* রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ

কাশ্মীর সীমান্তে গত দুইদিন ধরে গোলাগুলী চলছে ভারতীয় ও পাকিস্তানী সেনাদের মধ্যে। গত ২৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার থেকে এই গুলী বিনিময় শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য থেকে পাকিস্তানের কাশ্মীরকে পৃথককারী সীমান্তের দৈর্ঘ্য ৭৪০ কিলোমিটার। জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) এবং ভারত-পাকিস্তান স্বীকৃত আন্তর্জাতিক সীমান্তের পাশাপাশি রাজধানী ইসলামাবাদ এবং সেনাসদর রওয়ালপিন্ডি এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত ১০ নম্বর কোরকেও বিশেষ সতর্কবার্তা পাঠিয়েছেন জেনারেল মুনির। গত ৭২ ঘণ্টায় জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় পাকিস্তানী সেনার সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে বলে প্রকাশিত কয়েকটি গণমাধ্যমের দাবি। এদিকে কাশ্মীরের ঘটনায় প্রথম প্রতিক্রিয়া জানালেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। ভারত একতরফাভাবে ইসলামাবাদের ওপর দায় চাপিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, আমরা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত। এছাড়াও সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ওই চিঠিতে রাজ্যের কোথাও কোনো পাকিস্তানী নাগরিক বসবাস করছেন কি না- তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো রাজ্যে পাকিস্তানী নাগরিকের সন্ধান পাওয়ামাত্র তাকে দেশে ফেরত পাঠানোরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজ্যে থাকা পাকিস্তানীদের শনাক্ত করুন এবং দ্রুত তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। ভারতে রাজ্যের সংখ্যা ২৮টি। যদিও কাশ্মীর হামলা নিয়ে উত্তেজনা, ২৩ ভারতীয়কে ফেরত পাঠাল পাকিস্তান। খবর বিবিসি, এনডিটিভি, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, রয়টার্সের।

ভারতীয় সেনা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২৪ এপ্রিল মধ্যরাতে সীমান্তের অপর পাশে নিজেদের ভূখ- থেকে ফাঁকা গুলী ছোড়া শুরু করে পাকিস্তানী সেনারা। এর জবাবে ভারতীয় সেনারাও ফাঁকা গুলী ছোড়া শুরু করে। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত গুলী বিনিময় চলছে। তবে এতে এখন পর্যন্ত কেউ হতাহত হয়নি। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্যের জন্য পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স, তবে সেখানকার কোনো সেনা কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি। গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীর পেহেলগামের বৈসরণ উপত্যকায় পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ জঙ্গী হামলা ঘটে। এতে নিহত হন ২৫ জন ভারতীয় এবং ১ জন নেপালি পর্যটক। নিহতদের সবাই পুরুষ। হামলার দায় স্বীকার করে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামের একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।

ভারতের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলেছেন, কাশ্মীরের বৃহত্তম বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লস্কর-ই তৈয়বা’র (এলইটি) একটি উপশাখা এই টিআরএফ। প্রসঙ্গত, লস্কর-ই তৈয়বার সঙ্গে এক সময় পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর সঙ্গে গভীর আঁতাত ছিল। ঘটনাচক্রে, সম্প্রতি ইসলামাবাদে এক অনুষ্ঠানে কাশ্মীরকে পাকিস্তানের ‘গলার ধমনী’ বলে উল্লেখ করে দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির বলেছিলেন, পুরো জম্মু ও কাশ্মীর অবশ্যই একদিন পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হবে। তার কয়েক দিনের মধ্যেই হামলা ঘটল পেহেলগামে। ভয়াবহ এই হামলার পর সন্ত্রাসীদের ধরতে ইতোমধ্যে অভিযান শুরু করেছে ভারত, সেই সঙ্গে সিন্ধু নদের পানিচুক্তি স্থগিত, সব পাকিস্তানী নাগরিকের ভিসা বাতিলসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে নয়াদিল্লী। ইসলামাবাদও অবশ্য নিষ্ক্রিয় নেই। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার ওয়াঘা সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করা, শিখ ধর্মাবলম্বী ব্যতীত সব ভারতীয়র ভিসা বাতিল করা, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা স্থগিত করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে ইসলামাবাদ।

ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিলের হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর ঘটনার পাকিস্তান জড়িত নয় বলে জোরালোভাবে দাবি করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাওয়াজ আসিফ পেহেলগামের দায় অস্বীকারের পাশাপাশি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ভারতের তরফে সামরিক পদক্ষেপ করা হলে সর্বশক্তি দিয়ে প্রত্যাঘাত করা হবে। এর পরেই পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির সেনাবাহিনীর নির্দিষ্ট কয়েকটি কোর এবং ইউনিটকে সক্রিয় হওয়ার বার্তা দিয়েছেন বলে দেশটির গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। এই বাহিনীরই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের উত্তরাংশের স্বশাসিত গিলগিট বালটিস্তান অঞ্চল। রওয়ালপিন্ডিতে অবস্থিত ‘এয়ার ডিফেন্স কমান্ড’ এবং ‘স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ড’ও সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রস্তুতি শুরু করেছে বলে প্রকাশিত কয়েকটি খবরে দাবি। সাধারণভাবে নিয়ন্ত্রণরেখায় নজরদারির দায়িত্বে রয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১ নম্বর কোর। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের মিরপুর জেলার মঙ্গলায় ওই বাহিনীর সদর দফতর। ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় হামলার পরে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ায় বালাকোটে যুদ্ধবিমান নিয়ে হানা দিয়েছিল ভারতীয় বিমানবাহিনী। সেই ঘটনা মাথায় রেখে গিলগিট বালটিস্তানের স্কার্ডু বিমানঘাঁটিতে বাড়তি ফাইটার জেট মোতায়েন করেছে পাকিস্তান বিমানবাহিনী। সেই সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলে দ্রুত সেনা এবং সামরিক সরঞ্জাম পরিবহনের জন্য মোতায়েন করা হয়েছে মার্কিন ‘ট্যাকটিক্যাল এয়ার লিফটার’ সি-১৩০ই হারকিউলিস।

কাশ্মীর হামলা নিয়ে উত্তেজনা, ২৩ ভারতীয়কে ফেরত পাঠাল পাকিস্তান: কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন ভারতীয় নাগরিক নিহত ও ১০ জন আহত হওয়ার পর ভারতে পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল)-এর সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে লাইভ স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ফ্যানকোড। অন্যদিকে পিএসএলে কর্মরত ভারতীয়দের ফেরত পাঠিয়েছে পাকিস্তান। পাঞ্জাব পুলিশের বরাতে জিও নিউজ জানিয়েছে, সম্প্রচার সংস্থার ২৩ জন ভারতীয় নাগরিককে ভারতে পাঠানো হয়েছে। সম্প্রচার সংস্থার সদস্যদের ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাঠানো হয়েছে। পেহেলগামে হামলার প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় নাগরিকদের অবিলম্বে পাকিস্তান ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সরকার। হামলার পরপরই বিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি রাজীব শুক্লা দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেটে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের মুখোমুখি না হওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। রাজীব শুক্লা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে কোনো দ্বিপাক্ষিক সিরিজে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলব না। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পাকিস্তান সুপার লিগ সম্প্রচারের দায়িত্বে অনেক ভারতীয় নাগরিক রয়েছেন। তাদেরকে ভারতে ফিরে যেতে বলা হয়েছে।