DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

জাতীয়

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ঢাকায় আসছেন আজ

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ৪ দিনের সফরে আজ বিকালে ঢাকায় আসছেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে তিনি এই সফর করছেন। মূল এজেন্ডা রোহিঙ্গা সংকট হলেও বাংলাদেশে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বার্তাও থাকতে পারে। রোহিঙ্গাদের জন্য বিদেশি সাহায্য কমে যাওয়া, সেপ্টেম্বরে ঢাকায়

অনলাইন ডেস্ক
guterres-67d1c2534a9b5-67d1f788259e2-67d254592f11f

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ৪ দিনের সফরে আজ বিকালে ঢাকায় আসছেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে তিনি এই সফর করছেন। মূল এজেন্ডা রোহিঙ্গা সংকট হলেও বাংলাদেশে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বার্তাও থাকতে পারে।

রোহিঙ্গাদের জন্য বিদেশি সাহায্য কমে যাওয়া, সেপ্টেম্বরে ঢাকায় রোহিঙ্গাসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠান, আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গাদের ওপর পরিচালিত জাতিগত নিধন ও গণহত্যার বিচার এবং প্রত্যাবাসনের মতো ইস্যু এই সফরকালে প্রাধান্য পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জাতিসংঘের মৌলিক মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মহাসচিব গুতেরেস বৈচিত্র্যপূর্ণ সমাজে বিশ্বাসী। তাই তিনি পবিত্র রমজান মাসে মুসলমানদের মতো রোজা পালন করবেন। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে গিয়ে এক লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানের সঙ্গে তিনি এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইফতার করবেন। এ ছাড়া বাংলাদেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও আলোকপাত করতে পারেন জাতিসংঘ মহাসচিব।

এ বিষয়ে কী বার্তা তিনি দেবেন সেটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। শনিবার সিভিল সোসাইটির সঙ্গে অনুষ্ঠেয় বৈঠকটিকে তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়া আন্তর্জাতিক মহলের প্রত্যাশা। গুতেরেস একই প্রত্যাশার কথা বলতে পারেন বলে ধারণা করা যায়। এ বিষয়ে জাতিসংঘ থেকে কারিগরি সহযোগিতার আশ্বাস দিতে পারেন।

এ ছাড়া জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন তাদের প্রতিবেদনে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে প্রায় ১৪০০ মানুষ মারা যাওয়ার তথ্য দিয়েছে। ফলে এমন হত্যাকাণ্ডের জন্য জবাবদিহিতার প্রসঙ্গও আনতে পারেন জাতিসংঘ প্রধান। এ ছাড়া অনেক কর্মসূচিতে অংশ নেবেন তিনি।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের বাংলাদেশ সফর সম্পর্কে আলোকপাত করেন। প্রেস সচিব বলেন, সফরের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবেন। সফরকালে গুতেরেস রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের নেতা, যুব প্রতিনিধি ও নারীদের সঙ্গে তিনটি পৃথক বৈঠকে অংশ নেবেন।

মিয়ানমারের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কী উদ্যোগ নেবে? জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গারা যাতে ফেরত যেতে পারে সে জন্য সরকার কাজ করছে। আমাদের কূটনীতিক তৎপরতা আছে।’ শফিকুল আলম বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টিকে বিশ্ব মানচিত্রে অগ্রাধিকারের জায়গায় নিয়ে আসতে চান প্রধান উপদেষ্টা।’

এই সফরে রোহিঙ্গা ইস্যু গুরুত্ব পেলেও সংস্কার ও আগামী নির্বাচন ইস্যুতে জাতিসংঘ মহাসচিব ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানানো হয়। উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, ‘বিকাল ৫টায় বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখবেন জাতিসংঘের মহাসচিব।

১৪ মার্চ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবেন তিনি। ওইদিন ১ লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে অ্যান্তোনিও গুতেরেস ও প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ইফতার করবেন।’ ১৫ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন আজাদ মজুমদার।

জাতিসংঘ মহাসচিব ঢাকায় অবতরণের পর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাবেন। সফরের দ্বিতীয় দিন প্রথমে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান সাক্ষাৎ করবেন। তারপর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করবেন অ্যান্তোনিও গুতেরেস। বৈঠক শেষে জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে একই প্লেনে কক্সবাজার যাবেন প্রধান উপদেষ্টা। কক্সবাজারে প্রধান উপদেষ্টার কিছু কর্মসূচি আছে।

তিনি কক্সবাজার বিমানবন্দরের একটি প্রকল্প উদ্বোধন এবং একটি জলবায়ু উদ্বাস্তু কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন। পাশাপাশি একটি মডেল মসজিদও উদ্বোধন করবেন।

তিনি আরও জানান, জাতিসংঘ মহাসচিব কক্সবাজার থেকে সরাসরি চলে যাবেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সেখানে একটি ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা নিয়ে একটি প্রেজেন্টেশন দেওয়া হবে। সেটার পর যাবেন রোহিঙ্গা কালচারাল সেন্টারে। রোহিঙ্গারা সেখানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করবেন। রোহিঙ্গা তরুণদের সঙ্গেও জাতিসংঘ মহাসচিব বসবেন এবং কক্সবাজারে একটি লার্নিং সেন্টার পরিদর্শন করবেন। এই প্রোগ্রামগুলো শেষ হলে তিনি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করবেন। সেখানে প্রধান উপদেষ্টাও অংশ নেবেন।

আজাদ মজুমদার জানান, প্রধান উপদেষ্টা এবং জাতিসংঘ মহাসচিব সেদিনই কক্সবাজার থেকে ফিরে আসবেন। পরদিন শনিবার মহাসচিব কর্মব্যস্ত দিন কাটাবেন। ঢাকায় জাতিসংঘের কার্যালয় পরিদর্শন করবেন। দুপুরে চারটি সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করবেন, এরপর সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। শনিবার তিনি সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন। সংবাদ সম্মেলনের পর তার সম্মানে প্রধান উপদেষ্টার আয়োজিত ইফতার ও ডিনারে যোগ দেবেন। পর দিন তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে যাবেন।

প্রেস সচিব বলেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক রোহিঙ্গা কনফারেন্স বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে। ‘রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টিকে বিশ্ব মানচিত্রে অগ্রাধিকারের জায়গায় নিয়ে আসতে চান প্রধান উপদেষ্টা।’

শফিকুল আলম বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা কমে গেছে অনেক। আমরা আশা করছি জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফর মানবিক সহায়তাগুলো জোগাড় করার ওপর একটি ভূমিকা রাখবে। তাদের পুষ্টি সহায়তা খুবই জরুরি। আমরা চাই রোহিঙ্গাদের পুষ্টির চাহিদা যাতে কোনোভাবে কম্প্রোমাইজ না হয়। সেজন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজন হয়। প্রতি মাসে প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডলার রোহিঙ্গাদের জন্য দরকার। আমরা আশা করছি জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফর এখানে বিশ্বের নজর ফিরিয়ে আনবে। রোহিঙ্গাদের জন্য যে সহায়তা আসে সেটি যেন বন্ধ না হয়, তাতে যেন কোনো প্রভাব না পড়ে।

তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা বিষয়ে সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক সম্মেলন করবে জাতিসংঘ। তার সঙ্গে ফিনল্যান্ড এবং মালয়েশিয়া যুক্ত হয়েছে কো-স্পন্সর হিসাবে। আমরা আশা করছি জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরকে ঘিরে এই আয়োজনে আরও ডেভেলপমেন্ট হবে। আমরা চাচ্ছি এই সম্মেলনের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার একটা দ্রুত সমাধান হোক।

এই সফরে রোহিঙ্গা ইস্যু গুরুত্ব পেলেও সংস্কার ও আগামী নির্বাচন ইস্যুতে জাতিসংঘ মহাসচিব ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানানো হয়।