নারী অধিকার কমিশনের প্রতিবেদনের সাথে এক মত নন দেশের আলেম সমাজ। আজ রোববার দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরাম এক যৌথভাবে বিবৃতি প্রদান করে এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠি দ্বারা পরিচালিত নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সাথে আমাদের দেশের স্বকীয়তা,মৌলিক বিশ্বাস ও বাঙালি নারীর কোন সম্পর্ক নাই । তারা এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করার আহবান জানিয়েছেন।
শীর্ষ উলামায়ে কেরাম বলেন, নারী সংস্কার কমিশন গতকাল মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নিকট যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তার প্রস্তাবনা, ভাষা,যুক্তি গোটা নেশানকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। ইটা বিজাতীয় ধর্মবিমুখ,পরিবার বিচ্ছিন্ন ও ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদের বিকৃত রুচির বহিঃপ্রকাশ। এই প্রতিবেদন তথাকথিত ফ্যামিনিস্টদের পক্ষ থেকে এদেশের নারীর হাজার বছরের ধর্ম-বিশ্বাস, নৈতিকতা, ঐতিহ্য ও সভ্যতা-সংস্কৃতির সাথে সম্পুর্ণরূপে সাংঘর্ষিক।
এই বিতর্কিত প্রশ্নবিদ্ধ কমিশন বাংলাদেশের সাধারণ নারী সমাজের আদৌ কোন প্রতিনিধিত্ব করে না।
ওলামায়ে কেরাম বলেন, প্রতিবেদনে এক জায়গায় উপ-শিরোনাম করা হয়েছে, “পুরুষের ক্ষমতা ভেঙ্গে গড়ো সমতা”। এই ধরণের ভাষা ও প্রতিপাদ্যই নির্ধারিত ইসলামবিদ্বেষী গোষ্ঠীর চিন্তা ও সমাজ বিচ্ছিন্নতা প্রমান করে। বাঙালি নারী কখনোই পুরুষকে প্রতিপক্ষ ভাবেনি বরং সহযোগী ও সহকর্মী ভেবে সামাজিক সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। পুরুষের সাথে নারীর সম্পর্ক ক্ষমতার না বরং মায়া-মমতা ও ভালোবাসার। নারী জাতি আমাদের মা, সহধর্মিনী, বোন কন্যা ইত্যাদি সুন্দর পরিভাষায় সসম্মানিত। মায়া-মমতা ও ভালোবাসার সম্পর্কের কারণেই বাঙালি পুরুষ নারীর মর্যাদা রক্ষায় সাধ্যমত প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকে। সাবেক ফ্যাসিবাদী সরকার এদেশের সাধারণ জনগণের উপরে মাত্রাতিরিক্ত নির্যাতন জুলুম চালিয়েছে বিশেষ করে আলেম-ওলামাদেরকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালিয়েছে, বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকার আলেমদের এবং ইসলামী মূল্যবোধের যথাযথ মর্যাদা দিবে বলে আমরা আশা করি।
তাঁরা আরো বলেন, পূর্ববর্তী ফ্যাসিস্ট সরকার যেভাবে বাহাত্তরের সংবিধানের ফেরত যাওয়ার আড়ালে দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতিসহ সব ক্ষেত্র থেকে যেভাবে ইসলামের শিক্ষা আদর্শকে নির্মূল করে নাস্তিক্যবাদী নারী নীতি জোর করে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল, আবারো যদি সে ধরনের ঘৃণা প্রয়াস চালানো হয় তাহলে তাদেরকেও ফ্যাসিস্টদের ভাগ্যবরণ করতে হবে।
শীর্ষ উলামায়ে কেরাম মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে জোর দাবি জানিয়ে বলেন ধর্মবিদ্বেষী নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনকে অবিলম্বে বাতিল এবং তাদের বিতর্কিত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
বাংলাদেশের নারী সমাজের সঠিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে দেশের নারী সমাজের জীবনবোধ ও ধর্মবিশ্বাস, নৈতিকতা, এতিহ্য, শিক্ষা, সভ্যতা-সংস্কৃতির অনুকুল সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করতে হবে।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য সংস্কারের নামে সরাসরি কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী প্রস্তাবনা পেশ করার মতো স্পর্ধা যারা দেখিয়েছে এবং তাদের দোসরদেরকে এখনই থামিয়ে দিতে হবে।
শীর্ষ ইসলামিক স্কলারগণ আরো বলেন, অনতিবিলম্বে এ প্রশ্নবিদ্ধ প্রস্তাবনা বাতিল করে এ দেশের আপামর জনতাকে শান্ত করুন। অন্যথায় উদ্ভুত যেকোনো পরিস্থিতির জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই দায় নিতে হবে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন-অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন, ইসলামী কানুন বাস্তবায়ন পরিষদের আমীর মাওলানা আবু তাহের জিহাদী, মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ আশরাফী, সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদের মহাসচিব ড.মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, ,হক্কানী পীর মাশায়েখ পরিষদের মহাসচিব মাওঃ শাহ আরিফ বিল্লাহ সিদ্দীকি, খেলাফাতে রববানীর আমির মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদী,মাও: আহমদ আলী কাসেমী,পীর মাওলানা শরীফ হোসাইন,মুসলিম জনতা পরিষদের আমির মাওলানা আজিজুর রহমান আজিজ,মুফতি মাওঃ নাসির উদ্দীন কাসেমী,শাহ এমদাদুল্লাহ পীর সাহেব,হক্কানী ত্বরীকত মিশনের আমির শাইখ নুরুল ইসলাম ফয়েজী, হক্কানী ত্বরীকত মিশনের জেনারেল সেক্রেটারী আল্লামা মুস্তাক আহমাদ, ইসলামী ঐক্য মঞ্চ সভপতি মাওলানা ইদ্রিস হোসাইন,সেক্রেটারী আবদুস সাত্তার, খাদেমুল ইসলাম জামাত আমির মাওলানা মুহিবুল্লাহ, জমিয়াতে উলামা দেওবন্দ পরিষদের সভাপতি হযরত মাওলানা মুহাদ্দেস আবদুল্লাহ কাসেমী ও সেক্রেটারী হযরত মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক কাসেমী, মীরের সরাইর পীর সাহেব মাওঃ আঃ মোমেন নাছেরী, টেকের হাটের পীর সাহেব মাওঃ কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী, জাতীয় খতীব পরিষদের আমীর মুফতি মাওলানা মাউদুর রহমান, হুফ্ফাজ পরিষদ সভাপিত হাফেজ লেয়াকত হোসাইন ও সেক্রেটারী মুফতি মাহবুবুর রহমান, ইসলামী অন লাইন এ্যাক্টিভিটস সভাপতি শায়খুল হাদীস মাওলানা আবদুস সামাদ ও মহাসচিব মুফতি আবু আনাস, কওমী হাফেজ পরিষদ সভাপতি মুফতি নূরুল আমিন গোপালগন্জী হুজুর,সম্মিলিত ইসলামিক জোটের আমির মাওলানা আবদুল বাকি, সেক্রেটারী জেনারেল মাওঃ মনিরুজ্জামান, জাতীয় ইমাম সোসাইটির মহাসচিব মুফতি জোবায়ের আহমদ কাসেমী, ইসলামী সমাজ সভাপতি মাওলানা রফিকুর রহমান আল কাশেমী ও সেক্রেটারী জেনারেল মুফতি জাকারিয়া, ইসলামী জনতা সভাপতি মুফতি আবদুল কুদ্দুস, মহাসচিব হাফেজ আবুল কাসেম, ইমাম কল্যাণ সমিতি সভাপতি পীর সাহেব মাওলানা কুতুবুল ইসলাম মাজহারী, সেক্রেটারী জেনারেল মুফতি আবু সালেহ, আহকামে শরিয়াহর আহবায়ক মুফতি মাহবুবুর রহমান, সদস্য সচিব আব্দুস সবুর মাতুব্বর, অধ্যক্ষ মাওলানা লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, অধ্যক্ষ আমিরুজ্জামান, মুহাদ্দিস আবু বকর সিদ্দিক, ইমাম মুয়াজ্জিন পরিষদ সেক্রেটারী মুফতি মাহমুদুল হাসান, মাদ্রাসা কল্যাণ পরিষদের সভাপতি- মাওঃ মহিউদ্দীন মাসুম, সেক্রেটারী মাওলানা এখলাছ উদ্দীন, তালিমুল কুরআন সোসাইটির আহবায়ক মুফতি আবদুল হালিম, মহাসচিব মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, হাফেজ মুফতি মাওঃ আব্দুর রহমান, মাওলানা মুহাম্মদ ইখলাস উদ্দিন,ইসলাহুল উম্মাহ সভাপতি মাওঃ আবু হানিফ নেছারী, অধ্যক্ষ মাওলানা মশিউর রহমান, হাফেজ ফারুক হোসাইন, প্রফেসর মাওঃ মুফতি ইসহাক মাদানী,মাওঃ এহতেশামুল হক, নাস্তিক-মুরতাদ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাওঃ আব্দুল কুদ্দুস আল কাসেমী, মহাসচিব শাইখ আব্দুল কাউয়ূম,জাতীয় ইমাম উলামা পরিষদের সভাপতি শায়খুল হাদীস মাওলানা ফজলুর রহমান ও মহাসচিব মাওলানা এবি.এম শফিকুল্লাহ, মাদরাসা মসজিদ ও খানকা ঐক্যপরিষদ সভাপতি মাওলানা রফিকুর রহমান ও সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা গোলাম কিবরিয়া,আল কুরআন ফাউন্ডেশন সভাপতি মুফতি জামাল উদ্দীন ও সেক্রেটারী মুফতি ইসহাক প্রমুখ।