তিন দিনের জেলা প্রশাসক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ডিসিদের এক গুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। প্রথম দিন রোববার কনফারেন্সের উদ্বোধন করে প্রধান উপদেষ্টা ডিসিদের কারো রক্তচক্ষু ভয় না পাওয়ার নির্দেশ দেন নোবেল বিজয়ী ড. প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল সোমবার বেশ কিছু সিদ্ধান্ত এবং নির্দেশনা দিয়ে বক্তব্য রেখেছেন কয়েকজন উপদেষ্টা।
অর্থ উপদেষ্টা : জেলা, উপজেলা এবং গ্রাম অঞ্চলে যেসব ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত আয় করেন কিন্তু ট্যাক্স দেন না; সেসব ব্যবসায়ী ও চিকিৎসকদের ট্যাক্সের আওতায় আনতে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসকদের। তিন দিনের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় অধিবেশন শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। একইসাথে চিকিৎসক এবং আইনজীবীরা যে ফি নেন; সেটাও রশিদ বা ডিজিটাল পেমেন্ট মেথডে এনে তাদেরকেও করের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। উপদেষ্টা বলেন, আপনারা জানেন সরকারের যেকোনো সিদ্ধান্ত আমরা বাস্তবায়ন করি মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দিয়ে। মাঠ পর্যায়ের অফিসাররা যদি দক্ষ এবং সেবক হন, তাহলে জনগণ যে সেবাটা পান সেটা কার্যকর হয়। ‘চিকিৎসক-আইনজীবীরা সরাসরি ক্যাশ ট্রানজেকশন করেন। এর কারণে কিন্তু তাদেরকে করের আওতায় আনা যায় না। চিকিৎসকরা যে ফি নেন, তার রিসিট তো আপনারা নেন না। এই ফি যদি ডিজিটাল মাধ্যমে দেওয়া হয়; তাহলে কিন্তু তার একটা রেকর্ড থাকে। বিদেশে কিন্তু এগুলো সব রেকর্ডেড। তিনি বলেন, ‘আমাদের এম্পলয়মেন্টটা বাড়াতে হবে। লোকাল লেভেলে এম্পলয়মেন্ট বাড়ানো সহজ। চায়নাতে গ্রাম্য শিল্পের সাথে গভীর যোগাযোগ। চায়নার প্রত্যন্ত একটি গ্রামে তৈরি হওয়া পণ্য আমেরিকার ওয়ালমার্টেও পাবেন। অথচ বাংলাদেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলের এই জিনিসগুলো যোগাযোগের অভাবে উঠে আসে না।
তিনি আরও বলেন, ডিসিরাই উত্থাপন করেছে গ্রামাঞ্চলে ব্যবসায়ীরা অনেক আয় করেন। তখন এনবিআর এ বিষয়টি নিয়ে ড্রাইভ দিতে বলেছে। আমাদের ট্যাক্সের আওতা না বাড়ালে-তো হবে না। এমনিতেই তো দাবি থাকে ভ্যাট কমান-ট্যাক্স কমান। সুতরাং ভ্যাট-ট্যাক্স সহনীয় পর্যায়ে রেখে ট্যাক্স গ্রহণের পরিধিটা বাড়ানোর বিষয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে এই ট্যাক্স নেটটা বাড়িয়ে রাজস্ব আরও বিস্তৃত করতে পারি। মোটকথা জোর করে করের পরিমাণ না বাড়িয়ে ট্যাক্সের নেট বাড়ানো হবে। আমাদের শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে ৫০ থেকে ৬০ লাখ কিন্তু কর দেয় মাত্র পাঁচ লাখ। চিকিৎসকদের করের আওতায় কি উদ্যোগ নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের যেসব সহকারী বসে থাকেন, তারা টাকা নেন কিন্তু রিসিট দেওয়া হয় না। এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের ইনসিস্ট করা যে আপনারা রিসিট দেন। আমি তো কোনো চিকিৎসককে দেখি না তারা রিসিট দেন।
মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক উপদেষ্টা : জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদেরা ‘জুলাই শহীদ’ এবং আহতরা ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামে পরিচিতি পাবেন বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। গতকাল উপদেষ্টা এ তথ্য জানান। জেলা প্রসাশকদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, তারা ‘জুলাই শহীদ’ নামে খ্যাত হবেন। এই নিরিখে তাদের পরিবারগুলো সনদ ও পরিচয়পত্র পাবেন। অভ্যুত্থানে যারা আহত হয়েছেন, তারা ‘জুলাই যোদ্ধা নামে’ খ্যাত হবেন। তারা এই নিরিখে সনদ ও পরিচয়পত্র পাবেন এবং অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও আজীবন চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। পাশাপাশি তারা ভাতাও পাবেন। তিনি বলেন, যারা জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা পাবেন সঞ্চয়পত্রের নিরিখে। চলতি অর্থ বছরেই তাদের সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। বাকি ২০ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্রের নিরিখে আগামী অর্থবছরের জুলাই মাস থেকে পাবেন।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহতদের তালিকা যাচাই সহজীকরণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, গণঅভ্যুত্থানে আহতদের তালিকার সঠিকতা যাচাই, ফাউন্ডেশন কর্তৃক শহীদ পরিবারকে অর্থ সহায়তা প্রদান এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য পিজি হাসপাতালসহ অন্যান্য বিশেষায়িত হাসপাতালে প্রেরণের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জুলাই অধিদপ্তর গঠনের প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, ‘আশা করছি চলতি সপ্তাহে অধিদপ্তর গঠন হয়ে যাবে। অধিদপ্তর করার নিরিখে একটি নীতিমালাও হয়েছে।’
আন্দোলনে আহতরা তিনটি ক্যাটাগরিতে সহায়তা পাবেন জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আহতরা আজীবন চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। তারা ভাতাও পাবেন। যারা গুরুতর আহত তারা এককালীন পাঁচ লাখ টাকা এবং প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। একটি অঙ্গহানি হয়েছে এমন আহত যারা আছেন তারা প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা ভাতা এবং এককালীন ৩ লাখ টাকা পাবেন। সামান্য আহত ছিলেন, চিকিৎসা নিয়েছেন, ভালো হয়ে গেছেন, তারা চাকুরিসহ পুনর্বাসন কর্মসূচিতে অগ্রাধিকার পাবেন। তারা কোনো ভাতা পাবেন না। আহতরা বিভিন্ন মাত্রায় প্রশিক্ষণ পাবেন। সরকারি, আধা-সরকারি ও অন্যান্য চাকুরিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের কর্মসংস্থান করা হবে। তারা মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ পাবেন বলেও জানান তিনি।
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে জানিয়ে ফারুক ই আজম বলেন, আজকের সভায় অনেক ডিসি অভিযোগ করেছেন, বিভিন্ন জায়গায় অনেকে মুক্তিযুদ্ধ না করেও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন। এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য জেলা প্রশাসকদের মধ্য থেকে আমাদের জানানো হয়েছে। তারা এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা চেয়েছেন।
ডিসিদের দেওয়া নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বলেছি, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল পুনর্গঠন হয়েছে। জামুকার যে আইনটি ছিল, তারা সেটিতে সংশোধনী আনছেন। মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞার নিরিখে এই সংশোধনী আসছে। এই সংশোধনী আসার পর মুক্তিযোদ্ধা সংসদও পুনর্গঠিত হবে। সংসদ পুনর্গঠিত হলে প্রত্যেক জেলায় জেলায় আমরা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করবো। যাদের আমরা শনাক্ত করতে পারবো তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
ফারুক ই আজম বলেন, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে জেলা প্রশাসকরা তাদের পর্যবেক্ষণ আমাদের কাছে উপস্থাপন করেছেন। সেগুলো আমরা শুনেছি। যে বিষয়গুলোতে তাদের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দেওয়ার, সেটি তাদের দেওয়া হয়েছে। আর যেসব বিষয়ে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সেগুলো আমরা নোট করে নিয়েছি এবং সেগুলো নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করবে। স্থানীয় পর্যায়ে পুর্নবাসন কার্যক্রম, কাবিখাসহ বিভিন্ন বরাদ্দগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য ডিসিদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই বরাদ্দের নিরিখে যে প্রকল্পগুলো গ্রামীণ অবকাঠামোতে গ্রহণ করা হবে, সেগুলো যাতে যথাযথভাবে হয়।
তিনি বলেন, বরাদ্দপত্রের ক্ষেত্রে আগের যে কেন্দ্রীয় প্রথা ছিল, সেটি আমরা পরিবর্তন করেছি। এগুলো সম্পর্কে তাদের ধারণা দিয়েছি। যেমন কম্বল আগে কেন্দ্রীয়ভাবে সংগ্রহ করে বিতরণ করা হতো। এখন সেটি মাঠ পর্যায়ে সংগ্রহ করে মাঠ পর্যায়ে বিতরণ করা হচ্ছে। একইভাবে গৃহ নির্মাণের সরঞ্জামগুলো স্থানীয় পর্যায়ে সংগ্রহ করে চাহিদার নিরিখে বিতরণ করা হবে। কোনোটাই আর কেন্দ্রীয়ভাবে রাখা হয়নি। গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রে কোনো রকমের বৈষম্য যেনো সৃষ্টি না হয়, এগুলো সম্পর্কে তাদের সতর্ক করা হয়েছে। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, মন্ত্রণালয়ের সাইক্লোন সেন্টারসহ যে স্থাপনাগুলো গ্রামীণ পর্যায়ে আছে, সেগুলোর যাতে যথাযথ ব্যবহার হয় সেই বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নৌ উপদেষ্টা : নৌ নিরাপত্তার জন্য নদীতে মোবাইল কোর্ট বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কার্য-অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। উপদেষ্টা বলেন, আমাদের দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ নদীর ওপর নির্ভরশীল। মাছ ধরা থেকে শুরু করে পণ্য পরিবহন অনেক কিছুই নদীর মাধ্যমে হয়ে থাকে। সেই জায়গা থেকে ডিসিরা নদীর নাব্যতা, নৌ নিরাপত্তা, ঘাট ও স্থলবন্দরের কথা বলেছেন। সেগুলো আমরা দেখছি এবং করছি। আমরা তাদের নদীতে মোবাইল কোর্ট বাড়ানোর কথা বলেছি।
তিনি বলেন, শ্রম মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে তাদের শিশুশ্রম বন্ধ করা ও তাদের পুনর্বাসনের বিষয়ে জানিয়েছেন। এগুলোর জন্য শ্রম মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে বেশকিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সেগুলো আমরা তাদের জানিয়েছি। তারপরও কোনও অসুবিধা হলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের কথা বলেছি।
ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শ্রম অসন্তোষের ব্যাপারে আমরা বলেছি, আপনারাই সমস্যা চিহ্নিত করবেন, আপনারাই কথা বলবেন। আপনারাই সরকার, আপনারাই কাজ করবেন। আমরা আপনাদের সাহায্য করবো। বালু মহল নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জে চোরাই বালু উত্তোলনের অভিযোগ এসেছিল। আমি দুই জেলার ডিসিকে বলেছি, তারা ব্যবস্থা নিয়েছেন। মেঘনা নদীর জন্য কুমিল্লার ডিসিকেও বলেছি।
নির্বাচন কমিশন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন মাঠে গিয়ে নির্বাচন করে না। নির্বাচন কমিশন একটি পলিসি দেয়, ফ্রেম ওয়ার্ক দেয়, সুপারভিশন করে। কিন্তু যেই মুহূর্তে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয়ে যায়, তারপর নির্বাচনের কমিশনের আইনগতভাবে আর কিছু করার নেই। তখন দায়িত্ব যায় রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে। এসময় আগামী নির্বাচন ভালো হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বিদ্যুৎ উপদেষ্টা : আসন্ন রমযানে বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় সচিবালয়, অফিস, ব্যাংক, বাসাবাড়ি ও মসজিদে এসির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রির (সেলসিয়াস) নিচে না নামানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, বিষয়টি পর্যবেক্ষণে বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দিষ্ট টিম কাজ করবে। কোথাও নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বিদ্যুৎ বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। ফাওজুল কবির খান বলেন, ডিসিদের সঙ্গে সড়ক মেরামত, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও রেলের বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা হয়েছে। আমি জেলা প্রশাসকের কাছে তুলে ধরেছি আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা। আমরা একটা খাদের মধ্যে অর্থনীতিকে পেয়েছি। ২০২১ সালে রিজার্ভ ছিল ৪২ বিলিয়ন ডলার। এসে পেয়েছি ২০ বিলিয়ন, বাকি সব অর্থ পাচার হয়ে গেছে।
রমযান মাসে লোডশেডিংয়ের বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আসলে বিদ্যুৎ অনেক খাতে অপচয় হয়, তা রোধ করার চেষ্টা চলছে। সেচের জন্য ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অতিরিক্ত লাগে। এছাড়াও রমযান মাসে মসজিদে তারাবির নামাযের পর ফ্যান লাইট বন্ধ করে না। সে বিষয়ে মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনকে জানানো হবে। সচিবালয় থেকেই বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের উদ্যোগ নেওয়া হবে উল্লেখ করে বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বলেন, বাড়ি ঘরে অযথা ফ্যান লাইট জ্বালিয়ে বিদ্যুৎ অপচয় করা যাবে না। রমযান মাসে যেন বিদ্যুৎ অপচয় না হয়, সেজন্য বিদ্যুৎ বিভাগের বিশেষ টিম কাজ করবে। যারা নিয়ম মানবে না আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবো।
দুদক চেয়ারম্যান : দুর্নীতি দমন কমিশন চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, সেবা প্রদানে জনগণ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সে বিষয়ে সচেতন থাকতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিকেলে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ডিসি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের অষ্টম অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
জেলা প্রশাসকদের সাথে দুর্নীতি দমন কমিশনের এ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী, কমিশনার (অনুসন্ধান) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহ্সান ফরিদ ও সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন উপস্থিত ছিলেন।
অনেক বড় দুর্নীতির অভিযোগই হয় না উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায় ছোট ছোট দুর্নীতিগুলো বিকশিত হয়, আমরা তাড়াতাড়ি খবর পাই। কিন্তু পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে যে বড় বড় দুর্নীতিগুলো হয় সেটার কোন অভিযোগই হয় না। ধামাচাপা দেওয়া হয়। যার সঙ্গে ঠিকাদার, দপ্তর প্রধান কিংবা সাংবাদিক হোক, এমনকি সাংবাদিকও বড় দুর্নীতির বিষয়গুলো তুলে ধরেন না। যেগুলোর নিউজ হয় না। আমাদের আবেদন থাকবে বড় দুর্নীতির নিউজ যেন বেশি বেশি সামনে আসে। দুর্নীতির খবর বেশি আসুক তাতে কোনো সমস্যা নেই। আমরা যেন দুর্নীতির খবরকে ধামাচাপা না দেই। দুর্নীতির খবর যেন না লুকাই। জেলা প্রশাসকরা আশ্বস্ত করেছেন তারা এ নিয়ে কাজ করবেন’। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেক জেলায় জেলায় কার্যালয় নেই, সেটা সত্যি। বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির সম্মুখীন হই, সেটা কমাবো কীভাবে সেটাই বড় প্রশ্ন। আমাদের সামনে এ ধরনের সংকটের কথা এসেছে। প্রধান উপদেষ্টার গতকালের ভাষণের বড় একটা অংশ ছিল দুর্নীতি নিয়ে। গতকালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে সবচেয়ে বড় বার্তা ছিল পেছনের দুর্নীতি দমনের চেয়ে, সামনে যেন দুর্নীতির না হয় সেই বার্তা প্রদান।
ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য বর্তমানের দুর্নীতি যেন বন্ধ করতে পারি, পুরাতনগুলোর তদন্ত ও বিচারকাজ স্বল্প সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারি। দুদক মূলত ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ সময় ব্যয় করে পুরাতন দুর্নীতি নিয়ে। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, পুরাতন দুর্নীতি নিয়ে ২০ শতাংশ, বর্তমানের দুর্নীতি নিয়ে ৩০ শতাংশ এবং ভবিষ্যতের দুর্নীতি প্রতিরোধ করার জন্য ৫০ শতাংশ সময় ব্যয় করা উচিত। আমরা এই নির্দেশনা গ্রহণ করেছি। ওই নির্দেশনা জেলা প্রশাসকদেরও দিয়েছি। কারণ জেলা প্রশাসক হচ্ছে মাঠ পর্যায়ে প্রধান কর্মকর্তা। ঘটনা যেখানেই ঘটুক, জেলা প্রশাসককেই আগে জানতে হবে। আবার দুর্নীতির প্রসঙ্গ আসলে জেলা প্রশাসককেই জবাবদিহি করতে হয়।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির ধারণাসূচক (সিপিআই) প্রতিবেদনের সঙ্গে দুদক একমত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রথমত আমরা পরীক্ষা করি নাই। সিপিআই একটি ম্যাট্রিক্সের ওপর ভিত্তি করে প্রকাশ করা হয়। ম্যাট্রিক্স নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে কিন্তু এটা ১৮০টি দেশ গ্রহণ করে। আমরা এর বাইরে থাকতে পারি না। এর মানে এটার সঙ্গে অনেকাংশেই আমরা একমত।
তিনি বলেন, ‘বিরোধী মতের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। বিরোধ দুর্নীতিবাজ এবং দুর্নীতিগ্রস্তদের সঙ্গে। এমনকি আমি যদি দুর্নীতিবাজ হই, আমাদের সঙ্গেও বিরোধ থাকতে পারে। যাদের আইনের আওতায় আনা চূড়ান্ত লক্ষ্য। ভবিষ্যতে দুর্নীতি যেন প্রতিরোধ করতে পারি, আমাদের চেষ্টা থাকবে।