প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মনে করেন, বেকারত্বই টেকসই উন্নয়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা। তাঁর মতে, বিশ্বজুড়ে উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে হলে তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি।

প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে তাদের সম্পৃক্ত করার বিপুল সুযোগ রয়েছে, তবে এ সুযোগ যেন কেবলমাত্র মুনাফার দেয়ালের আড়ালে আটকে না থাকে।

গত বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের পাশাপাশি আয়োজিত ‘যুবদের জন্য বিশ্ব কর্মসূচি’র ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বৈঠকে উপস্থিত ‘বিশ্ব যুব কর্মসূচি’র চেয়ারপারসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, অন্তঃপ্রজন্মীয় সহযোগিতা নিয়ে এই আলোচনার বিষয়বস্তু এখন সময়ের সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক দাবি। তিনি উল্লেখ করেন, গত বছর বাংলাদেশের তরুণরা দেখিয়েছে কীভাবে সাহস ও ঐক্যের মাধ্যমে দীর্ঘ স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথ সুগম করা যায়।

তরুণদের ‘বিশ্ব পরিবর্তনের চালিকাশক্তি’ আখ্যা দিয়ে ইউনূস বলেন, বৈষম্য, জলবায়ু সংকট, সংঘাত, ডিজিটাল বিভাজন ও সুরক্ষাবাদী নীতি—এসবের নেতিবাচক প্রভাব প্রথমেই এসে পড়ে তাদের ওপর। এ অবস্থায় যুব বেকারত্ব সবচেয়ে উদ্বেগজনক। নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে এ হার প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় চারগুণ বেশি।

বাংলাদেশের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি জানান, সেখানে একটি জাতীয় যুব উদ্যোক্তা নীতি কার্যকর হয়েছে, যা অর্থায়ন, দক্ষতা উন্নয়ন ও বাজারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করছে। ফলে তরুণরা শুধু চাকরিপ্রার্থী নয়, বরং কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারীতে পরিণত হচ্ছে। সংস্কার কমিশন ও জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতার মাধ্যমেও যুবসমাজকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে ‘যুবদের জন্য বিশ্ব কর্মসূচি’, ‘জাতিসংঘের যুব নীতি ২০৩০’, ‘যুব, শান্তি ও নিরাপত্তা’ এজেন্ডা এবং ‘ভবিষ্যতের জন্য চুক্তি’র পক্ষে অবস্থান করছে।

তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, কোনো রাষ্ট্র এককভাবে তরুণদের ক্ষমতায়ন করতে পারবে না। বৈষম্য দূরীকরণ, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং প্রজন্মান্তরের নেতৃত্ব গড়ে তুলতে বৈশ্বিক সহযোগিতা অপরিহার্য। নাহলে হতাশা দ্রুত অস্থিরতায় রূপ নিতে পারে।

শেষে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমাদের ভবিষ্যৎ তরুণদের হাতে। কেবল তাদের অধিকার, নিরাপদ পরিসর ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, তারা সঠিক পথ বেছে নেবে—নিজেদের জন্য, পৃথিবীর জন্য এবং আমাদের সবার ভবিষ্যতের জন্য।”