ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত সংক্ষুব্ধদের আপত্তি নিয়ে শুনানি করছে নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার(২৬ আগস্ট) বেশ কয়েকটি আসনের উপর আপত্তি নিয়ে শুনানি করে কমিশন। এদিন শুনানিতে অংশ নেওয়া মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের প্রতিনিধিরা তাদের জেলায় সংসদীয় আসনের সংখ্যা বিদ্যমান তিনটি থেকে বাড়িয়ে চারটি করার দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে গাজীপুরের প্রতিনিধিরা জেলায় সংসদীয় আসনের সংখ্যা পাঁচ থেকে বাড়িয়ে ছয়টি করার উদ্যোগের জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রশংসা করেছেন।

এর আগে সোমবার বাগেরহাট জেলার প্রতিনিধিরা ৩০০টি আসনের সাম্প্রতিক খসড়া সীমানা নির্ধারণে জেলায় সংসদীয় আসনের সংখ্যা চার থেকে কমিয়ে তিনটি করায় ইসির সমালোচনা করেন। আসন বিন্যাসের এমন সিদ্ধান্তের ফলে ৩৯টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনা হয়।

আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে রবিবার (২৪ আগস্ট) থেকে নির্বাচন কমিশন সংসদীয় আসন পুনর্নির্ধারণের শুনানি শুরু করেছে। আপত্তি এবং সুপারিশ নিষ্পত্তির জন্য ২৭ আগস্ট পর্যন্ত শুনানি করবে ইসি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে মঙ্গলবারের শুনানিতে গাজীপুরের প্রতিনিধিরা তাদের জেলায় আসন সংখ্যা ছয়টিতে উন্নীত করার পদক্ষেপের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

ইসির সিনিয়র সচিবের পরিচালনায় আরও চার নির্বাচন কমিশনার - আবদুর রহমানেল মাসুদ, তাহমিদা আহমেদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুল ফজল মো. সানাউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

গাজীপুর-৩ আসনের প্রাক্তন সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা একেএম ফজলুল হক মিলন বলেন, 'আমাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা হলো গাজীপুরে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।'

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রশংসা করে তিনি বলেন, সিইসি ও অন্যান্য কমিশনাররা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় সততা, আন্তরিকতা এবং নিষ্ঠার দিক থেকে এগিয়ে রয়েছেন। 'গাজীপুরের জনগণের প্রতি আপনাদের উদারতার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আপনারা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।'

মিলন কমিশনকে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দিয়ে বলেন, 'আমরা আপনার পাশে থাকব এবং সম্ভাব্য সকল সহায়তা দেবো। ন্যায্য দাবির জন্য আন্দোলন হোক বা সংগ্রাম, আমরা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসিকে সমর্থন ও সহযোগিতা করব।'

জবাবে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, 'আপনার আগমনে আমরা ধন্য।'

শুনানি থেকে বেরিয়ে এসে গাজীপুর শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মঞ্জুরুল করিম রনি বলেন, বেশ কয়েকজন অংশগ্রহণকারী নির্দিষ্ট কিছু থানা এবং ওয়ার্ডকে নির্দিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ছোটখাটো দাবি উত্থাপন করেন। 'বাকিরা ইসির পক্ষে ছিলেন। আসন বৃদ্ধির জন্য আমরা কমিশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছি,' বলেন তারা।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক একেএম ফজলুল হক মিলন সাংবাদিকদের বলেন, গাজীপুরের নির্বাচনী এলাকা পাঁচ থেকে বাড়িয়ে ছয়টি করা হয়েছে। 'আমরা ইসিকে অভিনন্দন জানাই এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আমাদের কিছু ছোটখাটো দাবি ছিল, যা অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে উপস্থাপন করা হয়েছে।'

এদিকে, মানিকগঞ্জ এবং মুন্সীগঞ্জ জেলার প্রতিনিধিরা দাবি করেছেন, তাদের জেলায় সংসদীয় আসনের সংখ্যা ২০০৮ সালের সীমানা নির্ধারণের আগে যেমন ছিল, অর্থাৎ বিদ্যমান তিনটি থেকে চারটি করা হোক।

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি ব্যারিস্টার খায়রুল আলম চৌধুরী বলেন, ২০০১ সাল পর্যন্ত মানিকগঞ্জে চারটি আসন ছিল। কিন্তু ২০০৮ সালে এই সংখ্যা কমিয়ে তিনটি করা হয়, যার ফলে সংসদে প্রতিনিধিত্ব কমে যায়।

তিনি বলেন, 'যেহেতু মাত্র তিনটি আসন রয়েছে, মানিকগঞ্জের জন্য বরাদ্দও কমেছে। আমরা চারটি আসন পুনর্বহালের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছি।'

মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আফরোজা খানম রিতা বলেন, তিনি মানিকগঞ্জের সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে ইসিতে এসেছিলেন। '২০০১ সালের মতো চারটি আসনের দাবি মানিকগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে রয়েছে।'

মুন্সীগঞ্জ নাগরিক আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে একজন প্রতিনিধি বলেন, মুন্সীগঞ্জে এখন তিনটি আসন রয়েছে। তিনি আরও বলেন, 'আমরা ২০০১ সালের মতো আসন সংখ্যা বাড়িয়ে চারটি করার দাবি জানিয়েছি। আমরা প্রবাসীদের ভোটাধিকারের বিষয়টিও তুলে ধরেছি।'

গত ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশন ৩০০টি নির্বাচনী এলাকার একটি খসড়া সীমানা প্রকাশ করে। এর ফলে ১৪টি জেলার ৩৯টি নির্বাচনী এলাকার সীমানায় পরিবর্তন আনা হয়।

খসড়া অনুসারে, গাজীপুরের নির্বাচনী এলাকায় আসন পাঁচ থেকে বাড়িয়ে ছয়টি এবং বাগেরহাটের নির্বাচনী এলাকায় আসন চার থেকে কমিয় তিনটি করা হয়।

নতুন সীমান নির্ধারণের ফলে পরিবর্তন আসা ৩৯টি নির্বাচনী এলাকা হলো: পঞ্চগড়-১ ও ২; রংপুর-৩; সিরাজগঞ্জ-১ ও ২; সাতক্ষীরা-৩ ও ৪; শরীয়তপুর-২ ও ৩; ঢাকা-২, ৩, ৭, ১০, ১৪ ও ১৯; গাজীপুর-১, ২, ৩, ৫ ও ৬ নম্বর আসন, নারায়ণগঞ্জ-৩, ৪ ও ৫; সিলেট-৩ ও ৩; ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩, কুমিল্লা-১, ২, ১০ ও ১১, নোয়াখালী-১, ২, ৪ ও ৫, চট্টগ্রাম-৭ ও ৮ এবং বাগেরহাট-২ ও ৩।

খসড়াটি সীমানা প্রকাশের পর কমিশন ৩টি নির্বাচনী এলাকার প্রায় ১ হাজার ৭৬০টি আবেদন পেয়েছে।

রবিবার(২৪ আগস্ট) কুমিল্লা অঞ্চলের ছয়টি জেলার ১৮টি আসনের উপর ৮১১টি আবেদনের শুনানি করেছে ইসি। এর মধ্যে ৪২৯টি বিপক্ষে এবং ৩৮২টি সমর্থন করেছে। সোমবার(২৫ আগস্ট) চট্টগ্রাম, খুলনা এবং বরিশাল অঞ্চলের নয়টি জেলার ২০টি আসনের ৫১৩টি আবেদনের শুনানি হয়েছে। এর মধ্যে কমিশনের বিপক্ষে ছিল ২৩৮টি ও পক্ষে ছিল ২৭৫টি।

মঙ্গলবার ঢাকা অঞ্চলের ছয়টি জেলার ২৭টি আসনের আবেদনের শুনানি হয়েছে, আর রংপুর, রাজশাহী, সিলেট এবং ঢাকা অঞ্চলের ১২টি জেলার ১৮টি আসনের আবেদনের শুনানি হবে বুধবার।

২৭ আগস্ট শুনানি শেষ হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী এলাকার চূড়ান্ত সীমানা প্রকাশ করবে। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।