‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাও সম্ভব নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন ‘ইনক্লুসিভ ডেমোক্রেসি’ শীর্ষক কর্মশালায় অংশ নেয়া বক্তারা।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) ঢাকার একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত তরুণ রাজনীতিকদের মধ্যে মতাদর্শভিত্তিক সংলাপ এবং গণতান্ত্রিক চর্চাকে উৎসাহিত করতে “ইনক্লুসিভ ডেমোক্রেসি” শীর্ষক কর্মশালায় বক্তারা এ কথা বলেন।

কর্মশালার সূচনা বক্তব্য দেন সিজিএস-এর প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান। অনুষ্ঠানে সিজিএস এর নির্বাহী পরিচালক পারভেজ করিম আব্বাসী এবং এফইএস বাংলাদেশ এর রেসিডেন্ট রিপ্রেসেন্টেটিভ ফিলিক্স গ্রাদেস বক্তব্য রাখেন।

সেন্টার ফর গভার্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস)-এর প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান বলেন, যখন গণতন্ত্র বা রাজনীতি নিয়ে কথা হবে, সেখানে জনগণের ধারণা বা পারসেপশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নির্বাচন নিজে গণতন্ত্রের নিশ্চয়তা দেয় না, তবে নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্রের প্রক্রিয়ায় প্রবেশ সম্ভব না। বাংলাদেশে সামনে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, এবং সেটি কীভাবে হয় তা দেখার বিষয়। এই দেশে কারা প্রান্তিক বা মার্জিনালাইজড, সেটি বহুমাত্রিক একটি প্রশ্ন। তথ্যের দিকে তাকালে দেখা যায়, দেশে প্রায় ৫৫টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল থাকলেও ‘জুলাই সনদে’ স্বাক্ষর করেছে মাত্র ১৮টি দল। দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশ নারী, কিন্তু এই ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ায় নারী বা অন্যান্য সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব খুব বেশি দেখা যায়নি। তাই কিভাবে এই প্রক্রিয়ায় ঐক্যমত্য তৈরি হলো, সেটিই এখন ভাবার বিষয়।

ফ্রেডরিখ এবার্ট স্টিফটুং (এফইএস) এর সহোযগিতায় সেন্টার ফর গভার্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) এই কর্মশালার আয়োজন করে। এটি সিজিএসের একটি ধারাবাহিক উদ্যোগ। এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য দেশের তরুণ রাজনৈতিক কর্মীদের মাঝে মতাদর্শগত সংলাপকে উৎসাহিত করা এবং গণতান্ত্রিক সহাবস্থান ও বহুত্ববাদের চর্চা জোরদার করা।

পারভেজ করিম আব্বাসী বলেন, অতীতের নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় দেখা গেছে যারা ক্ষমতায় যেতেন বা যেতে পারতেন, নির্বাচনের পর তাঁদের ক্ষমতা আকাশসম হয়ে যেত আর যারা পরাজিত হতো তাঁদের কে খুজেও পাওয়া যেত না। যখন রাজনৈতিক সংখ্যালঘুদের প্রসঙ্গ উঠে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিষয়টি সেখানে স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসে। এছাড়াও, অর্থনৈতিক বঞ্চনা আমাদের একটি বড় সমস্যা, যেখানে একই গোষ্ঠী বারবার সুবিধা ভোগ করে আসছে। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বঞ্চনাও এখন আরও স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে, যা অনেক সময় জোরপূর্বক এবং কখনও কখনও রাষ্ট্রের সহায়তায় সমাজে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

ফিলিক্স গ্রাদেস বলেন, এফইএস সামাজিক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে গঠিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এফইএস গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে আসছে গবেষণা, রাজনৈতিক আলোচনা ও জনআলোচনার মাধ্যমে। বাংলাদেশে এফইএসের যাত্রা শুরু হয় ২০১৩ সালে, এবং তখন থেকেই মূলত অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণ বিষয়ে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি আশা করেন, বাংলাদেশের জনগণ একটি ন্যায্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন অভিজ্ঞতা লাভ করবে। তিনি বলেন যে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর পাশেই থাকছে এফইএস। সংখ্যালঘুদের অধিকার প্রশ্নটি বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তিনি আরো বলেন সংখ্যাগরিষ্ঠের দৌরাত্ম্য ও ক্ষমতার অপব্যবহার কতিপয়ের হাতে ক্ষমতার অপব্যবহারের চেয়ে কোনো অংশে ভালো নয়।

কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন লেখক ও গবেষক মাহা মির্জা।

দিনব্যাপী এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন দেশের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা। অংশগ্রহণকারীরা রাজনৈতিক আদর্শের ভিন্নতা থাকা সত্বেও একসঙ্গে আলোচনা করেন গণতন্ত্রের ভিত্তি, আদর্শগত ব্যবধান, ও সমসাময়িক রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে।