গাজায় এখন রক্ত, কান্না আর ধ্বংসস্তূপ। একটি সভ্যতার শিশুরা মায়ের কোলে আর নেই, বাবারা সন্তানের লাশ কোলে করে দাঁড়িয়ে আছে ধ্বংসস্তূপের পাশে। নিঃশব্দে কাঁদছে আকাশ—আর বিশ্ব সভ্যতা নির্বিকার! এই নির্লজ্জ নীরবতা ভেঙে গাজীপুরবাসী পথে নেমেছে—কণ্ঠ উঁচু করে বলেছে, মানবতার নামে এই হত্যাযজ্ঞ আমরা মানি না, মানবতা আজ যদি নীরব থাকে, তবে ইতিহাস তাকে ক্ষমা করবে না।

সোমবার (৭ এপ্রিল) বিকেলে গাজীপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর গাজীপুর মহানগর শাখার উদ্যোগে আয়োজন করা হয় এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল। এতে অংশ নেন জামায়াতের স্থানীয় ও মহানগর পর্যায়ের নেতা-কর্মীসহ হাজারো জনতা। শহরের প্রধান সড়কগুলো গর্জে ওঠে একটাই স্লোগানে—“গাজায় হত্যার বিচার চাই, জালিমদের রক্ষা চলবে না! একইদিনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও সাধারণ ছাত্রজনতাও নগরীর বিভিন্নস্থানে একাত্মভাবে বিক্ষোভে অংশ নেয়।

বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন গাজীপুর মহানগর জামায়াতের আমীর অধ্যাপক মুহা. জামাল উদ্দীন। উপস্থিত ছিলেন মহানগর নায়েবে আমীর মুহাম্মদ খায়রুল হাসান, মুহাম্মদ হোসেন আলী, সেক্রেটারি আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক, সহকারী সেক্রেটারি মুহা. আজহারুল ইসলাম মোল্লা, মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন, ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি সালাহ উদ্দিন আইয়ুবী, নজরুল ইসলাম, আবুসিনা মামুন, এখলাছ উদ্দিন, নেয়ামত উল্লাহ সাকেরসহ শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা হাতে ব্যানার ও প্ল্যাকার্ডে লিখেছেন—“ফিলিস্তিনের শিশুদের রক্ষা করো “ইসরায়েলের দখলদারিত্ব বন্ধ করো, “মানবতা জাগো,। তারা ইসরায়েলের নৃশংসতা ও পশ্চিমা বিশ্বের দ্বিচারিতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

গাজিপুরed

বিক্ষোভ মাছিল শেষে শহরের শিববাড়ি এলাকায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা বলেন, “গাজায় যা ঘটছে তা শুধু একটি ভূখণ্ডের উপর আগ্রাসন নয়, এটি একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চক্রান্ত। শিশুদের হত্যা করে, হাসপাতাল ধ্বংস করে, সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করে ইসরায়েল সভ্যতার মুখে থাপ্পড় মারছে। আর তথাকথিত মানবাধিকারের রক্ষকরা চুপ করে বসে আছে—এই নীরবতা আসলে সম্মতি।

তারা আরও বলেন, “পশ্চিমা দুনিয়া যাদের ভাষণে মানবতার বুলি শোনা যায়, তারাই আজ এই গণহত্যার অস্ত্র সরবরাহকারী। এ কোন সভ্যতা—যেখানে হত্যাকারীর হাতে পুরস্কার, আর রক্তাক্ত শিশুর মুখে নেই কোনো প্রতিকার?

নেতৃবৃন্দ মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন—“আজ যদি আমরা নির্লিপ্ত থাকি, কাল ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। এই মুহূর্তে ফিলিস্তিন শুধু এক ভূখণ্ডের নাম নয়—এটি আমাদের বিবেকের পরীক্ষার নাম, আমাদের ঈমানের সীমানা।

স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ মিছিলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। শান্তিপূর্ণভাবেই এ কর্মসূচি শেষ হয়, তবে মনের ক্ষোভ যেন আরও জ্বলে উঠল আগুন হয়ে।

একই দিনে গাজীপুর চৌরাস্তায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বাদ জোহর বিক্ষোভ মিছিল করে। তারা যুদ্ধ বন্ধ ও ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানান। এ ছাড়া গাজীপুরের রাজবাড়ি সড়কে সাধারণ ছাত্রজনতার ব্যানারে হাজারো মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন, যারা সকলে এক কণ্ঠে বলেছে—“আমরা নির্যাতিতের পাশে, আমরা ফিলিস্তিনের পক্ষে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, গাজীপুরে অনুষ্ঠিত এ বিক্ষোভ কেবল এক প্রতীকী কর্মসূচি নয়—এটি ছিল ন্যায়, মানবতা ও বৈশ্বিক বিবেকের এক জোরালো ধ্বনি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই প্রতিবাদের অনুরণন আরও সুদূরপ্রসারী হতে পারে, যদি তা দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে সাম্রাজ্যবাদ ও ন্যায়বিচারহীনতার বিরুদ্ধে গণসচেতনতার।