শীর্ষ রাজনীতিবিদদের পাশে নিয়ে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় তিনি এই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। ঘোষণাপত্রে যুক্ত করা হয়েছে ২৮টি দফা। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন তাতে স্থান পেয়েছে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যখন জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করছিলেন, তখন তার পাশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ছিলেন। এর মধ্যে ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ। ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাবৃন্দ। এর আগে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। পরে সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠের সময় বৃষ্টি হচ্ছিল। ডায়াসে দাঁড়িয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বললেন, আমাদের জন্য রহমত বর্ষিত হচ্ছে, আল্লাহর রহমত নিয়ে আমি এই ঘোষণাপত্র পাঠ করবো.... এরপর তিনি ঘোষণাপত্র পাঠ করা শুরু করেন।
প্রধান উপদেষ্টা ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠে বলেন, যেহেতু উপনিবেশবিরোধী লড়াইয়ের সুদীর্ঘকালের ধারাবাহিকতায় এই ভূখণ্ডের মানুষ দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের বঞ্চনা ও শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং নির্বিচার গণহত্যার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করে জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার স্বাধীনতার মূলমন্ত্র গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিপরীতে বাকশালের নামে সাংবিধানিকভাবে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করে এবং মতপ্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করে, যার প্রতিক্রিয়ায় ১৯৭৫ সালের ৭ নবেম্বর দেশে সিপাহী-জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে একদলীয় বাকশাল পদ্ধতির পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্র, মতপ্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পুনঃপ্রবর্তনের পথ সুগম হয়।
তিনি উল্লেখ করেন, গত দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী, অগণতান্ত্রিক ও গণবিরোধী শাসনব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে এবং একদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অতি উগ্র বাসনা চরিতার্থ করার অভিপ্রায়ে সংবিধানের অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক পরিবর্তন করা হয় এবং যার ফলে একদলীয় একচ্ছত্র ক্ষমতা ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয় এবং যেহেতু, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন, গুম-খুন, আইন-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ এবং একদলীয় স্বার্থে সংবিধান সংশোধন ও পরিবর্তন বাংলাদেশের সব রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে। তথাকথিত উন্নয়নের নামে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী নেতৃত্বে সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থপাচার ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বিগত পতিত দুর্নীতিবাজ আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশ ও এর অমিত অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বিপর্যস্ত করে তোলে ।
প্রফেসর ইউনূস বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে জনগণ অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে, পরবর্তী সময়ে ৫ আগস্ট ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ পরিচালনা করে এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনরত সব রাজনৈতিক দল, ছাত্র-জনতা তথা সর্বস্তরের সব শ্রেণি-পেশার আপামর জনসাধারণের তীব্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গণভবনমুখী জনতার উত্তাল যাত্রার মুখে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
তিনি আশ্বস্থ করেন যে, ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক সংঘটিত গুম-খুন, হত্যা, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সব ধরনের নির্যাতন, নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধের দ্রুত উপযুক্ত বিচার করা হবে।
প্রফেসর ইউনূস যুক্তিসঙ্গত সময়ে আয়োজিতব্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদে প্রতিশ্রুত প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশের মানুষের প্রত্যাশা, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি, শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন ও মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা জানান। ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী বাংলাদেশের জনগণের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন হিসেবে এই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা হলো বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষিত ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউতে ‘৩৬ জুলাই উদযাপন’ অনুষ্ঠানে মানুষের ঢল নামে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি উপেক্ষা করে অনুষ্ঠানে অংশ নেয় সব বয়স এবং শ্রেণি পেশার মানুষ। শিশু, কিশোর থেকে শুরু করে সকল বয়সের মানুষের গন্তব্য ছিল মানিক মিয়া এভিনিউ। কারো মাথায় লাল সবুজের পতাকা। কেউ বা শরীরে জড়িয়ে নিয়েছেন পতাকা। নারীরাও আসেন নানা সাঁজে বিজয়ের আমেজ নিতে। দিনটি উদযাপন উপলক্ষ্যে সড়কের মাঝে মঞ্চ করা হয়। বসানো হয় কয়েকটি এলইডি মনিটর। সেখান থেকে সরাসরি মঞ্চের কার্যক্রম প্রদর্শন করা হয়।
এদিন বেলা ১১টায় সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর পরিবেশনার মধ্য দিয়ে মূল অনুষ্ঠানমালা শুরু হয়। সাইমুম শিল্পীরা ওস্তাদ তোফাজ্জেল হোসেনের লেখা ‘এই দেশ আমার বাংলাদেশ, আমার ভালোবাসা’ গানটি পরিবেশন করেন।দিনব্যাপী এই আয়োজনে একে একে পরিবেশনা করেন দেশের জনপ্রিয় শিল্পীগোষ্ঠী, ব্যান্ড ও একক শিল্পী। অনুষ্ঠানে ছিল ধর্মীয় বিরতিসহ ঐতিহাসিক ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ ও ড্রোননির্ভর বিশেষ নাট্য-উপস্থাপনা। অনুষ্ঠান চলে রাত ৮টা পর্যন্ত। এই মঞ্চ থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিকেল ৫টায় ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করেন।
সন্ধ্যায় সংসদ ভবনের সামনে থেকে পরিবেশন করা হয় জুলাই শহীদদের স্মরণে ড্রোন শো। রাত ১০টায় মঞ্চস্থ হয় নাটক 'রাহুগ্রাস'। দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে গান পরিবেশন করেন সায়ান। দুপুর ৩টায় ইথুন বাবু ও মৌসুমী দর্শকদের গান শোনান। বিকেল সাড়ে ৩টায় ছিল সোলস ব্যান্ডের পরিবেশনা। ৪টায় মঞ্চে গান গায় ব্যান্ড ওয়ারফেজ। সন্ধ্যা ৭টায় এই মঞ্চে গান করেন এলিটা করিম। রাত ৮টায় ছিল আর্টসেলের গান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আরও গান পরিবেশন করে সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী, কলরব শিল্পীগোষ্ঠী, চিটাগাং হিপহপ হুড, সেজান ও শূন্য ব্যান্ড।
‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে সকাল থেকেই শুরু হয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের জমায়েত। বৃষ্টির বাগড়ায় অনুষ্ঠানে কিছুটা ছন্দপতন হয়। তবে সবকিছু উপক্ষো করে জুলাইয়ের পুনর্জাগরণে যোগ দেন হাজারো জনতা। মানিক মিয়া এভিনিউর আশাপাশসহ পুরো এলাকাজুড়ে মানুষের ঢল নামতে শুরু করে।
অনুষ্ঠানকে ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ইবনে মিজান জানান, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও আশপাশের এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশও দায়িত্ব পালন করছে। র্যাব-২-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি খালিদুল হক হাওলাদার জানান, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে এবং র্যাবের পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
বিকাল ৫টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা থেকে বহুল প্রতীক্ষিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশ টেলিভিশন অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে। বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে মঞ্চের চারপাশে রাখা হয়েছে পানি নিরোধক ব্যবস্থা। অনুষ্ঠানের আয়োজক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। সহযোগিতায় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়। সরকারি তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, পুরো অনুষ্ঠানটি জনসাধারণের জন্য ছিল উন্মুক্ত।
সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার দুই পাশের রাস্তা লোকে লোকারণ্য হয়ে পূর্বে খামার বাড়ি ও পশ্চিমে আড়ং মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। পরিবার নিয়ে সেখানে এসেছিলেন জুরাইনের স্কুল শিক্ষক শফিউল ইসলাম। তিনি বলেন, এই দিনটি আমাদের আবেগতাড়িত করে। কারণ, গত বছর স্বৈরাচার তাড়ানোর পর সর্বপ্রথম আমরা এখানেই ছুটে এসেছি। তাই এক বছর পর বৃষ্টির মধ্যেও এখানে আসলাম। তিনি মনে করেন জনতার ঐক্য থাকলে ভবিষ্যতে আর কেউ স্বৈরাচার হওয়ার সাহস পাবেন না।
এদিকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে গণভবনে নির্মাণাধীন ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’-এর নির্মাণকাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করেন প্রধান উপদেষ্টা। জাদুঘরটি ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট, সংগ্রাম, শহীদ এবং বিজয়ের দলিলরূপে নির্মাণাধীন রয়েছে। নির্মাণাধীন এলাকায় পৌঁছে প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী, স্থপতি এবং কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং দ্রুততম সময়ে কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন। পরিদর্শনকালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং জাদুঘর বাস্তবায়ন কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে বিডিআর হত্যা, শাপলা গণহত্যা ও চব্বিশের গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড স্বৈরাচার শেখ হাসিনার প্রতীকী ফাঁসি সম্পন্ন করেছে ছাত্র-জনতা। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় ‘জাগ্রত জুলাই ও জুলাই ঐক্যের’ আয়োজনে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রকাশ্যে এই ফাঁসি কার্যকর সম্পন্ন হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও জুলাই ঐক্যের সংগঠক এবি জুবায়ের, জুলাই ঐক্যের সংগঠক ও সাংবাদিক ইসরাফিল ফরাজী, জাগ্রত জুলাইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি শামীম হামিদিসহ বিভিন্ন সংগঠন ও নানা পেশার মানুষজন।
হাসিনার প্রতীকী ফাঁসির রায় ঘোষণা দেন জাগ্রত জুলাইয়ের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট তানজিনা ফেরদাউস। ফাঁসির আগে প্রেশার এবং হার্ট বিট পরীক্ষা করেন রায়হান মাদ্রাজী, ফাঁসির রশিতে ঝুলানোর সময় জল্লাদের ভূমিকায় ছিলেন আলিফ জাওফি, কালেমা পাঠ করান জুলাই ঐক্যের সংগঠক মোস্তফা হোসাইন, ফাঁসির মঞ্চায়ন নির্দেশনায় আজিজ সাইফুল্লাহ।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন জাগ্রত জুলাইয়ের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কবি মুন্সি বোরহান মাহমুদ। রায় কার্যকরের আগে বক্তারা বলেন, শেখ হাসিনাকে আজ আমরা প্রতীকী ফাঁসি দিচ্ছি। এটা যেন প্রতীকীতেই সীমাবদ্ধ না থাকে। আমরা জানি, বাংলাদেশের আইনি কাঠামো খুবই অগোছালো। রায় কার্যকর হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। আমরা চাই আগামী এক বছরের মধ্যে সকল কার্যক্রম শেষ করে গণ-অভ্যুত্থানের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি ৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে শেখ হাসিনাসহ সকল গণহত্যাকারীদের ফাঁসি কর্যক্রম সম্পন্ন করুন।
অনলাইনে উদযাপন
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নানা ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দিনটিকে উদ্যাপন করেছেন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার ফেসবুক ও ওয়েবসাইটে দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। আইসিটি বিভাগের ফেসবুকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর’ শীর্ষক একটি গ্রাফিক্যাল ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। ছবিতে আবু সাঈদের ছবিসহ আন্দোলনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের কোলাজ দৃশ্য রয়েছে। সরকারের আরেক সংস্থা এসপায়ার টু ইনোভেটের (এটুআই) তৈরি এই ছবি প্রকাশ করেছে আইসিটি বিভাগ।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচনের ছবি শেয়ার করা হয়েছে ‘চিফ অ্যাডভাইজর জিওবি’ নামের ফেসবুক পেজ থেকে। রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে দিবসটি উদ্যাপনের বিভিন্ন ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে পেজটিতে। বাংলাদেশে অবস্থিত সুইডেন, ডেনমার্কসহ বিভিন্ন দেশের ফেসবুক পেজ থেকে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে ছবি ও লেখা প্রকাশ করা হয়েছে। দূতাবাসগুলোর ফেসবুক পেজ থেকে জুলাই শহীদদের স্মরণ করার পাশাপাশি বাংলাদেশে অর্থনীতি ও গণতান্ত্রিক সংস্কারে দেশগুলোর অবস্থানকে তুলে ধরতে দেখা যায়। ‘ইউকে ইন বাংলাদেশ পেজ’ থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের স্মরণ করে বিশেষ পোস্ট শেয়ার করা হয়েছে।
জনপ্রিয় ইউটিউবার ও অভিনেতা সালমান মুক্তাদির গত বছরের ৫ আগস্টে ধারণ করা তার রিলস ভিডিও শেয়ার করেছেন অনলাইনে। সালমান মুক্তাদিরের মতো অনেকেই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় নিজেদের ধারণ করা ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন পেজ থেকেও ‘হ্যাশট্যাগ জুলাই’ শীর্ষক বিভিন্ন ছবি, ভিডিও ও লেখা প্রকাশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ‘হ্যাশট্যাগ জুলাই ২০২৪ মেমরিজ’ ট্যাগ দিয়েও অনলাইনে ভিডিও প্রকাশ করেছেন অনেকে।