ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেশে ফিরে যাবে বিনিয়োগ সামিটে অংশগ্রহণকারীরা এমনটাই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।

মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিনিয়োগ সামিটের দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রমের উপর এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান তিনি। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

বিনিয়োগ সামিটের কার্যক্রমের বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, আজ সকালে ৪৫ জনের একটি প্রতিনিধি দল নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানিজ ইপিজেডে পরিদর্শন করেছেন। তারা পরিদর্শন শেষে খুব সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, বাংলাদেশ সঠিক পথেই হাঁটছে।

তারা আরও বলেছেন, জাপানিজ এ ইপিজেড এমন একটি ইপিজেড, যেখানে প্রায় সবকিছু রেডি আছে। এখনই কোন বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করতে চাইলে বিনিয়োগ করতে পারবে। এই ৪৫ জনের মধ্যে একজন জাপানিজ ইপিজেডে বিনিয়োগ করার জন্য এমওইউ স্বাক্ষর করেছেন। তবে আমরা এমন প্রত্যাশা করি না যে বিনিয়োগকারীরা এখনই বিনিয়োগ করবে। আমরা আশা করছি, তারা বাংলাদেশ বিনিয়োগ পরিবেশ ভালো একটি এমন ধারণা নিয়ে ফিরে যাবেন। এরপর তারা গ্রাউন্ড লেভেলে কাজ করার পর বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিবেন। আমাদের কাজ হলো তাদের সঙ্গে যোগাযোগটা অব্যাহত রাখা।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘বিনিয়োগ সামিটে আমরা এই ন্যারেটিভ তৈরি করে চাচ্ছি না যে, বিনিয়োগ সম্মেলনে এতো এতো ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে, এতো কর্মস্থান তৈরি হবে। বরং আমরা চাচ্ছি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে, প্রশ্ন করে তারা জানুক বাংলাদেশে বিনিয়োগের অপারচুনিটি কোথায়, চ্যালেঞ্জগুলো কি এবং তা মোকাবেলায় সরকার কি সুবিধা দিচ্ছে। এরপর আমরা তাদেরকে ক্যাটাগরিক্যালি ট্যাগ করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখবো। তারপরেই হয়ত তারা তাদের অন্যান্য সহযোগীর সঙ্গে কথা বলে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিবেন।’

আমরা তাদের বলেছি, অতীতে যে সমস্যা ছিল এখন এসব থাকবে না। সরকারের উপরের কর্তা ব্যক্তিরা যা বলবেন, নিচের লেভেল লোকজনের কাছ থেকেও সে ধরনের ব্যবহার পাবেন। আন্তঃমন্ত্রণালয় সংক্রন্ত যে সমস্যা সেগুলোও থাকবে না।

তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দিয়েছেন প্রতি মাসের ১০ তারিখে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) কোরিয়ান ও চীনা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রাতরাশ সভার আয়োজন করবে। এসব সভা বিডা আয়োজন করলেও তিনি কিছু সভায় ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত থেকে বিনিয়োগকারীদের নানা সমস্যা ও মতামত শুনবেন।’

তিনি বলেন, ‘কোরিয়ার ৩০ জনের একটি প্রতিনিধি দল কোরিয়া ইপিজেড, চট্টগ্রাম ইপিজেড পরিদর্শন শেষে টেক্সটাইল ও ম্যানুফেকচারিং খাতে বিনিয়োগের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। এভাবে চাইনিজ একটি প্রতিনিধি দল বিনিয়োগের কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। আমরা সেগুলো মিটআপ করা চেষ্টা করছি।’

এছাড়া নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) বাংলাদেশে ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। মাল্টি কারেন্সির এ বিনিয়োগ সরকারি খাত ছাড়াও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যদিও এনডিবি ইতোমধ্যে ওয়াসাতে ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। তারা আগামীতে আরও বিনিয়োগ বাড়াবে। তবে এখানে সুদের হারটা একটু বেশি হবে বলে জানান বিডা চেয়ারম্যান।

তিনি আরও বলেন, ‘আজ মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সাথে একটি ৫৪তম দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সঙ্গে ‘আর্টেমিস অ্যাকর্ডস’-এ স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। এই চুক্তির মাধ্যমে মহাকাশ গবেষণায় সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো বলে মনে করছে সরকার। এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশ তার মহাকাশ গবেষণা কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে সক্ষম হবে। তবে এর সুফল হয়ত এখনই পাওয়া যাবে না, ২০ থেকে ২৫ বছর সময় লেগে যাবে। আগামীতে আমাদের জেনারেশনরা শুধু এই পৃথিবিতে থাকবে না। তারা বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহে যেতে চাইবে। তখন অ্যাস্ট্রোনট পাঠানোর দরকার হবে। সেই জন্য এ ধরনের চুক্তি দরকার।’

এ ছাড়া বিশ্ব ব্যাংক আমাদের হাউজিং, ডিজিটাল ফাইন্যান্সিং, পেইন্টস এবং টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট খাতে সাকরির সুযোগ সৃষ্টির জন্য বিনিয়োগ করবে। আর আমাদের যাবতীয় প্রচেষ্টা জব ক্রিয়েশনের জন্য।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ডুয়িং বিজনেস কষ্টের ইন্ডেক্স থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এটি বিশ্বব্যাংক অনেক আগেই সানসেট ঘোষণা করেছে। এটা তারা আর ফলো করে না। এর মধ্যে আমাদেরও অনেক উন্নয়ন হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা আমাদের বলেছেন এখানে ইউটিলিটি একটি বড় সমস্যা। আমরা তাদের বলেছি, আমরা শিগগিরই এনার্জি গাইড লাইন তৈরি করবো। ইতোমধ্যে জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা দ্রুত তাদের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করবে। এরপর স্টেক হোল্ডারদের মতামত নিয়ে এই জ্বালানি নীতিমালা ঘোষণা করা হবে।’ সূত্র: বাসস