পেশাগত চাপ, আর্থিক অসচ্ছলতা এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা—এই তিনটি বড় কারণেই বাংলাদেশসহ বিশ্বের তরুণরা দিন দিন বিয়ে এবং সন্তান গ্রহণ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
সম্প্রতি জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA) ও YouGov পরিচালিত একটি জরিপে উঠে এসেছে এই উদ্বেগজনক তথ্য।
বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস ২০২৫ উপলক্ষে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আয়োজিত এক আলোচনা সভায় জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
সভায় জানানো হয়, বিশ্বের জনসংখ্যা কমে যাওয়াকে মূল সমস্যা না মনে করলেও, প্রজনন হারে নাটকীয় পরিবর্তন মানবজাতির ভবিষ্যতের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে। UNFPA-এর সাম্প্রতিক ‘স্টেট অব ওয়ার্ল্ড পপুলেশন’ রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বে একটি বড় অংশের তরুণ এখন সন্তান নিতে পারছে না বা চাইছে না।
জরিপ অনুযায়ী, প্রায় অর্ধেকের বেশি তরুণ তাদের পছন্দ অনুযায়ী সন্তান নিতে পারছে না। প্রতি চারজনের মধ্যে একজন তাদের কাঙ্ক্ষিত সময়ে সন্তান নিতে ব্যর্থ হয়েছে, আর ৪০ শতাংশ তরুণ পরবর্তীতে সন্তান গ্রহণের আকাঙ্ক্ষা হারিয়ে ফেলেছে।
জরিপ আরও জানায়: ১৩% তরুণ অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের পর সন্তান নিতে চেয়েও পারেনি, ১৪% তরুণ উপযুক্ত সঙ্গীর অভাবে সন্তান নিতে অক্ষম, ১৮% তরুণ পরিবার পরিকল্পনা বা প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, ক্ষমতায়ন মানে কেবল অধিকার নয়, এর ভিত্তি হলো আর্থিক স্বাবলম্বিতা। তরুণদের স্বাধীনভাবে পরিবার গঠনের সুযোগ দিতে হলে তাদের শিক্ষা, পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, তরুণদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে সমাজের সকল অংশীজনকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, রোবটিকস ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে মানবিক দক্ষতা সম্পন্ন তরুণ প্রজন্ম গড়াই এখন চ্যালেঞ্জ। তরুণরা কেবল ভবিষ্যৎ নয়, রাষ্ট্র গঠনের চালিকাশক্তি।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. নাজমুল হোসেন জানান, বর্তমানে বিশ্বের জনসংখ্যা প্রায় ৮২৩ কোটি। আগামী ২০৫৬ সালের মধ্যে এ সংখ্যা এক হাজার কোটিতে পৌঁছাবে এবং ২০৯৮ সাল থেকে তা ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে শুরু করবে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আশরাফী আহমদ, অতিরিক্ত সচিব জোবায়দা বেগম ও স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী। আলোচনার শেষে ১০টি ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।