প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, চলতি মাসের শেষে কিংবা মে মাসের শুরুতে জুলাই আন্দোলনে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে বিচার শুরু হবে। কাতারভিক্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিয়াকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, পতিত সরকারের নেতা-কর্মীদের লুটপাটসহ গণহত্যার বিষয়টি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে ভারতকে চিঠি ও দেশটির প্রধানমন্ত্রীকেও জানানো হয়েছে। ওই সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের নির্বাচন, সংস্কার, পতিত শেখ হাসিনার সরকারের অনিয়ম দুর্নীতির বিচারসহ সম্প্রতি চীন সফর নিয়ে কথা বলেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
পতিত শেখ হাসিনা সরকার, হত্যা-গুমসহ মানবাধিকার লংঘনের মতো যেসব ঘটনা ঘটিয়েছে, তার প্রমাণ উঠে এসেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিবেদনে। ট্রাইবুন্যালে তদন্ত শেষে চলতি মাসের শেষে অথবা আগামী মাসের শুরুতে শেখ হাসিনার বিচার শুরুর কথা জানান প্রধান উপদেষ্টা।
ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে চিঠি দেয়ার পাশাপাশি বিমসটেক সম্মেলনে দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে আহবান জানানোর কথাও জানিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ভারত বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী বলে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রদানে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার সুযোগ নেই বলেও জানিয়েছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কট্রাম্প প্রশাসনের সাথে গভীর সর্ম্পকের কথা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের জীবন মান উন্নয়নে সার্ক ও বিমসটেক জোটকে সক্রিয় করা জরুরি।
পতিত সরকারের আমলে বন্দুকের নলের মুখে ব্যাংক দখলের পাশাপাশি ঋণ নামের হাজার হাজার কোট টাকা পাচার করা হয়েছে বলেও আলজাজিরাকে দেয়া সাক্ষাৎকারের জানান ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচারের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া আগামী এপ্রিল মাসেই শুরু হতে পারে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে আগেই জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এ লক্ষ্যে দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলার তদন্তকাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে বলেও জানান এই আইনজীবী।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত পাঁচই অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, গুম, অপহরণসহ বিভিন্ন অভিযোগে আড়াইশ'টিরও বেশি মামলা হয়েছে। বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
এর মধ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে যে তদন্ত চলছে, তা আগামী ২০শে এপ্রিলের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। তবে ওই সময়ের আগেই তদন্ত শেষ করে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু করতে চান ট্রাইব্যুনালের কৌসুলিরা। চলতি বছরের মধ্যে বেশ কিছু মামলার বিচারকাজ শেষ করার লক্ষ্যও রয়েছে তাদের। "সবগুলো মামলার বিচার শেষ করতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে সিলেক্টেড কিছু মামলাকে হয়তো এ বছরের মধ্যে শেষ করা যাবে," বলছিলেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর।