আজ ৪ জুলাই ২০২৪, বৃহস্পতিবার। দিনটিকে দেশের ছাত্রসমাজ ‘গণঅভ্যুত্থানের দিন’ হিসেবে পালন করছে। কারণ, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ৫ জুনের রায়ে হাইকোর্টের ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অবস্থান বহাল রাখার সিদ্ধান্ত’কে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ রায়টিকে "নট টেনেবল" বা "টেকসই নয়" বলে উল্লেখ করেন। এই রায়ের প্রতিবাদে ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে সংগঠিত হয় দেশজুড়ে বিক্ষোভ।

৪ জুলাই দেশের বিভিন্ন শহরে শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে অবস্থান নেয়। রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখা হয় প্রায় ৫ ঘণ্টা। এদিন ছাত্র সমাজের ব্যানারে বিভিন্ন জায়গায় ছাত্র ধর্মঘটের ডাকও দেওয়া হয়।

এই দিনটিকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা একে “ছাত্র অধিকার রক্ষার ঐতিহাসিক দিন” হিসেবে তুলে ধরছেন।
একই দিনে সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, খুলনা, বরিশাল, কুমিল্লা, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাস এবং সড়কে বিক্ষোভ করেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করলে উভয় লেনে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রায়সাহেব বাজার মোড়, চবি শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক, রাবির শিক্ষার্থীরা ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক, শেকৃবি শিক্ষার্থীরা আগারগাঁও মোড়, খুবির শিক্ষার্থীরা খুলনার জিরো পয়েন্ট এবং কুবির শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ব্যাচভিত্তিক শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয়। ‘কোটা পুনর্বহাল করা চলবে না’ ফেসবুক গ্রুপ এবং টেলিগ্রাম চ্যানেলের মাধ্যমে আন্দোলনের খবর ও নির্দেশনা সারাদেশে পৌঁছে যায়।
এই দিনে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ বাধার মুখে পড়েন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি হলের গেটে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তালা দিয়ে রাখেন, গেস্টরুমে শিক্ষার্থীদের আটকে রাখা হয়। তবে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে হলে প্রবেশ করে তালা খুলে দেন।
এদিকে, এদিনই সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগে বহাল থাকে। ফলে ৫ জুনের পরিপত্র বাতিল করে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল হয়। এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। আন্দোলনকারীদের ভাষ্য, রাষ্ট্রযন্ত্রের সমন্বয়হীনতার শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।