অভিন্ন চাকুরিবিধি বাস্তবায়ন এবং দমন-পীড়নের মাধ্যমে কর্মপরিবেশ অস্থিতিশীলকরার দায়ে আরইবি চেয়ারম্যানের অপসারণসহ ৭ দফা দাবিতে “মার্চ টু ঢাকা” কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সারাদেশের ৮০ টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বৈষম্য বিরোধী কর্মকর্তা কর্মচারীরা। বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির কথা জানান পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভুক্তভোগী কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিতে পূনর্বহাল ও মামলা প্রত্যাহার, এক ও অভিন্ন সার্ভিস কোড বাস্তবায়ন এবং অনিয়মিতদের নিয়মতকরনসহ বিদ্যমান সংকট সমাধানে আলোচনা বসার জন্য পল্লী বিদ্যুত সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারীদের পক্ষ থেকে ৪৮ ঘন্টার সময় বেধে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ৪৮ ঘন্টা অতিক্রম হলেও বিদ্যুৎ মন্ত্রনালয় বা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। নিরুপায় হয়ে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করতে হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী কর্মকর্তা কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, গ্রামাঞ্চলে মানসম্মত বিদ্যুৎ সেবা প্রদানে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিসমূহের বিদ্যমান সংকট নিরসনপূর্বক যৌক্তিক সংস্কার চাওয়ায় জুলাই স্প্রিরিট ধারণকারী বৈষম্য বিরোধী কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। গত চার মাসে প্রায় চার সহস্রাধিক কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে চাকরিচ্যুতি, বদলি সংযুক্তিসহ হয়রানি মুলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তারা জানান, নিম্ন মানের মালামাল দিয়ে ভঙ্গুর বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা নির্মাণ করে গ্রাহক হয়রানি এবং গ্রাহক বনাম সমিতির কর্মরত কর্মচারীদের মুখোমুখি দাঁড়া করিয়ে দেওয়া, আরইবির ব্যার্থতার দায়ভার সমিতিগুলোর উপর চাপানো, নানান আর্থিক অনিয়ম; কর্মক্ষেত্রে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করা কর্মীর দায় না নিয়ে বরং সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি ও জুলুম ইত্যাদি কারণে দীর্ঘকালের অসন্তোষের প্রেক্ষিতে গত বছরের জানুয়ারি থেকে সমিতিগুলোতে সম্মিলিত আন্দোলনের সূত্রপাত।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বৈষম্য বিরোধী কর্মকর্তা কর্মচারীরা জানান, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস) এর মধ্যে বিদ্যমান সংকট নিরসনের মাধ্যমে আধুনিক ও টেকসই বিতরণ ব্যবস্থা বিনির্মাণ এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নত ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিতে জানুয়ারি-২০২৪ থেকে আন্দোলন শুরু হয় দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ২৩ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে পল্লী বিদ্যুৎ সংস্কারে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেন কিন্তু দীর্ঘ সাত মাস অতিবাহিত হলেও আজ অবধি প্রতিবেদন দাখিল/জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি।
এছাড়া মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ কর্তৃক “এক ও অভিন্ন চাকুরিবিধি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আরইবি-পবিস একীভূতকরণ” সিদ্ধান্ত স্বল্পমেয়াদে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক উক্ত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য মন্ত্রীপরিষদ বিভাগকে জানানো হয়েছে। অপরদিকে, সমিতির কর্মীদের উপর স্বৈরাচারী পন্থায় আরইবি’র জুলুম-নির্যাতনের মাত্রা চরমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
আন্দোলনের অজুহাতে এখন পর্যন্ত ২৯ জনকে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত, মামলা-গ্রেফতার-কারাবন্দী, অর্ধশতাধিক কর্মীকে বরখাস্ত, স্ট্যান্ড রিলিজপূর্বক সংযুক্ত এবং নিজ জেলা থেকে গড়ে ৪০০-৫০০ কি.মি. দূরে শাস্তিমূলক বদলি করা হচ্ছে।
এছাড়া স্মারকলিপির জন্য গণস্বাক্ষর কার্যক্রম করায় ৭ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গত চার মাসে সাড়ে চার হাজারের অধিক কর্মীকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে।
সর্বশেষ গত এক সপ্তাহে দেড় হাজারের অধিক লাইনক্রুকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে (নিয়োগপত্র অনুযায়ী চাকরি বদলিযোগ্য না) হয়রানিমূলক বদলি আদেশ জারি করা হয়েছে, বাদ যায়নি মৃত ব্যক্তি, গুরুতর অসুস্থ ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত বিদ্যুৎ কর্মীও। চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন কয়েকজন নারী কর্মী। ফেসবুকে পোস্টের কারণেও ৫ জনকে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
চলমান তাপদাহ এবং ঝড়-বৃষ্টির মৌসুমে সমিতির কর্মীরা যখন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা প্রদানে হিমশিম খাচ্ছে ঠিক তখনই আরইবি কর্তৃক লাইনক্রুদের এই ধরনের গণবদলি সিস্টেমের জন্য আত্মঘাতী, কর্মীদের জন্য প্রাণঘাতী, বিদ্যুৎ সিস্টেমে নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কর্তৃক পল্লী বিদ্যুৎ কার্যক্রমকে পুনরায় অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র বলে স্পষ্ট প্রতীয়মান।
লাইনক্রুসহ সকল হয়রানীমূলক বদলি আদেশ বাতিলের দাবির কারণে বিভিন্ন পবিসে লাইনক্রুদেরকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া চুক্তিভিত্তিক/অনিয়মিতদের মধ্যে অন্যদেরকে নিয়মিত করা হলেও মিটার রিডার কাম মেসেঞ্জার (এমআরসিএম) এবং ঝুকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত লাইন শ্রমিকদের চাকরি নিয়মিত করা হয়নি। বিদ্যুতের মতো আবশ্যিক ও জরুরি সেবায় কোন কর্মী ৩৬ বছর চুক্তিভিত্তিক হিসেবে কাজ করবে যা খুবই অমানবিক এবং চরম বৈষম্য।
আমরা উল্লিখিত বিষয়ের সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও যৌক্তিক সমাধানের জন্য অসংখ্যবার আরইবি চেয়ারম্যান, মাননীয় বিদ্যুৎ উপদেষ্টা, বিদ্যুৎ বিভাগকে অনুরোধ জানিয়েছি, কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো আমাদের বিষয়ে আমাদের সাথে একটিবার আলোচনার সুযোগ দেওয়া হয়নি। পবিসের যে সকল কর্মীকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত ও রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় হয়রানি করা হচ্ছে তাদেরকে চাকরিতে পুনর্বহাল, সংস্কার কার্যক্রমের দৃশ্যমান অগ্রগতি, চুক্তিভিত্তিক/অনিয়মিতদের নিয়মিতকরণ এবং আরইবি'র দমন-পীড়ন বন্ধের জন্য গত ২১ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখ এবং ২য় দফায় গত ২৬ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে মাননীয় বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বরাবর গণস্বাক্ষর সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করা হয় (যার কপি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়কে দেওয়া হয়েছে)।
তথাপি উক্ত বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের কোন তৎপরতা দৃশ্যমান হয়নি। গত অক্টোবর মাসেও মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার তৎকালীন বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম প্রেস কনফারেন্সে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের ঘোষণা সত্ত্বেও কোন আলোচনা করা হয়নি।