# রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালন করবে বাংলাদেশ

আজ ‘জুলাই শহীদ দিবস’। এ উপলক্ষে আজ বুধবার রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালন করবে বাংলাদেশ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গতকাল মঙ্গলবার এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানিয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এছাড়া মহান ‘জুলাই শহীদ’ দিবসে শহীদদের গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সকল শাখা সংগঠন ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ১৫ জুলাই এক বিবৃতি প্রদান করেছেন।

২০২৪ সালের ১৬ই জুলাই কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ নিহত হন। ১৬ জুলাইকে ‘জুলাই শহীদ দিবস’ ঘোষণা করে গত ২ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। দিবসটি পালনের জন্য এ সংক্রান্ত পরিপত্রের খ শ্রেণিভুক্ত করা হয়। তবে এদিন ছুটি থাকছে না।

রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দিবসটি উপলক্ষে ১৬ জুলাই রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ উপলক্ষে বাংলাদেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।

রাষ্ট্রীয় শোকের অংশ হিসেবে গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় বুধবার বাংলাদেশের সব মসজিদে বিশেষ দোয়া এবং অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।

‘জুলাই শহীদ দিবস’ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তিনি বলেছেন, জুলাই শহীদরা স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারমুক্ত নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থার। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এই সুযোগকে কাজে লাগাতে সবার ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। জুলাইয়ের চেতনাকে ধারণ করে নতুন বাংলাদেশের পথে দৃপ্ত পদভারে একযোগে সবাই এগিয়ে যাবো, আজকের দিনে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রথমবারের মতো দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে ‘জুলাই শহীদ দিবস’। এই দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের শৃঙ্খল থেকে জাতিকে মুক্ত করার আন্দোলনে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের। ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থা বিলোপের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের গুলীতে ও সন্ত্রাসীদের হামলায় এই দিনে চট্টগ্রাম, রংপুর ও ঢাকায় অন্তত ছয়জন শহীদ হন।

ক্ষণজন্মা অকুতোভয় এই বীরদের আত্মদান আন্দোলনে তীব্র গতির সঞ্চার করে। প্রতিবাদে দেশজুড়ে রাজপথে নেমে আসে লাখো শিক্ষার্থী-শ্রমিক-জনতা। আন্দোলনের তীব্রতার সঙ্গে বাড়তে থাকে শহীদদের সংখ্যা। বৈষম্য ও কোটাবিরোধী আন্দোলন অচিরেই রূপ নেয় সরকার পতনের আন্দোলনে। সর্বস্তরের মানুষের দুর্বার আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় স্বৈরাচার। হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে হয় মুক্তির নতুন সূর্যোদয়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের জুলাই শহীদরা চব্বিশের স্বৈরাচারবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে এক মহাকাব্যিক বীরত্বগাথা রচনা করে গেছেন। শহীদ ও আহত জুলাইযোদ্ধাদের অবদানকে সমুন্নত রাখতে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরেই তাদের ও তাদের পরিবারের কল্যাণে নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে এবং শহীদ পরিবার ও আহতদের কল্যাণে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদফতর’ এবং ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠন করা হয়েছে। জুলাই শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত ও গেজেট প্রকাশের কার্যক্রম চলমান আছে। প্রতিটি শহীদ পরিবারকে এককালীন ৩০ লাখ টাকা ও মাসিক ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। আহত জুলাইযোদ্ধাদের কল্যাণেও অনুরূপ নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আত্মদানকারী সব শহীদের আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করছি।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘নোটস্ অন জুলাই’ পোস্টকার্ড

‘নোটস্ অন জুলাই’ পোস্টকার্ডের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতিকথা সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। এ কার্যক্রমের আওতায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে ৭০০ জনের স্মৃতিকথা সংগ্রহ করা হয়েছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর-সংস্থা এবং জেলা তথ্য অফিসসমূহের মাধ্যমে আগামী ৫ই আগস্ট পর্যন্ত ‘নোটস্ অন জুলাই’ পোস্টকার্ডের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতিকথা সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এই পোস্টকার্ডে জুলাই গণঅভ্যুত্থান-সম্পর্কিত স্মৃতি ও মতামত প্রদান করতে পারবেন।

স্ট্রিট মেমোরি স্ট্যাম্প’ স্থাপন শুরু

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদরা যেসব স্থানে প্রাণ দিয়েছেন, সেখানে তাদের স্মরণে ‘স্ট্রিট মেমোরি স্ট্যাম্প’ স্থাপন শুরু হচ্ছে বুধবার থেকে। এ কার্যক্রম ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। গতকাল মঙ্গলবার সরকারি এক তথ্য বিবরণীতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়েছে, রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে শহীদ আবু সাঈদ স্মরণে জুলাইয়ের গান এবং ড্রোন শো আয়োজন করা হবে। জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে এসব আয়োজন করা হবে। ১৬ জুলাই স্মরণে মিউজিক্যাল ভিডিও শেয়ার করা হবে, যার থিম মিউজিক হবে ‘কথা ক’।

কর্মসূচি অনুযায়ী এ দিনে ‘একটি শহীদ পরিবারের সাক্ষ্য’ ডকুমেন্টারির পার্ট-৩ প্রচার এবং একজন জুলাই যোদ্ধার স্মৃতিচারণের ভিডিও শেয়ার করা হবে। সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হবে। সকল মোবাইল গ্রাহকের কাছে ভিডিওটির ইউআরএল প্রেরণ করা হবে। এদিনে শিল্পকলার মঞ্চে জুলাইয়ের গল্প বলা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এছাড়া, চট্টগ্রামে জুলাইয়ের গান এবং ড্রোন শো আয়োজন করা হবে।