আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী (আনসার-ভিডিপি) সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

এবারের নির্বাচনে প্রায় ৬ লাখ প্রশিক্ষিত আনসার সদস্য মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন, যারা ভোটকেন্দ্রে ‘প্রথম প্রতিরক্ষা স্তর’ হিসেবে কাজ করবেন। তারা অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করবেন বলে জানিয়েছেন বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর আনসার ও ভিডিপির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব তথ্য জানান।

ডিজি বলেন, নির্বাচনকালে দায়িত্ব পালনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রথমবারের মতো আনসার বাহিনী ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেম চালু করছে। এই সিস্টেমের মাধ্যমে প্রতিটি সদস্যের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, কিউআর কোড ও কর্মতথ্য সফটওয়্যারে সংরক্ষিত থাকবে।

তিনি বলেন, “এই প্রযুক্তির মাধ্যমে আনসার সদস্যদের উপস্থিতি, আচরণ ও কর্মদক্ষতা রিয়েল টাইমে পর্যবেক্ষণ করা যাবে। এতে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনের নিশ্চয়তা আরও জোরদার হবে।”

মহাপরিচালক জানান, ভোটের আগে প্রতিটি সদস্যকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। গত বছরের ৬ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে লিডারশিপ ট্রেনিং, অ্যাডভান্স ট্রেনিং ও ইয়ুথ লিডারশিপ ট্রেনিং অন্তর্ভুক্ত।

তফসিল ঘোষণার পর আরও দুই থেকে তিন দিনের রিফ্রেশার কোর্স হবে, যেখানে আচরণবিধি, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা, ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং কার্যকর যোগাযোগ কৌশল শেখানো হবে।

তিনি বলেন, আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ পেলে দ্রুত তদন্ত ও শাস্তির ব্যবস্থা থাকবে। এখন থেকে আনসার বাহিনী ব্যক্তি নয়, সিস্টেম নির্ভরভাবে কাজ করবে।

মহাপরিচালক জানান, বাহিনীতে তরুণ ও কর্মক্ষম সদস্য বাড়াতে বয়সসীমা কমিয়ে ১৮ থেকে ২৫ বছর করা হয়েছে। পাশাপাশি নারী সদস্যদের অংশগ্রহণ এখন প্রায় ৫০ শতাংশ, যা নেতৃত্বে ভারসাম্য আনতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

প্রতিটি উপজেলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে একজন নারী ও একজন পুরুষ প্রশিক্ষক রাখা হয়েছে।

নির্বাচনে আনসারের সশস্ত্র ও নিরস্ত্র উভয় বাহিনী মোতায়েন থাকবে। তাদের জন্য নতুন ইউনিফর্ম, জ্যাকেট ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হচ্ছে।

ডিজি আরও বলেন, “ভোটের দিন আনসার সদস্যরা জনগণের নিরাপত্তা ও আস্থার প্রতীক হয়ে কাজ করবেন। তারা যেন নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেন, সে লক্ষ্যে আমরা কঠোরভাবে তদারকি করছি।”

মহাপরিচালক জানান, আনসার বাহিনী শুধু নির্বাচন নয়, উন্নয়ন, দুর্যোগ মোকাবিলা ও সামাজিক সচেতনতা কার্যক্রমেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

বর্তমানে প্রায় ৬০ লাখ আনসার সদস্যের মধ্যে ৫৯ লাখই স্বেচ্ছাসেবক, যাদের জীবনমান উন্নয়নে চালু হয়েছে ‘সঞ্জীবন প্রকল্প’। এর আওতায় সদস্যরা পাচ্ছেন ক্ষুদ্রঋণ, উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ, এবং ড্রাইভিং, নার্সিং, ফ্রিল্যান্সিংসহ বৃত্তিমূলক দক্ষতা উন্নয়ন সুবিধা।

ডিজি সাজ্জাদ মাহমুদ বলেন, আনসার বাহিনী এখন কেবল একটি নিরাপত্তা সংস্থা নয়, এটি জনগণের সঙ্গে যুক্ত একটি সামাজিক শক্তি—যারা দেশের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে নিবেদিত।