২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার তীব্র গণ-অভ্যুত্থানের মুখে পতন ঘটে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন স্বৈরশাসনের। ওই বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যায়। এর তিন দিন পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। এই সরকারের প্রধান প্রধান কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল জুলাই সনদ প্রণয়ন। অবশেষে সরকার সেই জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়া প্রণয়ন করে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছে।

মূলত গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো জুলাই সনদের ভূমিকায় বলা হয়েছে, সুদীর্ঘ গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-শ্রমিক-জনতার সফল গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক রাষ্ট্র পুনর্গঠনের ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই সন্ধিক্ষণে আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারীগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, জোট ও শক্তিসমূহ পারস্পরিক ও সম্মিলিত আলোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রের সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের লক্ষ্যে নিম্নলিখিত বিষয়ে ঐকমত্যে উপনীত হয়েছি।

জুলাই সনদের পটভূমিতে বলা হয়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন একটি দলীয় সরকার রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে ক্রমান্বয়ে অবশিষ্ট গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে জলাঞ্জলি দিয়ে অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী চরিত্র ধারণ করতে থাকে। তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও সমালোচকদের গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার হরণ, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুম, খুন, নিপীড়ন-নির্যাতন, মামলা, হামলার মাধ্যমে একটি নৈরাজ্যকর ও বিভীষিকাময় ত্রাস ও ভীতির রাজত্ব কায়েম করে। ২০০৯ সালের পিলখানায় বিডিআর হত্যাকান্ড ও ২০১৩ সালে মতিঝিলের শাপলা চত্ত্বরের হত্যাকান্ড অন্যতম উদাহরণ। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সমগ্র রাষ্ট্রযন্ত্রকে স্বৈরতান্ত্রিকভাবে বিশেষ ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর বন্দনার জন্য নিবেদিত রাখা হয়। দেড় দশকে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার জনস্বার্থের বিরুদ্ধে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার উদ্দেশ্যে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সংবিধানের বিকৃতি সাধন, বিভিন্ন নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়ন, নির্বাচনি ব্যবস্থাকে ধ্বংস, বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসনকে দলীয়করণ এবং দুর্নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনের ব্যবস্থা কায়েম করে।

এই পটভূমিকায় রাজনৈতিক দলগুলোর ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে ২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং অবশেষে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের এক দফা আন্দোলনে বিপুল ছাত্র-শ্রমিক-নারী-পেশাজীবী তথা সকল স্তরের জনতার অংশগ্রহণের ফলে এক অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। এতে শাসকগোষ্ঠীর প্রতিহিংসার শিকার হয়ে শিশু ও নারীসহ এক হাজার চারশোর বেশি নিরস্ত্র নাগরিক নিহত এবং বিশ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়। তাদের আত্মাহুতি ও ত্যাগের বিনিময়ে এবং জনগণের সম্মিলিত শক্তি ও প্রতিরোধের কাছে স্বৈরাচারী শাসক ও তার দোসররা পরাজিত হয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

এমতাবস্থায়, জনগণের মননে রাষ্ট্র-কাঠামো পুনর্গঠনের এক প্রবল অভিপ্রায় সৃষ্টি হয়েছে।

রাষ্ট্র সংস্কার, বিশেষ করে সংবিধানের মৌলিক সংস্কার, ধ্বসে পড়া নির্বাচনি ব্যবস্থার পুনর্গঠন, গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আইন ও বিধি-বিধানের সংস্কার, স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা এবং সুশাসিত জবাবদিহিমূলক ও দুর্নীতিমুক্ত সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার যে ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তার সদ্ব্যবহার করা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব।

এতে বলা হয়, বিদ্যমান সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রেরিত প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামতের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কারের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ৭ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে সরকার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। কমিশনগুলো হচ্ছেÑসংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন। কমিশনগুলো ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখের মধ্যে তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করে। তাতে বলা হয়, মোট ৩৫টি রাজনৈতিক দল ও জোট তাদের মতামত কমিশনের কাছে প্রেরণ করে, অনেকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষনও প্রদান করে। মতামত গ্রহণের পাশাপাশি প্রথম পর্যায়ে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে ২০২৫ পর্যন্ত ৩২টি দল ও জোটের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মোট ৪৭টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে কিছু দলের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষ করে কমিশন অগ্রাধিকার ও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় মোট ২০টি বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে দ্বিতীয় দফা আলোচনায় মিলিত হয়। এই প্রক্রিয়ার ফলাফল স্বরূপ নিম্নলিখিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ সর্বসম্মতভাবে প্রণীত হয়।

এতে আরও বলা হয় (১) বিদ্যমান সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪১ক সংশোধনের সময় ‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগের’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রীয় অখ-তার প্রতি হুমকি বা মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হবে। (২) জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরের পরিবর্তে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের বিধান যুক্ত করা হবে। জরুরি অবস্থা ঘোষণা সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিরোধী দলীয় নেতা অথবা তার অনুপস্থিতিতে বিরোধী দলীয় উপনেতার উপস্থিতি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। (৩) জরুরি অবস্থাকালীন সময়ে নাগরিকের দুইটি অধিকার অলঙ্ঘনীয় করার লক্ষ্যে এ মর্মে বিধান করা হবে যে, “অনুচ্ছেদ ৪৭ক এর বিধান সাপেক্ষে, কোনো নাগরিকের-(ক) জীবনের অধিকার (Right to life); (খ) বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে বিদ্যমান সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে বর্ণিত মৌলিক অধিকারসমূহ খর্ব করা যাইবে না।” [২৯টি দল ও জোট একমত]

মৌলিক অধিকার প্রশ্নে বলা হয়, সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ মোতাবেক সংবিধানের তৃতীয় ভাগে বর্ণিত মৌলিক অধিকারসমূহের তালিকা সংশোধন ও নাগরিকদের অধিকার সম্প্রসারণ করা হবে। (নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, সেগুলোর সুরক্ষা ও বাস্তবায়নে সাংবিধানিক ও আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিত করার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদনের পরিশিষ্টে উল্লেখ করা হয়েছে) । [৩১টি দল ও জোট একমত], রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনয়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮(৩) সংশোধনীর প্রস্তাব করে কারো পরামর্শ বা সুপারিশ ছাড়াই নিজ এখতিয়ারবলে রাষ্ট্রপতি নিম্নলিখিত পদে নিয়োগ প্রদান করতে পারবেন : (১) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ, (২) তথ্য কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ, (৩) বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ, (৪) আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ, (৫) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, (৬) এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ। [৩১টি দল ও জোট একমত; নোট অব ডিসেন্ট: প্রস্তাবতি ৫ ও ৬ নং ক্রমিকের বিষয় বিএনপি, এনডিএম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ১২ দলীয় জোট, এলডিপি।

একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী পদে যত মেয়াদ বা যত বারই হোক সর্বোচ্চ ১০ বছর থাকতে পারবেন, এ জন্যে সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ সমূহের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে। [২৫টি দল ও জোট একমত; নোট অব ডিসেন্ট: বিএনপি, এনডিএম, ১২ দলীয় জোট, ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট], প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান : প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন ব্যক্তি একইসঙ্গে দলীয় প্রধানের পদে অধিষ্ঠিত থাকিবেন না, এরূপ বিধান সংবিধানে যুক্ত করা হবে। [নোট অব ডিসেন্ট: বিএনপি, এনডিএম, ১২ দলীয় জোট, ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট]।, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা: বিদ্যমান সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদ সংশোধন করে নিম্নরূপ বিধান সংযুক্ত করা হবে:

(১) মেয়াদ অবসানের কারণে অথবা মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙ্গে যাওয়ার পরবর্তী নব্বই (৯০) দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। [২৯টি দল ও জোট একমত]

(২) সংবিধানের ৫৮ (খ) সংশোধনপূর্বক সংসদের মেয়াদ অবসান হওয়ার ১৫ দিন পূর্বে এবং মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙ্গে গেলে ভঙ্গ হওয়ার পরবর্তী পনের (১৫) দিনের মধ্যে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। [২৯টি দল ও জোট একমত]

(৩) মেয়াদ অবসানের ক্ষেত্রে সংসদের মেয়াদ অবসান হওয়ার ৩০ দিন পূর্বে জাতীয় সংসদের স্পিকারের তত্ত্বাবধানে এবং সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় Ñ ১. প্রধানমন্ত্রী, ২. বিরোধী দলীয় নেতা, ৩. স্পিকার, ৪. ডেপুটি স্পিকার (বিরোধীদলের) এবং ৫. সংসদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের একজন প্রতিনিধিÑ (যদি সংসদে আসন সংখ্যার বিবেচনায় একাধিক দল দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধীদলের অবস্থানে থাকে তাহলে সেসব দলের মধ্য থেকে নির্বাচনে সর্বোচ্চ পরিমাণে ভোটপ্রাপ্ত দলটিই দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধীদল হিসেবে বিবেচিত হবে) মোট পাঁচ (৫) সদস্য সমন্বয়ে একটি ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটি’ গঠিত হবে। কমিটির যেকোনো বৈঠক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সভাপতিত্ব করবেন স্পিকার।

(৪) কমিটি গঠিত হওয়ার পরবর্তী চব্বিশ (২৪) ঘণ্টার মধ্যে কমিটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহ, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলসমূহ এবং জাতীয় সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের নিকট হতে সংবিধানের ৫৮গ অনুচ্ছেদে বর্ণিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তির নাম প্রস্তাবের আহবান করবেন এবং এক্ষেত্রে প্রতিটি দল ১ (এক) জন এবং একজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ১ (এক) জন মাত্র ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করতে পারবে। (৫) রাজনৈতিক দলসমূহ এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যগণ পরবর্তী চব্বিশ (২৪) ঘণ্টার মধ্যে সংসদ সচিবালয়ে তাদের প্রস্তাবিত নাম দাখিল করবেন।

(৬) পরবর্তী বাহাত্তর (৭২) ঘণ্টার মধ্যে কমিটির সদস্যগণ সভায় মিলিত হয়ে নিজেদের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত এবং রাজনৈতিক দলসমূহ ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের নিকট হতে প্রস্তাবিত নামসমূহ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করত বাংলাদেশের যে সকল নাগরিক সংবিধানের ৫৮গ অনুচ্ছেদ এর অধীনে উপদেষ্টা হওয়ার যোগ্য তাদের মধ্য হতে একজনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বেছে নিবেন এবং তিনি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন।

(৭) বাছাই কমিটি গঠিত হওয়ার পরবর্তী একশত কুড়ি (১২০) ঘণ্টার মধ্যে এ পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কোনো ব্যক্তিকে চূড়ান্ত করা সম্ভব না হলে পরবর্তী আটচল্লিশ (৪৮) ঘণ্টার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা পদের জন্য ৫৮গ অনুচ্ছেদে বর্ণিত শর্ত অনুসরণপূর্বক সংসদের সরকারি দল/জোট ৫ (পাঁচ) জন উপযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে এবং প্রধান বিরোধী দল/জোট ৫ (পাঁচ) জন উপযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে। এছাড়া সংসদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দল ২ (দুই) জন উপযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে। যদি সংসদে আসন সংখ্যার বিবেচনায় একাধিক দল দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধীদলের অবস্থানে থাকে তাহলে সেসব দলের মধ্যে নির্বাচনে সর্বোচ্চ পরিমাণ ভোটপ্রাপ্ত দলটিই দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধীদল হিসেবে বিবেচিত হবে। উপর্যুক্ত প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত নামসমূহ স্পিকার জনসাধারণের অবগতির জন্য প্রকাশ করবেন।

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ হবে অনধিক নব্বই (৯০) দিন। তবে দৈব-দুর্বিপাকজনিত কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আরো সর্বোচ্চ ত্রিশ (৩০) দিন দায়িত্ব পালন করতে পারবে।

(২০) নতুন সংসদ গঠিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী যে তারিখে তাঁর পদের কার্যভার গ্রহণ করবেন সেই তারিখে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত হবে। ত্রয়োদশ সংশোধনীর অনুচ্ছেদ ৫৮(গ) (২) ব্যবস্থা বহাল থাকবে। [নোট অব ডিসেন্ট: বিএনপি (গঠন প্রক্রিয়া সংসদের হাতে ন্যস্ত করার পক্ষে), বাংলাদেশ লেবার পার্টি (৯, ১০ ও ১৩), এনডিএম (৮, ৯, ১২), জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট (৯, ১০ ও ১৩), ১২ দলীয় জোট (৯, ১০ ও ১৩), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদশে (৭ ও ৮), বাংলাদশে নেজামে ইসলাম পার্টি (৭ ও ১০)] ।

জাতীয় সংসদে নারী আসনের বিধান : জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ক্রমান্বয়ে ১০০ (একশত) আসনে উন্নিত করার লক্ষ্যে নিম্নরূপ বিধান করা হবেঃ [২৯টি দল ও জোট একমত] । (ক) বিদ্যমান সংরক্ষিত ৫০টি আসন বহাল রেখে সংবিধানের ৬৫ (৩) অনুচ্ছেদে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে;

(খ) জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ স্বাক্ষরের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে বিদ্যমান ৩০০ সংসদীয় আসনের জন্য প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে নূন্যতম ৫% (পাঁচ) শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার জন্য দলগুলোকে আহ্বান জানানো হবে; (গ) পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো নূন্যতম ৫% (পাঁচ) শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দিবে;

(ঘ) এই পদ্ধতিতে রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে নূন্যতম ৩৩% (তেত্রিশ) শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক সাধারণ নির্বাচনে নূন্যতম ৫% (পাঁচ) শতাংশ বর্ধিত হারে নারী প্রার্থী মনোনয়ন অব্যাহত রাখবে; [ ২৬ টি দল ও জোট একমত; নোট অব ডিসেন্ট: আম জনতার দল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল] (ঙ) সংবিধানে বর্ণিত জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন অব্যাহত রেখে সংবিধানের সপ্তদশ (১৭তম) সংশোধনী (যা ৮ জুলাই ২০১৮ সালে সংসদে পাশ হয়) এর মাধ্যমে সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ ২৫ বছর বৃদ্ধি করা হয়, হিসাব অনুযায়ী তা ২০৪৩ সাল পর্যন্ত বহাল থাকবে; তবে সাধারণ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী মনোয়নের ক্ষেত্রে তেত্রিশ (৩৩%) শতাংশ নারী প্রার্থীতার লক্ষ্য ২০৪৩ সালের আগেই যদি অর্জিত হয়ে যায়, তাহলে সংবিধানের সপ্তদশ (১৭তম) সংশোধনীর মাধ্যমে প্রবর্তিত বিধান নির্ধারিত সময়ের আগেই বাতিল হয়ে যাবে।

প্রধান বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে বলা হয়, (১) সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদের বিদ্যমান ব্যবস্থা পরিবর্তন করে রাষ্ট্রপতি আপীল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন। (২) আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগদান করবেন। (অবশ্য কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে উল্লেখপূর্বক যদি জনগণের ম্যান্ডেট লাভ করে তবে তারা সংবিধানে আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম দুইজন বিচারপতিদের মধ্য হতে যেকোনো একজনকে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দান করবেন মর্মে বিধান সংযোজন করতে পারবে।) (৩) তবে শর্ত থাকে যে, অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের অভিযোগের কারণে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৬ এর অধীন কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান থাকলে তাকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের জন্য বিবেচনা করা যাবে না। [২৯ টি দল ও জোট একমত] ৩১। আপীল বিভাগের বিচারক সংখ্যা : সংবিধানে এরূপ যুক্ত করা হবে যে, “আপীল বিভাগের বিচারক সংখ্যা বৃদ্ধি এবং প্রধান বিচারপতির চাহিদা মোতাবেক, সময়ে সময়ে, আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক নিয়োগ করা যাইবে।

নির্বাচন ব্যবস্থার ব্যাপারে বলা হয়, বিদ্যমান সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদ সংশোধনপূর্বক এরূপ বিধান করা হবে যে, (ক) প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত সংখ্যক নির্বাচন কমিশনারগণের সমন্বয়ে বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকবে। আইনের দ্বারা নিম্নরূপে গঠিত একটি বাছাই কমিটির মাধ্যমে উপযুক্ত প্রার্থী বাছাই করা হবে : (১) জাতীয় সংসদের স্পিকার (যিনি এই বাছাই/selection কমিটির প্রধান হবেন), (২) ডেপুটি স্পিকার (যিনি বিরোধী দল হতে নির্বাচিত হবেন), (৩) প্রধানমন্ত্রী, (৪) বিরোধী দলের নেতা, এবং (৫) প্রধান বিচারপতির প্রতিনিধি হিসাবে আপীল বিভাগের একজন বিচারপতি। এই বাছাই/selection কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারদের নিয়োগ করার উদ্দেশ্যে বিদায়ী নির্বাচন কমিশনের প্রধান ও অন্যান্য কমিশনারগণের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন পূর্বে সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইনের দ্বারা (যেখানে নির্বাচন কমিশনার হওয়ার যোগ্যতা-অযোগ্যতা, প্রার্থী অনুসন্ধানের পদ্ধতি, প্রাধিকার ও কর্মপদ্ধতির উল্লেখ থাকবে) নির্ধারিত পদ্ধতিতে ‘ইচ্ছাপত্র’ ও প্রার্থীর সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি আহ্বান করাসহ কমিটির নিজস্ব উদ্যোগে উপযুক্ত প্রার্থীর অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

(ঘ) (বিদ্যমান সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের উপানুচ্ছেদ ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ অপরিবর্তিত থাকবে)। (ঙ) ১১৮(৫) অনুচ্ছেদ এর সাথে এরূপ যুক্ত হবে: ‘এতদ্ব্যতীত জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারগণের জবাবদিহিতার জন্য আইন প্রণয়ন ও আচরণ বিধি প্রণীত হবে।’ [৩২টি দল ও জোট একমত]

দুর্নীতি দমন কমিশনে নিয়োগ : (ক) যেহেতু বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশন একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, সেহেতু সেটিকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে সংবিধানে নিম্নরূপ একটি নতুন অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হবে: “দেশে একটি স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন থাকবে এবং এই কমিশনের নিয়োগ ও কার্যক্রম পর্যালোচনার লক্ষ্যে একটি ‘বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি’ গঠিত হবে।”

(খ) প্রধান বিচারপতি ব্যতীত, আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি (যিনি এই বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটির চেয়ারম্যান হবেন), খ. সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি, গ. মহাহিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, ঘ. সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান, ঙ. জাতীয় সংসদের সংসদ নেতা কর্তৃক মনোনীত একজন প্রতিনিধি, চ. জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতার মনোনীত একজন প্রতিনিধি, এবং ছ. প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত একজন নাগরিক প্রতিনিধি, যিনি দুর্নীতিবিরোধী ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার কাজে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন; তাদের সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য কমিশনারদের নিয়োগের উদ্দেশ্যে আগ্রহী ব্যক্তিবর্গের নিকট হতে আইনের দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ‘ইচ্ছাপত্র’ ও ‘জীবনবৃত্তান্ত’ আহ্বান করাসহ উপযুক্ত প্রার্থীদের জন্য অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর সংশোধন : নাগরিকরা যাতে সহজে ও অবাধে সরকারি সেবা সংক্রান্ত তথ্য পেতে পারে সেজন্য তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ (Right to Information Act, ২০০৯) পর্যালোচনা করে সংশোধন করা হবে। নির্বাচন কমিশনের অধীনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহকে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর আওতাভুক্ত করা হবে। [৩১টি দল ও জোট একমত] ৬৪। অফিসিয়াল সিক্রেটস এ্যাক্ট, ১৯২৩ (Official Secrets Act, ১৯২৩) এর সংশোধন: নাগরিকদের তথ্য ও পরিষেবায় অভিগম্যতা সহজ ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে The Official Secrets Act, ১৯২৩ পর্যালোচনা করে সংশোধন করা হবে। [২৬টি দল ও জোট একমত]

স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন : পুলিশ বাহিনীর পেশাদারিত্ব ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিতকরণ এবং পুলিশি সেবাকে জনবান্ধব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে একটি ‘পুলিশ কমিশন’ গঠন করা হবে।[২৯টি দল ও জোট একমত] সাংবিধানিক ও আইনগত ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে সংবিধান সংশোধন : বিদ্যমান সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২০(২) নিম্নরূপে প্রতিস্থাপন করা হবে : “রাষ্ট্র এমন অবস্থা সৃষ্টি করিবে, যেখানে সাধারণ নীতি হিসাবে কোনো ব্যক্তি ব্যক্তিগত স্বার্থে সাংবিধানিক ও আইনগত ক্ষমতার অপব্যবহার করিতে পারিবেন না ও অনুপার্জিত আয় ভোগ করিতে সমর্থ হইবেন না এবং যেখানে বুদ্ধিবৃত্তিক ও কায়িক, সকল প্রকার শ্রম সৃষ্টিধর্মী প্রয়াসের ও মানবিক ব্যক্তিত্বের পূর্ণতর অভিব্যক্তিতে পরিণত হইবে।” [৩০টি দল ও জোট একমত] ৬৮। দুর্নীতিবিরোধী কৌশলপত্র প্রণয়ন : রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের পরিবর্তে একটি দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়ন করে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবিরোধী দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ করা হবে। [২৯টি দল ও জোট একমত]

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামা

যেহেতু বাংলাদেশের সাংবিধানিক কনভেনশনের অংশ হিসাবে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ হতে ১৯৭২ সালের ৪ঠা নবেম্বর পর্যন্ত দেশে কার্যত কোনও সংবিধান না থাকা সত্ত্বেও উক্ত সময়ের সকল কার্যাবলী ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৯৭২ সালের সংবিধানে সন্নিবেশিত করে এর আইনী ও সাংবিধানিক বৈধতা প্রদান করা হয়;

একইভাবে যেহেতু ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর গণঅভ্যুত্থানোত্তর সময়ে প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করে উপরাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ গ্রহণ, অতঃপর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি পদের দায়িত্ব গ্রহণ এবং পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি পদে ফিরে যাওয়া সংক্রান্ত কোনও আইনী কাঠামো না থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহের রূপরেখা ও অঙ্গীকারের ভিত্তিতে ওই ধরণের কার্যাবলীকে বৈধতা দিয়ে পরবর্তী সংসদ গণঅভ্যুত্থানে প্রদত্ত জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে সাংবিধানিক কনভেনশন এবং গণতন্ত্রকে সংহত করে; সুতরাং উল্লেখিত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, জনগণের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং সাংবিধানিক কনভেনশন বজায় রেখে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারীগণ এই মর্মে অঙ্গীকার করছি যে-

১) জনগণের অধিকার ফিরে পাওয়া এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে হাজারো মানুষের জীবন ও রক্তদান এবং অগণিত মানুষের সীমাহীন ক্ষয়ক্ষতি ও ত্যাগ-তিতীক্ষার বিনিময়ে অর্জিত সুযোগ এবং তৎপ্রেক্ষিতে জন-আকাক্সক্ষা প্রতিফলন হিসেবে দীর্ঘ ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রণীত ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’র দলিল হিসাবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবো।

২) এই রাষ্ট্রের মালিক জনগণ; তাদের অভিপ্রায়ই সর্বোচ্চ আইন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের অভিপ্রায় প্রতিফলিত ও প্রতিষ্ঠিত হয় রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে, এমতাবস্থায় আমরা রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহ সম্মিলিতভাবে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে জনগণের অভিপ্রায়ের সুষ্পষ্ট ও সর্বোচ্চ অভিব্যক্তি হিসাবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ প্রণয়ন করেছি বিধায় এই সনদের সকল বিধান, নীতি ও সিদ্ধান্ত সংবিধানে অন্তর্ভুক্তকরণ নিশ্চিত করবো এবং বিদ্যমান সংবিধান বা অন্য কোনও আইনে ভিন্নতর কিছু থাকলে সেই ক্ষেত্রে এই সনদের বিধান/প্রস্তাব/সুপারিশ প্রাধান্য পাবে।

৩) এই সনদের কোনও বিধান, প্রস্তাব বা সুপারিশের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত যে কোনো প্রশ্নরে চূড়ান্ত মীমাংসার এখতিয়ার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের উপর ন্যস্ত থাকবে।

৪) ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর প্রতিটি বিধান, প্রস্তাব ও সুপারিশ সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে বলবৎ হিসেবে গণ্য হবে বিধায় এর বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা, কিংবা জারির কর্তৃত্ব সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না।

৫) ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এ বাংলাদেশের সামগ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা তথা সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশি ব্যবস্থা ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থার বিষয়ে যেসব প্রস্তাব/সুপারিশ লিপিবদ্ধ রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন, লিখন ও পুনর্লিখন এবং বিদ্যমান আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন, লিখন, পুনর্লিখন বা নতুন আইন প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন বা বিদ্যমান বিধি ও প্রবিধির পরিবর্তন বা সংশোধন করবো। ৬) আমরা ঐকমত্যে স্থির হয়েছি যে, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম এবং বিশেষত; ২০২৪ সালের অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সাংবিধানিক তথা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হবে।

৭) আমরা সম্মিলিতভাবে ঘোষণা করছি যে, রাষ্ট্র ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানকালে সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও শহীদ পরিবারসমূহকে যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদান এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনে ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।

৮) আমরা এই মর্মে একমত যে, জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ এর যে সকল প্রস্তাব/সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য বলে বিবেচিত হবে সেগুলো কোনও প্রকার কালক্ষেপন না করেই পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসমূহ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে। (জুলাই সনদের খসড়ার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ অনলাইনে দেখুন)