প্রস্তাবিত প্রশিক্ষণ প্রকল্পের লক্ষ্য হলো দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় গণপ্রতিরক্ষা তৈরির প্রস্তুতি, সশস্ত্র বাহিনী গঠন করা নয়। যে কোনো ধরনের মিলিশিয়া গঠন নয় বলে জানালেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

তবে আত্মরক্ষামূলক মৌলিক প্রশিক্ষণ বলা হলেও, এ প্রকল্প নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া, নানা জল্পনা-কল্পনা। যমুনা টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষৎকারে এর জবাব দেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

উপদেষ্টার বক্তব্যে উঠে এসেছে, কিছু মহল এই প্রকল্পকে অনভিপ্রেতভাবে ব্যাখ্যা করে ভুল ধারণা ছড়াচ্ছে; এমন গুজবও ছড়ানো হচ্ছে যে ওই প্রশিক্ষণে আক্রমণাত্মক অস্ত্র নিয়ে বাস্তবভিত্তিক সামরিক প্রশিক্ষণ হবে।

তিনি বলছেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন প্রকল্পটি সরকার অনুমোদিত এবং অংশগ্রহণকারীদের নির্বাচন স্বচ্ছ পদ্ধতিতে করা হচ্ছে।

প্রকল্প‑সংক্রান্ত মূল খুঁটিনাটি জানা গেছে দেশজুড়ে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সি যুবকদের জুডো, কারাতে, তায়কোয়ান্দো ও শুটিং (এয়ারগান) প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। এই অধিবেশনগুলো বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)-তে অনুষ্ঠিত হবে এবং মোট ৮ হাজার ৮৫০ জন প্রশিক্ষণার্থীর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

প্রশিক্ষণগুলো ১০০টি স্লটে ভাগ করে আগামী দুই বছরের মধ্যে আবাসিকভাবে কার্যকর করা হবে। প্রকল্পের মোট বাজেট নির্ধারিত হয়েছে ২৮ কোটি টাকা।

আসিফ মাহমুদ বলেন, এখানে যে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে তা বেসিক আত্মরক্ষামূলক দক্ষতা। কাউকে অস্ত্র সরবরাহ করা হবে না, কোথাও রিক্রুট করা হবে না; প্রশিক্ষণ শেষ করে সবাই তাদের নিয়মিত কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাবেন। তাদের তথ্যভান্ডার রাখা হবে, যাতে সংকটের সময় প্রয়োজনে যোগাযোগ করা যায় এটাই প্রকল্পের সীমা।

তিনি আরও বলেন, অনেকেই এ প্রকল্পকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছে এগুলোর পেছনে কিছু মহল ‘ভারতপন্থি’ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আস্থা থেকেই কাজ করছে। আমাদের নীতিমালা কোনো বাইরের শক্তির নির্দেশে গৃহীত হবে না।

প্রকল্পটিকে ‘পাইলট’ হিসেবে উপস্থিত করেছেন উপদেষ্টা; তাঁর ভাষায়, এটি জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে একটি প্রাথমিক প্রয়াস যাতে কোনো সংকট বা হুমকির সময় সমগ্র সমাজ দ্রুত সাড়া দিতে সক্ষম হয়। তিনি সতর্ক করে বলেন, বিশাল রাষ্ট্রগুলোর আগ্রাসী মনোভাব আজকাল স্পষ্ট।

অন্তর্বর্তী সরকারের পর আমরা এমন কোনো পরিস্থিতির মুখে পড়েছি যেখানে তৈরি থাকতে হবে। গণপ্রতিরক্ষা নিশ্চিত করাই সার্বভৌমত্ব রক্ষার বিকল্প নয়।

তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই উদ্যোগকে ১৯৭২ সালের রক্ষী বাহিনীর সঙ্গে তুলনা করায় নানা মতবিরোধ দেখা গেছে। এ নিয়ে যোগ করে আসিফ, এ প্রশিক্ষণ কোনো বাহিনী নয়—এটি সামরিক প্রশিক্ষণের সমতুল্যও নয়। এখানে অস্ত্র প্রশিক্ষণ হবে না; শুধু আত্মরক্ষার মৌলিক দক্ষতা এবং সিভিল প্রতিক্রিয়া বিষয়ক প্রস্তুতি দেওয়া হবে।

প্রকল্পকে ঘিরে ইতোমধ্যেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে—কিছু কর্মকর্তা ও বিশ্লেষক এটিকে সময়োপযোগী উদ্যোগ বলে সমর্থন করলেও অনেকে তার রাজনৈতিক বা নিরাপত্তাগত প্রভাব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

সে প্রসঙ্গে উপদেষ্টা দাবি করেছেন, প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত চাইলে সংশ্লিষ্ট পাবলিক ডকুমেন্ট ও নথি প্রদর্শন করা যাবে; আপত্তি তুলতে চাইলে সেগুলো দেখলেই বাস্তব চিত্র স্পষ্ট হবে।