গত এক দশকে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় সাড়ে ২৪ শতাংশ। প্রতিবছর দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী ডিগ্রি অর্জন করে বের হলেও, শ্রমবাজারে তাদের জন্য পর্যাপ্ত চাকরির সুযোগ তৈরি হচ্ছে না। বর্তমানে সরকারি খাতেই ৪ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি পদ শূন্য রয়েছে, তবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে ধীরগতিতে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে প্রায় ২৬ থেকে ২৮ লাখ কর্মক্ষম মানুষ বেকার। এর মধ্যে স্নাতক ডিগ্রিধারী বেকারের সংখ্যা প্রায় ৮ লাখ, যা ২০১৭ সালের তুলনায় দ্বিগুণ।
শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা কর্মমুখী নয় এবং শিল্প-বাণিজ্যের চাহিদার সঙ্গে শিক্ষার সংযোগ দুর্বল। কারিগরি শিক্ষার অভাব, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ, এবং বাস্তবমুখী দক্ষতা উন্নয়নে গুরুত্ব না দেওয়ার ফলে উচ্চশিক্ষিত তরুণদের একটি বড় অংশ চাকরি পাচ্ছেন না। ফলে তারা পরিবার ও রাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন এবং অনেকেই হতাশা ও মানসিক চাপে ভুগছেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা প্রায় ৪২% শিক্ষার্থী নিয়মিত চাকরিতে থাকলেও ২৮% সম্পূর্ণ বেকার। অনেকে আংশিক সময়ের কাজ করছেন বা আত্মকর্মসংস্থানে যুক্ত হয়েছেন। তবে ল্যাব-সুবিধার অভাব, পরীক্ষায় বাস্তব অভিজ্ঞতার অনুপস্থিতি এবং অপ্রাসঙ্গিক পাঠদান এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সরকারি কর্মচারী পরিসংখ্যান ২০২৪ অনুযায়ী, মোট সরকারি পদের প্রায় এক-চতুর্থাংশ ফাঁকা। প্রথম থেকে নবম গ্রেডে ৬৮ হাজার ৮৮৪টি পদ শূন্য, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১ লাখ ২৮ হাজার ৫৬৩টি পদ খালি, তৃতীয় শ্রেণিতে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৯টি পদ ফাঁকা এবং চতুর্থ শ্রেণিতে ১ লাখ ১৫ হাজার ২৩৫টি পদে কোনো কর্মী নেই।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান জানান, নিয়োগ একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, এবং ধাপে ধাপে শূন্য পদ পূরণ করা হচ্ছে। প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বিবিএসের তথ্যমতে, প্রতিবছর ২০ থেকে ২৪ লাখ নতুন কর্মক্ষম মানুষ চাকরির বাজারে প্রবেশ করছেন। কিন্তু সরকারি পর্যায়ে বেসরকারি খাতের কর্মসংস্থান সম্ভাবনা, অবসরে যাওয়া কর্মীর সংখ্যা বা আত্মকর্মসংস্থান উদ্যোগের কোনো পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা বা ডেটাবেজ নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কারিগরি শিক্ষা আধুনিকায়ন ছাড়া এ সংকট দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং সামাজিক অপরাধ ও আইনশৃঙ্খলার অবনতির ঝুঁকি বাড়াবে।