প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সামরিক বাহিনী, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা চেয়ে বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখরভাবে আয়োজন করতে হবে। সশস্ত্র বাহিনী মানুষের পক্ষে থাকায় বিগত শাসনের অবসান দ্রুত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

গতকাল বুধবার মিরপুর সেনানিবাসে ডিএসসিএসসি কমপ্লেক্সে সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি) কোর্স ২০২৫-এর সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এখন নির্বাচনের সময়। আমরা প্রস্তুত, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের সামরিক বাহিনী, পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা প্রয়োজন। তিনি বলেন, তবে বিগত শাসনের এই অবসান সব সমস্যার সমাধান না। এটি নতুন আরও সমস্যা সৃষ্টি করে স্থিতিশীল হতে। কিন্তু বাংলাদেশ সৌভাগ্যবান যে তার দেশের সশস্ত্র বাহিনী দাঁড়িয়েছে। ফলে আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পেরেছি। জাতির সব আশা আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নের কাজ করা গেছে। কারণ তাদের সশস্ত্র বাহিনী তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।

ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের এই উত্তরণের মুহূর্তে যেটাকে আমরা বারবার বলছি, একটি নতুন বাংলাদেশে রূপান্তর; এ সময় আপনাদের এখানে অবস্থান খুবই গৌরবের। আমরা যা যা করছি সেটা খোলা চোখে দৃশ্যমান। দেশের কী অবস্থা ছিল সেটা সম্পর্কে আপনারা অবগত আছেন, তরুণরা বিপ্লবী হয়েছিল, রক্ত দিয়েছে, বুলেটের বিরুদ্ধে বুক পেতে দিয়েছে, এর ফলে ওই শাসনামলের অবসান হয়েছে এবং নতুন একটা দেশের সূচনা হয়েছে। এটি শুধু বাংলাদেশের মানুষের আকাক্সক্ষা নয়, এটি বৈশ্বিক আকাক্সক্ষা। তিনি আরও বলেন, এটি একটি বড় প্রয়াস। অভ্যুত্থান থেকে নির্বাচনের পথে যাত্রা। এটি হবে শান্তিপূর্ণ, উৎসবমুখর, আনন্দ ও মিলনের সময়। মানুষ তাদের আশা ও আকাক্সক্ষা প্রকাশ করতে পারবে।

তিনি বলেন, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বুঝতে পেরেছে, সে যেকোনও কিছু করার জন্য স্বাধীন, কিন্তু একজন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য চাইলেই সব কিছু করতে পারে না। তারা একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী, যেখানে সর্বোচ্চ শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়। অভ্যুত্থানের মতো পরিস্থিতিতে একজন সেনা সদস্য কী করতে পারে! আমি নিশ্চিত যে এ নিয়ে বিতর্ক আলোচনা হয়েছে। সেনা সদস্যরা এমন পরিস্থিতিতে করবে কী- ছাত্রদের সঙ্গে যুক্ত হবে নাকি সরকারের। এই প্রশ্নে বিভক্ত হয়ে পড়ার কথা যে কারও পক্ষে দাঁড়াবে। বাংলাদেশ একটি সৌভাগ্যবান দেশ যে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী তাদের প্রধানদের নেতৃত্বে দেশের মানুষের পক্ষে প্রতিশ্রুত ছিল। যার কারণে বিগত শাসনের অবসান দ্রুত হয়েছে।

সংস্কারমূলক কর্মসূচির প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের অঙ্গীকার প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, যদি আমরা অতীতে ফিরে যেতাম, সকল ত্যাগ বৃথা যেত। আমাদের স্বপ্নের দেশ গড়ে তুলতে হবে। এই ছিল সংস্কারের সংকল্প। সংস্কার একটি বিষয়, কিন্তু তা ঠিকমতো সম্পন্ন করতে হবে, যাতে আমরা আর কোনো ভুল না করিÑ এটিও জানা জরুরি।

গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত অপরাধের বিচার প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যারা আমাদের বিরুদ্ধে এ ভয়াবহ অপরাধ করেছেন, তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ডিএসসিএসসি কোর্সে অংশগ্রহণকারী বিদেশী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের শক্তিশালী বৈশ্বিক প্রতিরক্ষা সম্পর্কের উজ্জ্বল প্রতিফলন। আশা করি, ভবিষ্যতেও স্টাফ কলেজ ও বাংলাদেশের সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস ডিএসসিএসসি কোর্সে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, দেশের একতা এবং সশস্ত্র বাহিনীর সমর্থনের কারণে দ্রুত সংকট উত্তরণ এবং জাতিকে স্থিতিশীল করা সম্ভব হয়েছে। একতার কারণে আমরা দেশের সকল আশা ও আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে পেরেছি। কারণ সশস্ত্র বাহিনী জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে।

প্রসঙ্গত, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এদিন মিরপুর সেনানিবাসে ডিএসসিএসসি কোর্স-২০২৫-এর গ্র্যাজুয়েশন সনদ বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি প্রশিক্ষণ সম্পন্নকারী কর্মকর্তাদের হাতে সনদ তুলে দেন।

প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে সামরিক শিক্ষায় উৎকর্ষের স্তম্ভ হিসেবে ডিএসসিএসসির ভূমিকার কথা উল্লেখ এবং নেতৃত্ব গঠনে প্রতিষ্ঠানের প্রতি জাতির আস্থা পুনর্ব্যক্ত করেন। গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্নকারী অফিসারদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা তাদেরকে এই কোর্সে অর্জিত জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও সংকল্প দেশের অগ্রগতিতে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন। পাশাপাশি তিনি শীর্ষস্থানীয় সামরিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ডিএসসিএসসির আন্তর্জাতিক সুনামেরও প্রশংসা করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল চৌধুরী মোহাম্মদ আজিজুল হক হাজারী প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দীর্ঘ এক বছর কঠোর প্রশিক্ষণে অর্জিত জ্ঞান নিজ নিজ বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করবে। তিনি কোর্সের সফলতা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বাহিনী সদর দপ্তর, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং সকল অংশীজনের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

ডিএসসিএসসি কোর্স- ২০২৫-এ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭০ জন, নৌবাহিনীর ৪৫ জন এবং বিমান বাহিনীর ৩৬ জন কর্মকর্তা গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের ৩ জন কর্মকর্তা এবং চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, জর্ডান, কেনিয়া, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, লাইবেরিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মালি, নেপাল, নাইজেরিয়া, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, সিয়েরা লিওন, শ্রীলঙ্কা, তানজানিয়া, তুরস্ক ও উগান্ডা থেকে আগত ৫৮ জন কর্মকর্তা অংশ নেন। সব মিলিয়ে এ বছর মোট ৩১১ জন প্রশিক্ষণার্থী গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। এতে বাংলাদেশ পুলিশের একজনসহ মোট ১৪ জন নারী কর্মকর্তা গ্র্যাজুয়েশন অর্জন করেন, যা নারীর অন্তর্ভুক্তি ও ক্ষমতায়নে প্রতিষ্ঠানের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।

সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উচ্চতর দায়িত্ব ও নেতৃত্ব প্রদানের জন্য প্রস্তুত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ৫,৩২৯ জন কর্মকর্তা, ২০ জন পুলিশ কর্মকর্তা এবং বন্ধুপ্রতিম ৪৫ দেশের ১,৪৬৫ জন বিদেশী সামরিক কর্মকর্তাসহ মোট ৬,৮১৪ জন অফিসার এখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।

অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যগণ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা (চাকরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত), বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও অধ্যাপকবৃন্দ এবং বিভিন্ন দেশের মিলিটারি বা ডিফেন্স অ্যাটাচি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

আইএসপিআরের তথ্যমতে, ডিএসসিএসসি কোর্স ২০২৫-এ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭০ জন, নৌবাহিনীর ৪৫ জন এবং বিমান বাহিনীর ৩৬ জন কর্মকর্তা গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের ৩ জন কর্মকর্তা এবং চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, জর্ডান, কেনিয়া, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, লাইবেরিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মালি, নেপাল, নাইজেরিয়া, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, সিয়েরা লিওন, শ্রীলঙ্কা, তানজানিয়া, তুরস্ক ও উগান্ডা থেকে আগত ৫৮ জন কর্মকর্তা অংশ নেন। সব মিলিয়ে এ বছর মোট ৩১১ জন প্রশিক্ষণার্থী গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। এতে বাংলাদেশ পুলিশের একজন নারী কর্মকর্তাসহ মোট ১৪ জন মহিলা কর্মকর্তা গ্র্যাজুয়েশন অর্জন করেন, যা নারীর অন্তর্ভুক্তি ও ক্ষমতায়নে প্রতিষ্ঠানের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।

সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উচ্চতর দায়িত্ব ও নেতৃত্ব প্রদানের জন্য প্রস্তুত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ৫,৩২৯ জন কর্মকর্তা, ২০ জন পুলিশ কর্মকর্তা এবং বন্ধুপ্রতিম ৪৫ দেশের ১,৪৬৫ জন বিদেশী সামরিক কর্মকর্তাÑমোট ৬,৮১৪ জন অফিসার এখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।