান উপদেষ্টা ক্যাটাগরিকালি বলেছেন, আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে নির্বাচনের একটা সুনির্দিষ্ট সময় তিনি ঘোষণা করবেন। তিনি বলেন, 'এরচেয়ে আনন্দের বার্তা আর কিছু হতে পারে না। আমি মনে করি আজকের আমাদের আলোচনার সবচাইতে ফলপ্রসূ বিষয় এটাই।
এর আগে এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘আমরা অনতিবিলম্বে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার জন্য বলেছি। যদি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন, দেখবেন অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সেইসঙ্গে বলেছি, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের যারা সচিবালয়, বিচারালয়, পুলিশ প্রশাসন, ব্যাংক ও অন্যান্য জায়গায় আছে তাদের বিতাড়িত করতে হবে এবং যোগ্য মানুষকে সেইসব জায়গায় বসাতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা বলেছি, মাঠপর্যায়ে সব ডিসি-এসপিদের চেক করতে হবে এবং ইন্যাক্টিভ অ্যাডভাইজারদের বাদ দিয়ে একটিভ পার্সনদের নেন।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ বলেন, 'আমরা জানিয়েছি, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সবাই ঐক্যবদ্ধ আছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারকে যদি কোনো মৌলিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তাহলে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নিয়েতে হবে। যেমন: হিউম্যান করিডরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিসের ব্যাপারে নিয়েছে। এগুলো আসলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজের মধ্যে পড়ে না। এগুলো নির্বাচিত সরকার করবে।'
তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া হলে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আমি একটা সুন্দর নির্বাচন করতে চাই এবং নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন দিতে চাই; কিন্তু পতিত স্বৈরাচার বিভিন্নভাবে এটাকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করছে। আমরা বলেছি, কঠোর হস্তে দমন না করলে পতিত স্বৈরাচার বিভিন্ন অজুহাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।