ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য ডিসেম্বরের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। রোজার আগেই (ফেব্রুয়ারির মধ্যে) নির্বাচন হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

গতকাল বুধবার নির্বাচন সংক্রান্ত এক বৈঠকে এই নির্দেশনা দেন তিনি। এদিন সন্ধ্যায় এক ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, সংস্কারসহ সব প্রস্তুতি শেষ হলে রোজার আগে নির্বাচন হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

প্রেস সচিব বলেন, প্রায় ২ ঘণ্টার বৈঠকে নির্বাচন সংক্রান্ত আইনশৃঙ্খলা নিয়ে রিভিউ করা হয়েছে। অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রথম নির্দেশনা হচ্ছেÑনির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক যত প্রস্তুতি আছে, ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করতে বলেছেন। এই প্রস্তুতির মধ্যে অনেকগুলো বিষয় আছে। যেমন আইনশৃঙ্খলা-বাহিনীতে ১৭ হাজার নতুন সদস্য নিয়োগ করা হবে। এর মধ্যে আছে পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড। নির্বাচনকে সামনে রেখে এই নিয়োগ দেওয়া হবে। তাদের নিয়োগ এবং প্রশিক্ষণ যাতে এই সময়ের মধ্যে শেষ হয়, সে বিষয়ে উনি (প্রধান উপদেষ্টা) নির্দেশ দিয়েছেন।

শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী কয়েক মাস আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও তৎপর হবে। আর ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সব প্রস্তুতি সম্পন্নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা ১৮-৩২ বছর বয়সী ভোটারদের আলাদা তালিকা তৈরিরও নির্দেশ দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এই ভোটারদের জন্য থাকবে আলাদা বুথ। এছাড়া ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরার পাশাপাশি কঠোর মনিটরিংয়েরও ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, বিগত তিনটি নির্বাচনে একটা বিশাল অংশ ভোট দিতে পারেনি। তারা যেন এমনভাবে ভোট দিতে পারে যাতে তাদের মনে থাকে। নারীরা যাতে নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারে এজন্য নির্বাচনে নারী কর্মকর্তাদের নিয়োগ করার নির্দেশ দেন।

নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন নিয়েও কথা হয় বৈঠকে। কারণ সীমান্ত এলাকায় এক রকমের পরিবেশ উপকূলীয় অঞ্চলে আরেক রকমের অবস্থা। কতজন আনসার থাকবে, কতজন পুলিশ সদস্য থাকবে। প্রত্যেকটা কেন্দ্র সিসিটিভির আওতায় আনার ব্যাপারে কথা হয়েছে। সিসিটিভি যাতে ঠিক মতো কাজ করে সেবিষয়ে কথা হয়েছে। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট যাতে ঠিকমত কাজ করতে পারে সেজন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

প্রেস সচিব জানান, নির্বাচন সামনে রেখে ডিসেম্বরের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আট লাখ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আট লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল সদস্যকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে হবে। তিনি জানান, নির্বাচনের সময় ১৮-৩২ বছর বয়সী ভোটারদের আলাদা বুথ রাখা যায় কি না সে বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

আগে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী তিন দিন মোতায়েন থাকতো। এবার ৭দিন করা যায় কি-না তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এক থানার পুলিশ আরেক থানায় নিয়োজিত রাখার ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে।

প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচনের আগে ডিসি-এসপি-ওসি ও ইউএনওদের রিশাফল (ঢেলে সাজানো) করার কথা বলা হয়েছে। এই রিশাফলটা র‌্যান্ডম ওয়েতে করবে। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার ডিপিএস আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, ভোটারদেরকেও প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। যারা আগে ভোট দেননি তারা যাতে সুন্দরভাবে দিতে পারে। আগের তিনটি নির্বাচনে যারা পোলিং ও প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের এবার দায়িত্ব দেওয়া হবে না। জেলা উপজেলা এবং কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং সেল গঠনের বিষয়ে কথা আলোচনা হয়েছে। সেখানে কোন অনিয়ম দেখা গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এক্ষেত্রে যদি ক্রয়সংক্রান্ত বিষয় থাকে তাহলে করে ফেলা হবে। বিশেষ করে ৪৭ হাজার কেন্দ্রে পুলিশের বডিতে ব্যবহারের জন্য বডির ক্যামেরা কিনে ফেলতে হবে। প্রকিওরমেন্ট দ্রুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মিটিংয়ে ছিলেন। তিনি জানান, ২ হাজার বডিক্যাম তাদের কাছে আছে। তিনি বলেন, মিটিংয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে প্রধান উপদেষ্টা বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন।

শফিকুল আলম আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আগের নির্বাচনগুলো ছিল লোকদেখানো নির্বাচন। নির্বাচন ফেব্রুয়ারি অথবা এপ্রিলে হবে। নির্বাচন অর্থবহ করতে যে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দরকার সেটা প্রস্তুত করতে যা কিছু প্রয়োজন, তা এখন থেকেই প্রস্তুত করতে হবে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। তারা প্রথম দিকে আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলে আসছিল।