গত বছরের জুলাই মাস; আন্দোলনে উত্তাল ঢাকা। ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সারা দেশে পালিত হয় ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি। ১৭ জুলাই রাত ৮টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিলেন আন্দোলনের অনলাইন সমন্বয়কারীরা। এর আগে ১৬ জুলাই রাত থেকে ১৭ই জুলাই দিন পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কী ঘটেছিল তার এক লমহর্ষক বর্ণনা তুলে ধরেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
বৃহস্পতিবার রাতে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এ নিয়ে একটি পোস্ট করেন উপদেষ্টা মাহফুজ।
ফেসবুক পোস্টে উপদেষ্টা মাহফুজ লেখেন, ১৬ ই জুলাই রাতে বারবার বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা আমিসহ ছাত্রনেতাদের সাথে আলোচনা করে রাজপথ থেকে সরে আসতে বলে। কিন্তু, সে চেষ্টা বিফল হয়।
আবরার ফাহাদের শাহাদাতের পর থেকে গায়েবানা জানাযা কর্মসূচি ছিল আমাদের জন্য মাঠে থাকা এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলার উপায়। সে হিসাবে ১৭ ই জুলাই গায়েবানা জানাযা কর্মসূচি দেয়া হয়।
তিনি আরও লেখেন, বাসা থেকে আসাদসহ ক্যাম্পাসে যখন আসি, তখন তিন-চারশ ছাত্র ছিল ভিসিতে। জানাযার প্রস্তুতি চলে, পূর্বেকার পরামর্শমতে কফিন ও পতাকা নিয়ে আসে শিবির এবং আখতার গ্রেফতার হয়ে যাওয়ায় তারেক রেজা ইমামতি করে।
উপদেষ্টা মাহফুজ লেখেন, বাকের শ্লোগান ধরেছিল, বাংলাদেশের জনগণ নেমে আসুন, নেমে পড়ুন। এত কম সংখ্যক ছাত্র দিয়ে এখানে প্রোগ্রাম শেষ করা যাবে কিনা ভাবসিলাম। তখন পলাশী- ফুলাররোদ হয়ে একটা বড় মিছিল ঢুকলো। শিবির আর বিভিন্ন দলের ছাত্ররা ছিল ঐ মিছিলে। ঐ মিছিল আসার পর জানাযা শুরু হল।
মাহফুজ লেখেন, জানাযা শেষে কফিন মিছিল নিয়ে রাজুভাস্কর্যে যাবার সময় সাউন্ড গ্রেনেড আর টিয়ারশেলের আক্রমণে ছাত্ররা ছত্রভঙ্গ হয়ে কলাভবন, মল চত্বরের দিকে চলে আসল। সবাই পেস্ট খুজতেসে, আগুন জ্বালাইতেসে। মল চত্বর থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে ছাত্ররা কিছুক্ষণ চেষ্টা করলেও পিছু হটতে হল।
মাহফুজ পোস্টে লেখেন, পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়তে ছুড়তে সূর্যসেনের সামনের সড়কে চলে আসার পর আমরা জসিমুদ্দিন হল, হার্টগ হলের কর্মচারীদের বাসাসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিলাম। মুজিব হলের দিক থেকে শাহবাগে অবস্থান করা ছাত্রলীগ যেকোন সময় আক্রমণ চালাতে পারে, এ শঙ্কাও ছিল। আমাদের ইচ্ছা ছিল, হলপাড়ায় থেকে শেষ চেষ্টা করব। কিন্তু, পুলিশ-বিজিবি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠলে ক্যজুয়ালিটি এড়াতে প্রশাসন ছাত্রদের সেইফ এক্সিট দেয়। ছাত্ররা প্রথমে অস্বীকৃতি জানালেও শেষমেষ বাধ্য হয়।
তিনি আরও লেখেন, নাহিদ- আসিফের সাথে মলচত্বরে কথা হচ্ছিল, পরের দিন কি প্রোগ্রাম দেয়া যায়। আসিফ কম্পলিট শাটডাউন কর্মসূচির কথা বলে। মহসিন হলের সামনে দিয়ে আমরা বেরুচ্ছিলাম, তখন নাহিদকে বলে আসি তোমরা সরকারের কোন পক্ষের সাথে মিটিং এর আগেই কর্মসূচি ঘোষণা করে দিও। নইলে পরে আর ঘোষণা করার সুযোগ থাকবেনা। পরের দিন কম্পলিট শাটডাউন কর্মসূচি পালিত হয়।
বের হওয়ার সময় নীলক্ষেত মোড়ে টিএসসি সার্কেলের অনেকের সাথে দেখা হয়। অনেকেই সেখানে দাঁড়িয়ে প্রতিরোধ গড়ার শেষ চেষ্টা হয়। আমি, আসাদ, যাহেদসহ আমার কাটাবনের বাসার দিকে রওনা হই।
মেইন রোড দিয়ে তখন ছাত্রলীগ ঢুকছিল আর যাকে সন্দেহ করছিল, তাদেরই মারধর করছিল। আমরা প্রামারি স্কুলের পাশের গলি ধরে কাটাবন ঢালে নেমে গিয়ে আরেকটা গলি ধরে বাসায় পৌছাই। সন্ধ্যা নামার অপেক্ষা করি। সন্ধ্যা নামলে ওদের দুজনকে রিক্সা সিএঞ্জিতে তুলে দিয়ে বাসায় ফিরি।