মিটারের নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা আদায় করলে জরিমানা বা কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। তবে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বিআরটিএ। চালকদের আন্দোলনের মুখে সিদ্ধান্তটি বাতিল করেছে সংস্থাটি।

রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।

তিনি জানান, ৪ স্ট্রোক থ্রি-হুইলার যান সম্পর্কিত বিআরটিএ কর্তৃক ইস্যুকৃত সাম্প্রতিক নির্দেশনাটি আজ বাতিল করা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করা হলো এবং অবরোধ প্রত্যাহার করে যান চলাচলে কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হলো।

এর আগে সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সিএনজি চালকদের অবরোধের কারণে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। মিটারের মামলা ইস্যুতে সিএনজি চালকরা সড়ক অবরোধ করে যান চলাচলে বাধা দিচ্ছেন।

রাজধানীর রামপুরা, মিরপুর ১৪ ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট অবরোধের খবর পাওয়া যায়। তবে এ প্রতিবেদন লেখার সময় রামপুরা এলাকার সড়ক ছেড়ে দিয়েছে সিএনজি চালকরা, সেখানে যান চলাচল স্বাভাবিক।

সরেজমিনে দেখা যায়, অবরোধের কারণে রাজধানীজুড়ে প্রচণ্ড যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে অফিসগামী মানুষ, শিক্ষার্থীসহ জনসাধারণ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। অনেকেই গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি করছেন।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, মিটারের ভাড়া বৃদ্ধি এবং মিটারে না চললে জরিমানার আইন বাতিল করতে হবে। বিআরটিএ এ সিদ্ধান্ত বাতিল না করা পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলতে থাকবে।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি মিটারের নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা আদায় করলে চালকদের জরিমানা বা কারাদণ্ডের নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)।

নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়, সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর ৩৫(৩) ধারা অনুযায়ী রুট পারমিটপ্রাপ্ত অটোরিকশাগুলো যেকোনও গন্তব্যে যাত্রী নিতে বাধ্য। চালকরা মিটারের চেয়ে বেশি ভাড়া দাবি বা আদায় করতে পারবেন না। যদি কেউ এই নিয়ম লঙ্ঘন করেন, তাহলে আইনের ৮১ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, ছয় মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। এ ছাড়া চালকের লাইসেন্স থেকে এক পয়েন্ট কেটে নেওয়ার বিধান রয়েছে।

বিআরটিএ’র তথ্য বলছে, বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় নিবন্ধিত অটোরিকশা রয়েছে ২০ হাজার ৮৯৪টি। আর ২০১৫ থেকে ২০২৪ সালের (১০ বছর) মধ্যে সবচেয়ে বেশি অটোরিকশা নিবন্ধন পেয়েছে ২০১৯ সালে। সে বছর নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে ৬ হাজার ৮৩৯টি অটোরিকশা। তার আগের বছর ২০১৮ সালে ৫ হাজার ৬৩৭টি অটোরিকশা নিবন্ধন দেওয়া হয়।

ধর্মঘটের ডাক দিয়ে বেশ কিছু দাবি করেছেন সিএনজি-চালিত অটোরিকশা পরিবহন কর্মচারীরা। দাবিগুলো হলো-

* সিএনজি অটোরিকশায় মিটারে প্রদর্শিত ভাড়ার অতিরিক্ত অর্থ আদায়ে চালকের ৬ মাসের কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, বিআরটিএ কর্তৃক নির্দেশনা অবিলম্বে প্রত্যাহার।

* সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ হইতে শ্রমিক স্বার্থবিরোধী অযৌক্তিক ধারাসমূহ বাতিল/সংস্কার করা।

* বিআরটিএ-তে ঘাপটি মেরে থাকা হাসিনার দোরসদের প্রত্যাহারের দাবি।

* ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদের পেশকৃত ১৩ দফা মেনে নেওয়া।