২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের নির্বিচার গুলিতে নিহত হন ৬ জন। মানবতাবিরোধী এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগে (ফরমাল চার্জ) উঠে এসেছে বিভৎস সব তথ্য।
চার্জশিটে বলা হয়েছে, রাজধানীর রমনা অঞ্চলের তৎকালীন অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শাহ্ আলম আখতারুল ইসলামের নির্দেশেই পুলিশ সদস্যরা নির্বিচারে গুলি চালায়। নিহত হন শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদী হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) মামলার চার আসামিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদনের শুনানি শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ অভিযোগ গঠনের আদেশের জন্য আগামী ১৪ জুলাই দিন ধার্য করেছে। ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
চার্জশিটে আরও বলা হয়, পুলিশের অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া কর্মকর্তাদের নির্দেশে প্রাণঘাতী চাইনিজ রাইফেল দিয়ে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। কনস্টেবল সুজন হোসেন কখনো শুয়ে, কখনো বসে, কখনো দাঁড়িয়ে একের পর এক গুলি চালান। এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য।
এক ব্যতিক্রম ছিলেন কনস্টেবল অজয় ঘোষ। তিনি চাইনিজ রাইফেল হাতে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় গুলি চালাতে অস্বীকৃতি জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এডিসি আখতারুল ইসলাম তাঁর কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নেন এবং কনস্টেবল সুজন হোসেনকে দিয়ে গুলি চালানোর নির্দেশ দেন।
প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ বলেন, “কনস্টেবল অজয় ঘোষ সেই দিন সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁকে মামলার সাক্ষী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”
চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’র ভিত্তিতে ঘটনাটির পরিকল্পনায় ভূমিকা ছিল। তবে তদন্ত চলমান থাকায় এই মামলায় তাদের নাম আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
মামলার আট আসামির মধ্যে ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, আখতারুল ইসলাম এবং সহকারী কমিশনার ইমরুল পলাতক রয়েছেন।
গ্রেফতার চার আসামি হলেন: শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, সাবেক কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ইমন, মো. নাসিরুল ইসলাম।
আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রে বলা হয়, সেই দিন আন্দোলন দমনে ব্যবহার করা হয় হেলিকপ্টার, ড্রোন, এপিসি কার ও বিপুল পরিমাণ বুলেট। গুলির পর পুলিশ সদস্যরা চিৎকার করে বলতে থাকেন: “গুলি লাগছে, মরছে, শেষ!”—যা ট্রাইব্যুনালে জমা ভিডিও ও অডিও প্রমাণেও উঠে এসেছে।
১৪ জুলাই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।