উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ জনে। বিমানটি স্কুল ভবনের দোতলায় আছড়ে পড়লে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
স্কুলটির একজন প্রভাষক মো. রেজাউল হক জানান, বিধ্বস্ত ভবনের প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে প্রায় ৩০ জন করে শিক্ষার্থী ছিলেন।
তিনি বলেন, “দোতলার শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু নিচতলার অনেক শিক্ষার্থী আগুনে পুড়ে গেছে।”
তার ভাষ্যমতে, বিমানটি ভবনের মাঝ বরাবর নিচের তলায় ধাক্কা দেয়, যার ফলে নিচতলার দুপাশের কক্ষগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি জানান, দুটি তলায় মিলে প্রায় ২০০–২২০ জন শিক্ষার্থী ছিলেন, যাদের মধ্যে ১০০–১২০ জন নিচতলায় অবস্থান করছিলেন। তবে ঘটনার সময় বিরতি চলছিল বলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা কম ছিল।
এখনো পর্যন্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ নিহত বা আহতদের নির্দিষ্ট সংখ্যা প্রকাশ করেনি।
তবে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছিল। রাতের দিকে এই সংখ্যা বেড়ে ৩২-এ পৌঁছায়। অপরদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকায় ২৭ জন নিহতের কথা বলা হয়, যাদের মধ্যে ২৩ জন শিশু।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম জানান, নিহতদের অনেকের পরিচয় এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এখন পর্যন্ত ২০টি মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ৬টি মরদেহ রাখা হয়েছে সিএমএইচের মর্গে। নিহত বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের দাফন সম্পন্ন হয়েছে তার নিজ জেলা রাজশাহীতে।
আইএসপিআরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৬৫ জন। এদের মধ্যে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন:
কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল: ৮ জন
শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট: ৪৬ জন
ঢাকা মেডিকেল কলেজ: ৩ জন
সিএমএইচ: ২৮ জন
লুবনা জেনারেল হাসপাতাল: ১৩ জন
উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল: ৬০ জন
উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল: ১ জন
শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ: ১ জন
ইউনাইটেড হাসপাতাল: ২ জন
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল: ৩ জন
দুর্ঘটনার পর পুরো এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহতদের স্মরণে উত্তরা ১২ নম্বরের সিটি করপোরেশন কবরস্থানে বিশেষ জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে একটি স্মৃতি-সৌধ হিসেবে সংরক্ষণ করা হবে।