নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। নির্বাচন নিয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে এবং তা অনুমোদনের জন্য কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।

গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন সচিব।

এ সময় সীমানা নির্ধারণ ও ভোটার তালিকা হালনাগাদ প্রসঙ্গে সচিব বলেন, বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সীমানা নিয়ে আসা ৮২টি আপত্তির শুনানি আগামী ২৪ আগস্ট থেকে একটানা চারদিন অনুষ্ঠিত হবে। শুনানি শেষে দ্রুত এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এনআইডি সংশোধন প্রসঙ্গে সচিব বলেন, এনআইডি সংশোধনের জন্য দেওয়া যে আবেদনগুলো প্রাথমিকভাবে বাতিল হয়েছে সেগুলো পুনর্বিবেচনার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে সারা দেশে এ ধরনের আপিলের সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। ইসি মনে করে, যদি ডাটা এন্ট্রি আরও নিখুঁত হয়, তাহলে আপত্তির সংখ্যা আরও কমে আসবে।

ভোটার নিবন্ধন ফরম-২ স্ক্যানের বিষয়ে আখতার আহমেদ জানান, ২০০৮ সাল থেকে যে ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তার অনেকগুলো ফর্ম এখনও স্ক্যান করা বাকি। সেই ফর্মগুলো স্ক্যান করে কমিশনের পোর্টালে আপলোড করার কাজ শুরু হয়েছে। এর ফলে তথ্যভান্ডার আরও সমৃদ্ধ হবে।

ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কমিশনে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের নীতিমালা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়বে না বরং বিদ্যমান কেন্দ্রগুলোতেই ভোটারদের উপস্থিতি সমন্বয় করা হবে। বর্তমানে প্রতি ৫০০ ভোটারের জন্য একটি বুথ আছে, যা ভবিষ্যতে ৬০০ করা হতে পারে।

রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের বিষয়ে সচিব জানান, যে ২২টি রাজনৈতিক দলের আবেদন মাঠপর্যায়ে যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছিল, তাদের কাজ চলছে। যাদের আবেদন বাতিল বা বিবেচনাযোগ্য মনে হয়নি, তাদের সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। বাতিল হওয়ার পেছনে কোন কোন শর্ত পূরণ হয়নি, তা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও আগাম প্রস্তুতি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো উদ্বেগ নেই বলে কমিশন জানিয়েছে। সবার নিজস্ব কাজ গুছিয়ে নিলেই হবে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত। মাঠ প্রশাসন নিজ নিজ এলাকায় কাজ করছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের দায়িত্ব পালন করছে। কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কাজের ক্ষেত্রে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, যাতে শেষ মুহূর্তে কোনো ধরনের হুড়োহুড়ি বা সমস্যা না হয়।

নির্বাচনের প্রস্তুতি জানতে ইসিতে আইআরআই

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি জানতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করলেন ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই)-এর প্রতিনিধিরা।

গতকাল সোমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিরা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন আইআরআই-এর ডিরেক্টর স্টিফেন সীমা, ডেপুটি ডিরেক্টর ম্যাথ্যু কার্টার, সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার অমিতাভ ঘোষ।বৈঠকের পর আইআরআই-এর ডিরেক্টর স্টিফেন সীমা সাংবাদিকদের বলেন, ৯০ সাল থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করছে আইআরআই। বৈঠকে আমরা কী করতে পারি তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। ইসি তাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানিয়েছে।

তিনি বলেন, প্রাক নির্বাচনী পরিস্থিতি মূল্যায়ন নিয়ে ইসির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে আমরা সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে কোনো সুপারিশ করিনি। আমরা সরাসরি নির্বাচন কমিশনকে কোনো সহায়তাও দিই না। তবে আমরা দলগুলোকে গণতন্ত্র ও সুশাসন নিয়ে কারিগরি সহায়তা দিয়ে থাকি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি। দলগুলোর মধ্যে আন্তঃসংলাপ, নীতি নির্ধারণী সংলাপ, এমন নানা ধরনের কাজ করেছি।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কারিগরি সহায়তা অব্যাহত রাখব। আমাদের ঢাকা সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছেÑ কীভাবে দলগুলোকে সহায়তা করা যায়। এ সহায়তা অব্যাহত থাকবে। এজন্য আমরা কমিশনের সঙ্গেও আলোচনা করেছি।