কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটের চাকা উড্ডয়নের পরপরই নিচে খুলে পড়ে যায়। শিশুসহ ৭১ জন যাত্রী ছিল ফ্লাইটটিতে। পাইলটের দক্ষতায় পরে সেটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করতে সক্ষম হয়।
এর আগে শুক্রবার দুপুর ১টা ২০ মিনিটে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় বিজি ৪৩৬ (ড্যাশ ৮-৪০০) ফ্লাইটটি।
কক্সবাজার বিমানবন্দর ছাড়ার সময় এক চাকা (বাম পাশের ল্যান্ডিং গিয়ার) খুলে যায় বিমানটির।
তবে পাইলট ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহ অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ফ্লাইটটি ঢাকায় এনে অবতরণ করেন। তবে অবতরণের আগের শেষ তিন মিনিট ছিল অত্যন্ত উত্তেজনাকর।
পাইলট ও এটিসির কথোপকথনের রেকর্ড গণমাধ্যমের হাতে এসেছে।
বিমানবন্দরের পাশে শুক্রবার দুপুর ২টা ১৯ মিনিটে যখন বিমানটিকে দেখা যায় তখন পাইলটের সঙ্গে অবতরণের বিষয়ে যোগাযোগ করছিল ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) রুম।
ফ্লাইটটিকে দেখামাত্র এটিসি থেকে পাইলটকে জিজ্ঞেস করা হয়, আপনি কী এই অবস্থায় রানওয়ে ১৪ দিয়ে অবতরণের বিষয়টি কনফার্ম করছেন?
পাইলট জামিল বলেন, ‘অ্যাফার্ম (হ্যাঁ নিশ্চিত করছি)।’
পাইলটের কনফার্মেশন পাওয়ার পর এটিসি থেকে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পাইলটকে জানানো হয়, ‘রানওয়ে ১৪ অবতরণের জন্য প্রস্তুত আছে। আপনি অবতরণ করতে পারেন।’
এটিসির সর্বশেষ বার্তা পাওয়ার ৯০ সেকেন্ড পর দুপুর ২টা ২২ মিনিটে বিমানের ফ্লাইটটি ঢাকায় অবতরণ করে।
একদিকে যখন পাইলট এবং এটিসির কথোপকথন চলছিল রানওয়ের চারপাশে অবস্থান নিয়েছিল ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট।
বিমানের ফ্লাইটটি পুরোপুরি থামার পর এটিসিকে পাইলট বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ আমরা নিরাপদে অবতরণ করেছি। কন্ট্রোল টাওয়ারকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনাদের সহযোগিতা ছিল প্রশংসনীয়।’
টাওয়ার থেকে বলা হয়, আপনি কী কনফার্ম করছেন আপনি নিরাপদে অবতরণ করেছেন?
পাইলট জবাব দেন, ‘হ্যাঁ, আমি আবারও নিশ্চিত করছি।’
টাওয়ার থেকে আবার জিজ্ঞেস করা হয়, ‘আপনি কী কনফার্ম করছেন সবকিছু একেবারে স্বাভাবিক রয়েছে?’
পাইলট আবারও বলেন, ‘এভ্রিথিং ইজ অ্যাবসোলুটলি ফাইন (সবকিছু ঠিক আছে)।’
টাওয়ার বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ধন্যবাদ আপনাকে।’
পাইলট বলেন, ‘আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ কক্সবাজার এবং চট্টগ্রামের এটিসিকে আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাবেন।’
এটিসি থেকে পাইলটকে বলা হয়, ‘আপনার বার্তাটি কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে পৌঁছে দেওয়া হবে। আপনি ট্যাক্সিওয়েতে অবস্থান করুন।’
ফ্লাইটটি নিরাপদে অবতরণের পর রানওয়ের চারপাশে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ অধিকাংশই ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে তালি দিতে থাকেন।
ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা জানান, এ ধরনের ক্ষেত্রে সাধারণত পাইলট বিমানবন্দরে চারপাশে চক্কর দেয় এবং কিছুটা তেল পুড়িয়ে অবতরণের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে বিমানের পাইলট তেল না পুড়িয়ে প্রথম চেষ্টায় অবতরণ করতে চান। এতে আগুন লাগার কিছুটা সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই ফায়ার সার্ভিস সেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিল।
ফ্লাইটটি সম্পর্কে বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ জানায়, বিমানের ফ্লাইটের পাইলট-ইন-কমান্ড ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহ ও তার ক্রুদের দক্ষতা ও বিচক্ষণতায় ফ্লাইটটি অবতরণ করে। ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহর রয়েছে ৮০০০ ঘণ্টা ফ্লাইং অভিজ্ঞতা।
অবতরণের পরে ওই ফ্লাইটের যাত্রীরা পাইলট, ক্রুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ইমারজেন্সি ল্যান্ডিংয়ের ব্যবস্থাপনার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।