ঢাকায় তিন বছরের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের একটি মিশন স্থাপনের বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। একই সভায় দু’টি অধ্যাদেশ এবং তিনটি প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের ৩৩তম বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের ভিত্তিতে বাংলাদেশে ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়’-এর মিশন স্থাপনসংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত ২৯ জুন ওই খসড়া উপদেষ্টা পরিষদে তোলা হলে তাতে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। ওই দিন এক সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছিলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক যে অফিস ওএইচসিএইচআর, সে অফিসের একটা মিশন শাখা বাংলাদেশে ওনারা খুলতে চাইছিলেন। এ লক্ষ্যে ওনারা আলোচনা করছিলেন। এ আলোচনার একটা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এর সমঝোতা স্মারক, সেটা উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়েছে।’

আইন উপদেষ্টা ওই দিন বলেন, ‘ওএইচসিএইচআর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ওপর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল। ওনাদের সঙ্গে আমাদের সরকারের অনেক দিন ধরে আলোচনা চলছিল। আলোচনার একটা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সমঝোতা স্মারক উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়েছে। এটা কয়েকজন উপদেষ্টা মিলে আরেকটু পরীক্ষা করা হবে। এরপর চূড়ান্ত করে তা ফলকার টুর্কের কাছে পাঠানো হবে। ওনারা অনুমোদন করলে আশা করা যায় দ্রুতই বিষয়টি সই করা যাবে। এর ভিত্তিতে বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক একটা অফিস হবে।’

এদিকে শেখ হাসিনার প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরশাসনের সময় একটি নির্দেশনা জারি করে সরকারি কর্মকর্তাদের তাকে (শেখ হাসিনাকে) ‘স্যার’ সম্বোধন করতে বলা হয়। এই অস্বাভাবিক প্রথাটি অন্য উচ্চপদস্থ নারী কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও বিস্তৃত হয়, যাদের এখনও ‘স্যার’ বলা হচ্ছে, যা স্পষ্টতই অস্বাভাবিক। উপদেষ্টা পরিষদ বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই নির্দেশনাটি বাতিল করেছে।

উপদেষ্টা পরিষদ মন্ত্রিসভা কর্তৃক জারিকৃত অন্যান্য বিশদ প্রটোকল নির্দেশনার পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও আলোচনা করে। প্রটোকল নির্দেশনা ও সম্বোধন পদ্ধতি পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন -জ্বালানি, সড়ক ও রেলপথ বিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। বার্তায় উল্লেখ করা হয়, এই কমিটি এক মাসের মধ্যে উপদেষ্টা পরিষদের বিবেচনার জন্য প্রয়োজনীয় সংশোধনী প্রস্তাব প্রদান করবে।

এদিকে উপদেষ্টা পরিষদ ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এবং ‘মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। কাউন্সিল মালয়েশিয়ার জোহর বাহরুতে বাংলাদেশের একটি নতুন কনস্যুলেট জেনারেল স্থাপনের প্রস্তাবও অনুমোদন করেছে। বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার (ওএইচসিএইচআর) এর একটি মিশন প্রতিষ্ঠার জন্য খসড়া সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) প্রস্তাবও সভায় অনুমোদিত হয়েছে।

কাউন্সিল নির্যাতন ও অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ বা শাস্তির বিরুদ্ধে কনভেনশনের ঐচ্ছিক প্রোটোকলে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাবও অনুমোদন করেছে। সভায়, দেশের বন্যা পরিস্থিতি এবং পরবর্তীতে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কেও আলোচনা হয়েছে।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে মুসাপুর রেগুলেটর এবং বামনী ক্লোজারের নকশা চূড়ান্তকরণ, ফেনীতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প চূড়ান্তকরণ এবং নোয়াখালীতে খাল পুনরুদ্ধার এবং নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে উপদেষ্টা পরিষদকে অবহিত করা হয়েছে।