দেশে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস এবং পেশাদার চালকের মানোন্নয়নের জন্য সরকার ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করার পদ্ধতিতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে। এই নতুন নিয়মে যেকোনো প্রার্থীকে লাইসেন্স প্রাপ্তির আগে নূন্যতম ৬০ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের কর্তৃত্বও আর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)-এর হাতে থাকবে না।

বুধবার (২২ অক্টোবর) সকালে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এ তথ্য জানান। রাজধানীর হাতিরঝিলের সড়ক ভবন মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “ড্রাইভিং লাইসেন্স পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এর মূল কাজ হবে প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণ ছাড়া কেউ আর লাইসেন্স পাবে না। এজন্য ন্যূনতম ৬০ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হবে।”

তিনি আরও জানান, “প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের ভাতা দেওয়া হবে। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পূর্ববর্তী আনুসঙ্গিক কমিটিগুলো বিলুপ্ত করা হবে। সড়ককে নিরাপদ ও যানজটমুক্ত করতে হলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালক লাগবে।”

উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) ও সরকার অনুমোদিত বেসরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ শেষে সেসব প্রতিষ্ঠান থেকেই ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করা হবে।”

তিনি জানান, দুই ধাপে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হবে— প্রথম ধাপে সড়ক চিহ্ন ও নিয়ম বোঝা, দ্বিতীয় ধাপে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ ও শারীরিক সক্ষমতা যাচাই। এছাড়া ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হবে। “আমরা আশা করছি, আগামী মাসের মধ্যে নতুন প্রশিক্ষণ কাঠামো কার্যকর করা সম্ভব হবে,” বলেন ফাওজুল কবির খান।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখশ চৌধুরী, সেতু সচিব মো. আবদুর রউফ, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান, বিআরটিএ চেয়ারম্যান আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলমসহ অনেকে।

সরকারের এই উদ্যোগকে অনেকেই সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন ধরেই দেশে দক্ষ চালকের অভাব, অপ্রশিক্ষিত ড্রাইভার ও দুর্বল লাইসেন্স পদ্ধতি দুর্ঘটনার বড় কারণ। বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ ও কঠোর মানদণ্ড চালু হলে সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।