দেশব্যাপী আলোচিত জুলাই আন্দোলনের সময় এক অভিনব ‘সিক্রেট কোডিং সিস্টেম’ ব্যবহার করা হতো—আর তা ছিল চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা। সে সময়ের ঢাবি শিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আশিকুর রহমান তাঁর ফেসবুক পোস্টে সেই স্মৃতি তুলে ধরেছেন এক মজার ভাষ্যে।
তিনি লেখেন, “আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট পুরোপুরি বন্ধ। তখন সব যোগাযোগ চলত বাটন ফোনে। হঠাৎ একদিন ফরহাদ ভাইয়ের ফোনে কল আসলো, তিনি দীর্ঘক্ষণ চট্টগ্রামের ভাষায় কথা বললেন। আমি ভেবেছিলাম বাড়ি থেকে কেউ ফোন করেছে। কিন্তু তিনি জানালেন, কথা বলছিলেন সাদিক ভাইয়ের সঙ্গে।”
সেই মুহূর্তে তিনি বুঝে যান, এটি কোনো পারিবারিক আলাপ নয়, বরং আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা—যা ‘সতর্কতা’র কারণে করা হচ্ছে একেবারে লোকাল ভাষায়।
কাজী আশিক বলেন, “এই ভাষা যেহেতু অনেকেরই বুঝতে কষ্ট হয়, তাই মোবাইল ট্রেকিংয়ের জন্য নিয়োজিত কেউ যদি চট্টগ্রামের না হন, তাহলে কোনোভাবেই বোঝার উপায় নেই—কি বলা হচ্ছে।”
তিনি আরও লেখেন, “সেই সময় সভাপতি ও সেক্রেটারি দুজনেই ছিলেন চট্টগ্রামের। তাই হয়তো এটাও আল্লাহর এক খাস রহমত ছিল আন্দোলনের জন্য!”
আন্দোলনের দিনগুলোতে চট্টগ্রামের ভাষায় কথোপকথনের এই ‘কৌশল’ আন্দোলনের ভেতরে একটি স্বকীয় নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
যাইহোক, এমনই এক ক্রিটিক্যাল সময়ে একদিন ফরহাদ ভাইয়ের মোবাইলে একটা কল আসলো।
ভাই কলটা রিসিভ করলেন এবং চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বেশ কিছুক্ষণ কি কি যেন কইলেন।
আমার কাছে চট্টগ্রামের ভাষা আর চাইনিজ ভাষার মধ্যে কোনো পার্থক্য নাই, কারণ কোনোটারই আমি কিছুই বুঝি না।
সাধারণত দেখতাম যে ফরহাদ ভাইয়ের বাড়ি থেকে কেউ ফোন করলে তিনি এভাবে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন। তাই আমি জিজ্ঞেস করলাম ভাই বাড়িতে কার সাথে কথা বললেন?
ভাই বললো বাড়ি থেকে না, সাদিক ভাইয়ের সাথে কথা বললাম।
আমি মাথা চুলকাইতেছি! ভাবতেছি ঘটনা কি?
কারণ, ফরহাদ ভাইয়ের সাথে আমি অনেকদিন ধরেই আছি, কিন্তু কখনো সাদিক ভাইয়ের সাথে এমন চট্টগ্রামের ভাষায় কথা বলতেতো দেখিনাই।
বললাম ভাই, আপনি সাদিক ভাইয়ের সাথে আবার কবে থেকে এই ভাষায় কথা বলা শুরু করলেন? বুঝলাম না।
ফরহাদ ভাই মুচকি হাসি দিয়া কইলো, "যতটুকু সম্ভব সতর্ক থাকা আরকি" পরে বিষয়টা বুঝতে পাইরা আমি একা একা কিছুক্ষণ হাসলাম, ভাবলাম যে মোবাইল ট্রেকিংয়ের দায়িত্বরত ব্যক্তি শুধু চট্টগ্রামের লোক না হলেই হবে, ওর বাপেরও ক্ষমতা নাই খুঁইজা বাইর করার যে সাদিক-ফরহাদ কি নিয়া আলাপ করতেছে!
এরপর থেকে যতদিন ইন্টারনেট ছিল না, ততদিন মোবাইলে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পলিসি নিয়া আলাপ করা দরকার হইলে তাঁরা চট্টগ্রামের ভাষা ব্যবহার করতো।
তাই ফরহাদ ভাইকে এই ভাষায় কথা বলতে দেখলেই কাছে যাইয়া বইসা পড়তাম, ফোনের কথা শেষ করে যেন এগুলো আমাদেরকে আবার বাংলা ভাষায় অনুবাদ করে বুঝায়া দিতে পারে।
আমি বলতাম ভাই, এই সময়ে আপনারা সভাপতি সেক্রেটারি দুজনেই চট্টগ্রামের হওয়া এটাও বোধহয় আল্লাহর একটা খাস রহমত!
চট্টগ্রামের ভাষাকে আপনারা "সিক্রেট কোডিং সিস্টেম" বানায়া ফেলছেন। কি একটা অবস্থা!
উপরের আলাপ থেকে আমরা কইতে পারি যে জুলাই বিপ্লবের পলিসি মেকিংয়ে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষারও একটা ভালো কন্ট্রিবিউশন ছিল।
এই পোস্টের মাধ্যমে আন্দোলনের একটি অদেখা অধ্যায়—সাধারণ প্রযুক্তি আর আঞ্চলিক সংস্কৃতির মিশেলে গড়ে ওঠা বিপ্লবের এক টুকরো স্মৃতি উঠে আসে।