সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি এন্ড পিস স্টাডিজ আয়োজিত ‘‘নতুন বাংলাদেশ গঠনের চ্যালেঞ্জ”-শীর্ষক আলোচনা সভা সোমবার (১০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান বীর প্রতীক সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপমহাদেশের খ্যাতিমান কবি ও দার্শনিক ফরহাদ মজহার। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর ড. হেলাল উদ্দিন
সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি এন্ড পিস স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক সাংবাদিক সাদেক রহমানের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গণমুক্তি জোটের চেয়ারম্যান ড. শাহরিয়ার ইফতেখার ফুয়াদ, লে.ক (অব.) ফেরদৌস আজিজ, মেজর (অব.) রেজাউল হান্নান শাহিন, মেজর (অব.) জামাল হায়দার, গণমুক্তি জোটের মহাসচিব আক্তার হোসেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রমাণিক, প্রফেসর ড. দেওয়ান সাজ্জাত, ড. এ আর খান, ড. হুমায়ুন কবির প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফরহাদ মজহার বলেন, বর্তমান সরকারকে কোনভাবেই অন্তর্বর্তী সরকার বলা যায় না। পুরোনো ব্যবস্থার পতন ঘটানোর পর নতুন ব্যবস্থা তৈরি করে সেই ব্যবস্থায় দেশকে প্রবেশ করানো পর্যন্ত সময়কালীন সরকারকেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলা হয়। কিন্তু এই সরকার সেই কাজ করছে না, করতে পারছে না। কারণ এই সরকার হাসিনার সংবিধানের অধিনে শপথ নিয়ে গঠত। তাই এই সরকারকে অন্তর্বর্তীকালীন নয় বরং উপদেষ্টা সরকার বলতে হবে। উপদেষ্টা সরকারের একটি মাত্র কাজ। সেটি হচ্ছে তারা রাষ্ট্রপতিকে উপদেশ প্রদান করবে। রাষ্ট্রপতি সেই আলোকে সিদ্ধান্ত নেবেন এবং কাজ করবেন। কথিত ঐকমত্য কমিশনসহ সব কমিশনের কাজ হচ্ছে শুধুমাত্র উপদেশ বা সুপারিশ করা। জুলাই সনদ বা গণভোট তাদের কাজ নয়। তবে তারা যদি হাসিনার সংবিধানের অধিনে শপথ গ্রহন না করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করতো তাহলে আজকে যেই রাজনৈকিত সংকট সৃষ্টি হয়েছে সেই সংকট সৃষ্টির সুযোগ হতো না।
বিশেষ অতিথি ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, জুলাই চেতনা ছিল পুরোনো ব্যবস্থার পরিবর্তে নতুন ব্যবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালিত হবে। যেই ব্যবস্থা বৈষম্যের সৃষ্টি করেছে, ন্যায় বিচারের পরিবর্তে জুলুম-নির্যাতন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেই ব্যবস্থা আর দেশ চলতে পারে না। ছাত্র-জনতার স্লোগান ছিল বৈষম্যহীন দেশ চাই, ন্যায় বিচারের (উই ওয়ান্ট জাস্টিস) দেশ চাই। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সৎ ও আদর্শিক নেতৃত্বের প্রয়োজন। অতীতের চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস, দুর্নীতিগ্রস্ত নেতৃত্ব দিয়ে নতুন বাংলাদেশ গঠন সম্ভব হবে না। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য নতুন নেতৃত্বের প্রয়োজন, পরির্বতন প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হলে চাঁদাবাজদের জমিদারিত্ব নষ্ট হয়ে যাবে। এজন্য একটি দল জুলাই সনদ বাস্তবায়ন চায় না। তাদের দলের মহাসচিব স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, ‘‘আমেরিকা থেকে লোক এসে তাদের ঘাড়ে জুলাই সনদ ও গণভোট চাপিয়ে দিচ্ছে’’! তার এই বক্তব্য জাতিকে পরিষ্কার বার্তা দিচ্ছে, তারা জুলাই সনদ চায় না, গণভোট চায় না। কারণ গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠা হয়ে গেলে কোনো সরকার আর জুলাই সনদ বাতিল করতে পারবে না। তারা চাচ্ছে গড়িমসি করে, কালক্ষেপন করে গণভোটকে জাতীয় নির্বাচনের দিনে নিতে তাহলে ভোট চুরি করে জাল ভোট দেওয়ার সময় তারা জুলাই সনদ প্রস্তাবে ‘‘না’’ সূচক ভোট দিবে। ফলে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না। তাদের কোনো ষড়যন্ত্র জনগণ সফল হতে দেবে না।
তিনি বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনে জাতি আবারও রাজপথে নেমে আসবে। আরো একবার নয়, বার-বার জুলাই ফিরে আসবে। তবুও জাতি জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে। তিনি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে দলমত, ধর্মবর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।