বাংলাদেশে ১৫ শতাংশেরও বেশি মানুষ নিজ এলাকায় সন্ধ্যার পর নিরাপদ বোধ করেন না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এছাড়া প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ নাগরিক নিজেদের বাড়িতেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) প্রকাশিত বিবিএস-এর ‘সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস) ২০২৪’ অনুযায়ী, নাগরিকদের নিরাপত্তা, সুশাসন, সরকারি সেবার মান, দুর্নীতি, ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার এবং বৈষম্য—এসব সূচকে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

সারাদেশে ৬৪ জেলার ১,৯২০টি প্রাথমিক নমুনা এলাকা থেকে ৪৫,৮৮৮টি খানার মোট ৮৪,৮০৭ জন নারী-পুরুষের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রশ্নপত্র তৈরি হয়েছে জাতিসংঘের নির্ধারিত আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে।

জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৮৪.৮১ শতাংশ নাগরিক সন্ধ্যার পর নিজ এলাকায় একা চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করেন। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার ৮৯.৫৩ শতাংশ এবং নারীদের ক্ষেত্রে ৮০.৬৭ শতাংশ। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলের নাগরিকরা একটু বেশি নিরাপদ বোধ করেন (৮৫.৩০% বনাম ৮৩.৭৫%)।

অন্যদিকে, সন্ধ্যার পর নিজের বাড়িতে নিরাপদ বোধ করেন ৯২.৫৪ শতাংশ নাগরিক। এর মধ্যে পুরুষদের হার ৯৩.৩৫ শতাংশ এবং নারীদের ক্ষেত্রে ৯১.৮২ শতাংশ।

জরিপ অনুযায়ী, মাত্র ২৭.২৪ শতাংশ নাগরিক মনে করেন, তারা সরকারের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে প্রকাশ্যে মতামত দিতে পারেন। পুরুষদের মধ্যে এই হার ৩১.৮৬ শতাংশ হলেও নারীদের মধ্যে তা ২৩.০২ শতাংশ।

রাজনীতিতে সক্রিয় প্রভাব বিস্তার করতে পারেন—এমন মনে করেন ২১.৯৯ শতাংশ নাগরিক। এর মধ্যে ২৬.৫৫ শতাংশ পুরুষ ও ১৭.৮১ শতাংশ নারী এই মত পোষণ করেন।

গত এক বছরে ৪৭.১২ শতাংশ নাগরিক সরকারি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছেন। তাদের মধ্যে ৮২.৭২ শতাংশের অভিমত, এই সেবা সহজলভ্য ও খরচসাপেক্ষে গ্রহণযোগ্য ছিল।

শিক্ষা ক্ষেত্রে দেখা যায়, ৪০.৯৩ শতাংশ পরিবারের অন্তত একজন শিশু সরকারি প্রাথমিক বা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে। এর মধ্যে ৯৬.৪৬ শতাংশ নাগরিক জানান, প্রতিষ্ঠানগুলোতে পৌঁছানো সহজ; ৩০ মিনিটের মধ্যেই হেঁটে বা যানবাহনে যাওয়া সম্ভব।

পরিচয়পত্র বা নিবন্ধন সংক্রান্ত সেবায় ৭৮.১২ শতাংশ নাগরিক সেবা পাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন এবং ৮৬ শতাংশের মতে খরচও সামর্থ্যের মধ্যে ছিল।

গত দুই বছরে ১৬.১৬ শতাংশ নাগরিক কোনো না কোনো বিরোধে জড়িয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮৩.৬০ শতাংশ নাগরিক বিচার ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার পেয়েছেন। এর মধ্যে ৪১.৩৪ শতাংশ আনুষ্ঠানিক (আদালত বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা) এবং ৬৮.৯৬ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক (কমিউনিটি নেতা, আইনজীবী) পদ্ধতির মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করেছেন।