রাষ্ট্রীয় সংকটময় পরিস্থিতিতে অধ্যাপক ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

সোমবার (৪ আগস্ট) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে প্রেস সচিব বলেন, ড. ইউনূসের জনকল্যাণমুখী অবস্থান আমাদের ভবিষ্যতের পথ দেখায়।

শফিকুল আলম জানান, কোনো কোনো সময় রাজনৈতিক হিসাবের চেয়ে স্পষ্টতা ও সাহস বেশি জরুরি হয়ে পড়ে। ২০২৪ সালের জুলাই মাস ছিল তেমনই এক সময়। হাসিনা সরকারের হাতে বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের বহু তরুণের প্রাণহানি ঘটেছিল। এই অন্ধকার সময়ে অধ্যাপক ইউনূস সেই নৈতিক বল ও আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সামনে আসেন, যা ওই মুহূর্তে অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল।

তিনি বলেন, ২১ জুলাই সহিংসতা যখন চূড়ান্ত রূপ নেয়, তখন ড. ইউনূস জাতিসংঘ ও বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশ্যে একটি বৈশ্বিক আবেদন জানান। তিনি এটিকে ‘দেশজুড়ে হত্যাযজ্ঞ’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে তা বন্ধের আহ্বান জানান এবং আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেন।

‘এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মতামত বদলে দেয়, হাসিনাকে বিশ্বমঞ্চে একঘরে করে এবং শান্তিপূর্ণ রূপান্তরের পথ তৈরি করে,’ বলেন প্রেস সচিব।

তিনি আরও বলেন, ‘অধ্যাপক ইউনূস রাজনীতিবিদ হিসেবে নয়, বরং একজন নাগরিক হিসেবে কথা বলেন। তিনি আন্দোলনকারীদের অভিনন্দন জানান, তাদের জয়কে ‘দ্বিতীয় বিজয় দিবস’ বলেন এবং প্রতিশোধপরায়ণ না হয়ে দেশ পুনর্গঠনের কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।’

এই নেতৃত্ব কোনো একদিনে তৈরি হয়নি বলে মন্তব্য করেন শফিকুল আলম।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই অধ্যাপক ইউনূস শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরোধিতা করে আসছিলেন। তিনি হাসিনার শাসনকে ফ্যাসিবাদ বলেছিলেন, ভুয়া নির্বাচনের নিন্দা করেছিলেন, বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও সংবিধানে সংস্কারের দাবি জানিয়েছিলেন। এসবের কারণে তাকে ভোগ করতে হয়েছে—জনসমক্ষে অপমান, মামলা, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, এমনকি ২০২৪ সালের শুরুতে জেলদণ্ড, পরে জামিনে মুক্ত হন তিনি।’

আন্দোলনের সময় জনগণ এমন একজন রূপান্তরকারী নেতৃত্ব খুঁজছিলেন যিনি দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে এবং তাদের আকাঙ্ক্ষিত মূল্যবোধ ধারণ করেন। সেই আস্থায় তারা ইউনূসকে বেছে নেন।

‘তিনি ক্ষমতা চাননি, বরং মানুষ তার ওপর আস্থা রেখেছিল,’ বলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।

তিনি আরও বলেন, ওই সময় বিএনপির সাবেক নেতা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদসহ অনেকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ছিলেন এবং নির্যাতিতও হয়েছেন। তবে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে যখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কণ্ঠস্বর দরকার ছিল, তখন মেজর হাফিজের কণ্ঠ সবচেয়ে জোরালো বা কার্যকর ছিল না।

শফিকুল আলম বলেন, ‘এই পার্থক্যটা—কারও অবদান বা ভোগান্তিকে খাটো করতে নয়, বরং কেন ড. ইউনূস জাতীয় আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠছিলেন তা বোঝানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।