ফেব্রুয়ারিতেই পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, নির্বাচনের জন্য কোনভাবেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘোষিত সময়সীমা অতিক্রম করা যাবে না। সরকার আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যেই ঘোষণা দিয়েছে, সেই সময়সীমার মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে। তবে সরকার নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করলেও কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে সেটি স্পষ্ট করেনি। অবশ্যই সরকারের ঘোষিত সময়সীমার আগেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে সেই আলোকে নির্বাচন হতে হবে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিয়ে কোনো টালবাহানা জাতি মেনে নিবে না।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঘোষিত গণসংযোগ পক্ষের দাওয়াতী অভিযান পূর্বক মতিঝিলে অনুষ্ঠিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি আরো বলেন, সংস্কারের নামে সময় ক্ষেপন জনগণ মেনে নিবে না। অন্তবর্তীকালীন সরকার নিজের পায়ে কুঁড়াল মারছে মন্তব্য করে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না দিলে এই সরকার একদিন বিচারের মুখোমুখি হতে পারে। সরকারের নিজের বৈধতার প্রয়োজনে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়া জরুরী। বিপ্লবী সরকার যখন বিপ্লবের চেতনা এড়িয়ে গিয়ে কাজ করে তখন জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিয়ে গড়িমসির ফলে সরকারের নির্দিষ্ট কোনো দলের প্রতি দুর্বলতা প্রকাশ পায়। অনতিবিলম্বের রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে অথবা গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে সংস্কার বাস্তবায়ন ও গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজন করতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সংবিধান সংশোধন ব্যতীত নির্বাচন হলে সেটি হবে প্রহসনের নির্বাচন উল্লেখ করে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, যেই সংবিধান হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট হতে সাহায্য করেছে, সেই সংবিধান বহাল রেখে নির্বাচন হলে যারাই ক্ষমতায় বসবে তারাও হাসিনার মতোই ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠবে। যারা হাসিনার তৈরি সংবিধান সংশোধন চায় না তারা ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চায়। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন এবং গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করতে যারা সরকারকে সহযোগিতা না করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতেছে তাদের পরিচয় উম্মোচন করতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে কালো টাকার ছড়াছড়ি করা যাবে না, কেন্দ্র দখল করা যাবে না, ভোট চুরি করা যাবে না, অস্ত্রের মহড়া দেওয়া যাবে না। এজন্যই একটি দল পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় না। তারা চাচ্ছে পুরোনো ব্যবস্থায় নির্বাচন হলে কোনমতে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে কেন্দ্র দখলের মাধ্যমে ভোট চুরি করে যদি এক ভোটও বেশি আদায় করা যায় তাহলে বিজয় নিশ্চিত হয়ে যাবে। জাতি যাদের নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদ মুক্ত নতুন বাংলাদেশ পেয়েছে সেই তরুণ ছাত্র সমাজ দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ভোট কেন্দ্র পাহারা দিবে। পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিটি ভোটের হিস্যা বুঝে নিবে। এক ভোটের ব্যবধানে লাখ-লাখ ভোট নষ্ট হয়ে যাওয়ার পদ্ধতি বাতিল করতে হবেই, হবে। দুর্নীতিগ্রস্ত নেতৃত্ব মুখে নীতিবাক্য বললেও দেশ তাদের হাতে নিরাপদ নয়। এরা সুযোগ সন্ধানী, সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে। সুযোগ পেলেই বিষধর সাপের মতো এরা ফুঁসে উঠবে। দেশকে আবারও দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান করবে। কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না, দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান নেতৃত্ব দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠন করতে পারবে না। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজমুক্ত একটি সুখি-সমৃদ্ধ মানবিক কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে এগিয়ে আসতে তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
পথসভা শেষে নূরুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে মতিঝিল এলাকায় গণসংযোগ পক্ষের দাওয়াতী অভিযান পরিচালিত হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর, ঢাকা-৮ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মো. শামছুর রহমান, মতিঝিল দক্ষিণ থানা আমীর মোতাছিম বিল্লাহ, মতিঝিল উত্তর থানা আমীর মো. শামছুল বারিসহ মহানগরীর বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ।