ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের উপ–পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলম আবারও বিতর্কের মুখে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকায় ছাত্র–জনতার ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ শুরুর আগে তার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনালাপের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, “এরা তো শিবির স্যার, আমাদের এখানে নতুন ফোর্স লাগবে।” এই মন্তব্য ঘিরে নেটিজেনদের একাংশ তীব্র সমালোচনা করছেন।

১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার সময় ধানমন্ডি ৩২–এ উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

এ সময় ঢাকা কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে এক্সকাভেটর নিয়ে ভাঙচুরের চেষ্টা করলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ তা প্রতিহত করে। পরে সেখানে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয় এবং সন্ধ্যার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই সময়েই ডিসি মাসুদের ফোনালাপের ভিডিওটি ধারণ করা হয় এবং পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।

’বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামে একটি ফেসবুক পেজ ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করে, আন্দোলন দমনে এখনো ‘শিবির ট্যাগ’ ব্যবহার করা হচ্ছে এবং ডিসি মাসুদ আন্দোলনকারীদের শিবির আখ্যা দিয়ে কঠোর পদক্ষেপের অনুমোদন নিয়েছেন। ভিডিও প্রকাশের পর তাঁকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

ডিসি মাসুদকে ঘিরে এর আগেও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে বুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় এক ছাত্রের মুখ চেপে ধরা তার সেই ছবিটি তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। আবার পাবনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় তিনি শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে সাহস জুগিয়েছিলেন—সে ভিডিওটিও তখন ভাইরাল হয়।

এ ছাড়া বিভিন্ন গণ-আন্দোলনে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্যও তিনি প্রশংসিত হয়েছেন। গত মে মাসে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তুলে দলটির নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন শুরু হলে, তিনি খেলার মাঠ থেকে জার্সি পরা অবস্থায় ছুটে গিয়ে ঘটনাস্থল সামলান—এ ঘটনাও আলোচনায় আসে।

তবে বিতর্ক তার পিছু ছাড়েনি। গত ১৫ এপ্রিল সায়েন্সল্যাবে সিটি কলেজ ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ নিয়ে তিনি মন্তব্য করেন, “এই সংঘর্ষের কারণ কেউ বলতে পারবে না, আল্লাহ ছাড়া।” ওই মন্তব্যও সমালোচনার জন্ম দেয়।

ডিসি মাসুদ বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি র‌্যাব-৬ ঝিনাইদহ ক্যাম্প, পরে পাবনা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পেয়ে গত বছরের ৫ আগস্ট ডিএমপিতে বদলি হয়ে রমনা বিভাগের ডিসি হিসেবে যোগ দেন।